পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: কথায় আছে ‘উল্টা বুঝিলি রাম’। কথাটা প্রযোজ্য মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সম্পর্কে। শনিবার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক সভায় তিনি যা বলেছিলেন তার মোদ্দা কথা হল, সংখ্যাটা বড় নয়, জ্ঞান-গরিমা ও সংগঠনে যদি কোনও জাতি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে, তবে তারাই সংখ্যাগুরুদের উপরও ভারি হয়। কাজেই মুসলিমদের ‘আমরা সংখ্যালঘু’ বলে হা-হুতাশ করার কোনও অর্থ হয় না। তারা যদি শিক্ষা, সামাজিক কাজ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে, তবে সংখ্যালঘু হলেও তারা কিন্তু সংখ্যাগুরুদের ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ফিরহাদ কিন্তু স্বপ্নেও ভাবেননি তাঁর কথার কদর্থ হবে। তাঁর বক্তব্যের মানে করা হবে একদিন সংখ্যালঘুরা সংখ্যায় সংখ্যাগুরুদেরও ছাড়িয়ে যাবে। আর এ নিয়ে চলছে ট্যুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে অপপ্রচার। যার সরলার্থ করলে দাঁড়াবে, ফিরহাদ বলেছেন, একদিন মুসলিমরা সংখ্যায় হি¨ুদেরও ছাড়িয়ে যাবে!
আর এখন অমিত মালব্য থেকে শুরু করে ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবিরও এই সুযোগ ছাড়ছেন না। হুমায়ুনবাবু তো ফিরহাদ হাকিমকে ‘হুজুর’ অর্থাৎ মাওলানা বলে সম্বোধন করে সংবাদ মাধ্যমের ফুটেজ খেয়েছেন।
পশ্চিম বাংলায় ফিরহাদ হাকিম এমন একজন রাজনীতিবিদ যিনি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার কাছে প্রিয়। তিনি হুজুরদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে হাজির হন বিভিন্ন পুজা থেকে শুরু করে খুঁটি পুজাতেও। কিন্তু হলে কি হবে, তাঁকে আক্রমণ করার কোনও সুযোগ ছাড়তে রাজি নন অনেকেই। তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়ের ধারাবাহিক ইতিহাসকে উপেক্ষা করে ‘চালাও হামলা’।
মুর্শিদাবাদের আর এক বিধায়ক হুমায়ুন কবির অবশ্য একটা ভালো কথা বলেছেন। তাঁর পরামর্শ, ‘ফিরহাদ সাহেব কুরআন পড়ুন’। হ্যাঁ, প্রত্যেকেরই ধর্মগ্রন্থ পড়া উচিত। কুরআন, বেদ, উপনিষদ, বাইবেল, ত্রিপিটক পড়লে মানুষের জীবন ও চিন্তাধারা অবশ্যই উন্নত হবে।
কিন্তু এখানে অবশ্য সেই অর্থে হুমায়ুন বলেননি। বলেছেন ফিরহাদকে কটাক্ষ করার জন্য। ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন বলেছেন, ‘কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটি চাই’। হায় রাম ফিরহাদ তো সেই কাজই করছেন। তিনি যাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন, তাদের লক্ষ্য তো কোয়ালিটি।
তাই বলছিলাম, ফিরহাদ বললেন ‘রাম’ আর যাদের বোঝার তারা উল্টো করে বুঝলেন। হয়তো সে জন্যই বীর আলেকজেন্ডার তাঁর সহযোগী সেলুকাসকে বলেছিলেন, ‘সত্য সেলুকাস! কি বিচিত্র এই দেশ’।