বিশেষ প্রতিবেদন: হার্ট ফেলিওর, কার্ডিও-রেনাল সিনড্রোম বা সিআরএস এই ভারী ভারী শব্দগুলির সঙ্গে ভয়ের সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। এই রোগগুলি শরীরে দানা বাঁধলেই কি মৃত্যু! এই রোগের হাত ধরে কি আসতে পারে অন্যান্য শারীরিক জটিলতাস, বা এই রোগের জন্য যে ওষুধ খেতে হয় তা শরীরে কি কোনও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। অনেকের ধারণা আছে, হার্ট ফেলিওরের ওষুধের প্রভাব সরাসরি পড়ে কিডনিতে।
তবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন হার্ট ফেলিওর কি? হার্ট ফেলিওরের কারণে ফুসফুসে তরল জমা হতে পারে। এর কারণে ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং বুকে ঘরঘর আওয়াজ অনুভব করতে পারে। হৃৎপিণ্ড যখন সঠিকভাবে রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তখন শরীরের নিম্নাংশ থেকে ব্যবহৃত রক্ত ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে পা, গোড়ালি, পেট ও উরুতে তরল জমে ফুলে যায়। তবে রোগ কিডনিকে প্রভাবিত করে। বাড়িয়ে দিতে পারে রেনাল ফেলিওরের সম্ভাবনা। তবে এটিকে যৌথভাবে বলা হয় কার্ডিও-রেনাল সিনড্রোম বা সিআরএস। হার্টের অসুখের জন্য অনেক ওষুধ খেতে হয়। আর সেই ওষুধ অনেক সময় কিডনির উপরে প্রভাব ফেলে। হার্ট ফেলিওর হলে তাই অনেক সময়ই কিডনি ফেলিওরের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়। সম্ভাবনা থাকা মানেই হবে, এমনটা নয়। তবে এই বিষয় ধোঁয়াশা অনেকটাই দূর করেছেন এক বঙ্গতনয়া। হার্টের সমস্যা থাকলেই কি কার্ডিও-রেনাল সিনড্রোম দেখা দিতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন গবেষক এমিলি চট্টোপাধ্যায়।
হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষক এমিলি চট্টোপাধ্যায়ের জানিয়েছেন, তাঁদের নয়া আবিষ্কারের নাম বায়োমার্কার। এই গবেষণার ধরণ আলাদা। এতদিন চিকিৎসকরা জানতেন না যে কাদের হার্টের অসুখ হলেই রেনাল সমস্যা হবে। তবে অত্যাধুনিক মডেলের সাহায্যে তাঁরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নয়া দিশা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। ধাপে ধাপে এই আবিষ্কারের জন্য এগিয়ে যেতে হয়েছে। নয়া আবিষ্কারের ক্ষেত্রে যেমন পরীক্ষাগারে ইঁদুর, গিনিপিকের উপর পরীক্ষা করা হয়, সেই রকমই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে যেতে হত। এতে প্রচুর সময় লাগতো। সেই সঙ্গে বিপুল খরচের ধাক্কা। এই কার্ডিও-রেনাল সিনড্রোমের জন্য তেমন কোনও ঠিকঠাক অ্যানিমাল মডেল নেই। আধুনিক এই মডেলের সাহায্য নিতে হয়েছে।
গবেষক এমিলির কথায়, এই মডেলের নাম অরগ্যান অন কিট। বিগত কয়েক বছর ধরে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে গবেষণার ক্ষেত্রে এটি নতুন সেটি বলা যায়। যে কোনও অঙ্গের একটা মিনিয়েচার বানিয়ে সেটার উপর পরীক্ষা করা হয়।
এমিলি জানিয়েছেন, ‘এই গবেষণায় আমরা ২ সেন্টিমিটারের একটি কিডনি বানিয়ে সেখানে পরীক্ষা করেছি। আর এখানেই দেখা গিয়েছে এক্সট্রা সেলুলার ভেসিকেল বেরোচ্ছে। কিডনির ক্ষতি করছে।
এক্সট্রা সেলুলার ভেসিকেল হল, দেহের বিভিন্ন কোষ থেকে মাইক্রো বা ন্যানো সাইজের পার্টিকেল বেরিয়ে আসে, সেটাই গিয়ে কিডনিকে এফেক্ট করে। হার্ট ফেলিওর রোগীদের ক্ষেত্রেই মূলত এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। বায়োমার্কার,-এর সাহায্যে ভবিষ্যতে বোঝা যাবে কাদের কিডনির ক্ষতি হতে পারে, কাদের নয়।’ যে রোগীর রক্তে এই এক্সট্রা সেলুলার ভেসিকেল থাকবে তার কিডনি ফেলিওর হওয়ার চান্স বেশি। এটা একটি কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা যাবে।
এমিলি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, এই গবেষণার পর থেকে অ্যানিম্যাল মডেল আর ব্যবহার করতে হবে না যে সেটা স্পষ্ট। ফলে সময় আর খরচ দুই বাঁচবে।
এমিলি জানান, এই গবেষণার মূল দায়িত্বভার ছিল নিজের কাঁধে। তবে সহযোগী হিসেবে হেলসিঙ্কি এবং ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গবেষকরাও ছিলেন। তাঁর এই গবেষণাপত্র জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন ইনসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। (478)