রমিত বন্দ্যোপাধ্যায়: সম্প্রতি মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কের সেমিনার হলে ২১ জন রক্তের ব্যাধিতে আক্রান্ত ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কলকাতা হেমাটোলজি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (খেরি) এক অঙ্কন কর্মশালার আয়োজন করে। অংশগ্রহণকারী সকলেই থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, লিউকোমিয়া, ব্লাড ক্যানসারের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত।
এই সকল ছেলেমেয়েদের এই দিনের অঙ্কন প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেন উত্তম কর্মকার নামক এক শিপ্লী, যিনি নিজেও হিমোফিলিয়ার শিকার। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলেমেয়েরা এই বিশেষ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে। এদের সকলেরই চিকিৎসা চলে সরকারি হাসপাতালে।
নিমতার বাসিন্দা ক্লাস সিক্সের পড়ুয়া আরবাজ আলির ইচ্ছা পাহাড় ভ্রমণের। ভ্রমণের সেই গভীর চাহিদা প্রকাশ করে তার ছবির মাধ্যমে। তার আঁকা ছবিতে ধরা পড়ল এক অজানা এবং না দেখা পাহাড়ের চিত্র। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র স্বর্ণাভ দত্তের সবথেকে প্রিয় খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে পরে মালদার আম। তাই তার ক্যানভাসে ধরা পড়ল শ্রীকৃষ্ণের আম চুরির চিত্র।
এদের অনেকেরই রক্তের প্রয়োজনীয়তা হয় প্রায় প্রতি মাসে। তাদের ছোট্ট বয়স থেকে বেড়ে ওঠা সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে পরিচিত হতে হতে। তাই ৩৭ বছরের সৌম্য পাল তাঁর ছবিতে প্রকাশ করেছে পরিবেশ দূষণ যেন কোনওভাবেই তার ব্লাড ব্যাঙ্ককে ছুঁতে না পারে। আবার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী তাহেব খাতুন রক্তের ব্যাধি নিয়ে সচেতনতা ফুটিয়ে তুলল তার অঙ্কনের মাধ্যমে।
মনোবিদ ডা. মৈত্রেয়ী চৌধুরি জানান, ‘এখানে উপস্থিত প্রতিটা রোগী হল যোদ্ধা। যেকোনও রোগকে সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি একটা পজিটিভ মানসিকতার মাধ্যমে হারানো সম্ভব। তার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিকাশ এবং প্রকাশ একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।’
Read more: বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের উপর নজর রাখছে গোয়েন্দাবাহিনী
প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা ঈশিতা মজুমদার জানান, ‘আঁকার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করাটা খুবই প্রয়োজনীয় এবং এই ধরনের প্রয়াসের মাধ্যমে এই ছেলেমেয়েদের একটা স্বতঃস্ফূর্ততা এবং বিশেষ আনন্দ লক্ষ করলাম।’
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের ইনচার্জ ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিসেস এবং সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর ডা. স্বপন সোরেন জানান, ‘এই ধরনের উদ্যোগ খুবই প্রয়োজনীয় এবং আমরা চিকিৎসার পাশাপাশি এই ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের উদ্যোগ এবং রোগীদের সাংস্কৃতিক বিকাশ আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে সেই দিকেও আমরা নজর রাখব।
Read more: সঠিক সময় ইসরাইল এই হামলার জবাব পাবে: ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী
অধ্যাপক ডা. উৎপল চৌধুরির উদ্যোগ আমাদের এই ধরনের পথ দেখিয়ে চলেছেন আমরা তাঁর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।’
শৈলী দত্ত নামক এক অভিভাবক জানান, ‘২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আমার ছেলের অস্থি-মজ্জা প্রতিস্থাপন হয়। ওকে প্রথম কোনও আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতে দেখলাম।’
1 Comment
Pingback: দানার প্রভাব কাটিয়ে ছন্দে ফিরছে টাকি, ভিড় পর্যটকদের - PuberKalom.com