পুবের কলম প্রতিবেদক: উত্তর দিনাজপুর জেলার একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন মুহাম্মদ গোলাম রব্বানি। পড়াশোনা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে দিনাজপুরে রাজনীতির সচেতন পরিবার হিসেবে পরিচিত। এবারের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়লাভের পর মন্ত্রিসভা গঠনের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোলাম রব্বানি সাহেবকে সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা বিষয়ক মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব দিয়েছেন। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে গোলাম রব্বানি এই দায়িত্ব সামলাবেন।
গোলাম রব্বানি সাহেব ‘পুবের কলম’ প্রতিনিধিকে জানান– দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই তিনি কাজে নেমে পড়েছেন। আধিকারিক থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। দিদি তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা সুচারুভাবে পালন করতে তিনি বদ্ধপরিকর।
পুবের কলম পত্রিকা ৫ জুলাই সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী গোলাম রব্বানি সাহেব-এর সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় কিছু বিশিষ্ট মুসলিম ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মতামত বিনিময় এক সভার আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন ও পরিকল্পনায় ছিলেন ‘পুবের কলম’-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান ও ওয়ায়েজুল হক। একইসঙ্গে ছিল মন্ত্রীকে সংবর্ধনারও অনুষ্ঠান। এই সভায় হাজির হয়েছিলেন বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সভাপতি ওয়ায়েজুল হক– রাজ্য ইউনিসেফের প্রধান মুহাম্মদ মহিউদ্দিন– ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা সাহিম সিদ্দিকী– সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান– মামূন ন্যাশনাল স্কুলের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুহাম্মদ ইয়াসীন– প্রতীচী ট্রাস্টের সঙ্গে সংযুক্ত গবেষক জনাব সাবির আহমেদ– স্ন্যাপের কর্ণধার এম আমিরুল আলম– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ও অধ্যাপক মইদুল ইসলাম– উদার আকাশ সম্পাদক ফারুক আহমেদ– নাবাবিয়া মিশনের সম্পাদক সাহিদ আকবর– হিদায়া ফাউন্ডেশনের কর্ণধার জনাব শেখ হায়দার আলি– সংগীত শিল্পী তথা কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি নূপুর কাজী– পুবের কলম-এর ডিরেক্টর নুসরত হাসান– সাংবাদিক সফিকুল ইসলাম (দুলাল)), পীরজাদা হাসানুজ্জামান প্রমুখ।
আলোচনার শুরুতেই বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠন– স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা এবং বুদ্ধিজীবীরা রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে বাল্যবিবাহ রোধ– রাজধানী কলকাতা সহ বিভিন্ন শহরে আবাসন সমস্যা– সংখ্যালঘুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য– গ্রামোন্নয়ন– শহরে ছাত্র হস্টেল নির্মাণ– মাদ্রাসা উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য রাখেন উপস্থিত সুধীবৃন্দ।
এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শ মনোযোগ দিয়ে শুনে মন্ত্রী বলেন– এই সমস্যাগুলি দূর করে সংখ্যালঘুদেরও সব নাগরিকের সঙ্গে সমান সারিতে দাঁড় করানোর জন্য তিনি সকলের সঙ্গে মিলে কাজ করবেন।
মন্ত্রী গোলাম রব্বানি জোরের সঙ্গে বলেন– মুসলিমদের সমস্যা দূরীকরণের ২টি প্রধান উপায় হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রসার এবং প্রতিযোগিতামূলক চাকরি ও ব্যবসায় অংশ গ্রহণ করা। মন্ত্রী বলেন– বর্তমানে যেভাবে মিশন স্কুলগুলির মাধ্যমে ডাক্তার– ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হচ্ছে ঠিক একইভাবে ডব্লিউবিসিএস– আইএএস– আইপিএস প্রভৃতি পরীক্ষাতেও মুসলিম ছেলে-মেয়েদের ব্যাপকভাবে অংশ নিতে হবে। মন্ত্রী তুলনামূলকভাবে রাজ্যে নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ দিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী কেরলের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তুলনা টেনে বলেন– কেরলে সংখ্যালঘুদের জন্য অনেক ভালো ভালো স্কুল এবং মেডিকেল কলেজ আছে। কিন্তু আমাদের রাজ্যে তা নেই। এর জন্য তিনি তৎকালীন বাম সরকারকেই দায়ী করেছেন। তাঁর অভিযোগ– বাম আমলে কেন্দ্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন রাজ্য সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য কিছু করেনি। সাচার কমিটির রিপোর্টে তার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্তমান সরকার প্রথম থেকেই সংখ্যালঘুদের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে।
উল্লেখ্য– এ দিনের আলোচনাসভায় সংগঠনগুলির তরফে রাজ্যের বিভিন্ন সংস্থা ও সংখ্যালঘু কমিটিতে জেলা থেকে বাঙালি মুসলিম প্রতিনিধি বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। মন্ত্রী বলেন– সব জেলা থেকেই সমান প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আমরা সচেতন রয়েছি।
সমবেত প্রতিনিধিবৃন্দ মন্ত্রীকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। মন্ত্রী গোলাম রব্বানি সাহেব বলেন– আমরা পশ্চিমবাংলার সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংখ্যালঘুদেরও বিকাশ ঘটাতে বদ্ধপরিকর।