নয়াদিল্লি, ১৮ জানুয়ারি: তাঁদের ‘অপরাধ’ তাঁরা খ্রিস্টান। আর সেজন্যই মৃত্যুর পর বাবার লাশ দাফন করার অনুমতি পেতে আদালতের দরজায় দরজায় ঘুরতে হচ্ছে অসহায় সন্তানকে। গ্রামের মোড়ল তাঁকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের গ্রামে খ্রিস্টানদের জন্য কোনও কবরস্থান নেই। তাই দাফন হবে না। ফলে গত ৭ জানুয়ারি থেকে হাসপাতালের মর্গে পড়ে রয়েছে তাঁর পিতার লাশ। সবটা শোনার পর বিস্মিত, হতবাক সুপ্রিম কোর্ট। এই নিয়ে ছত্তিশগড় সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে তারা। ছত্তিশগড় সরকারের থেকে এই বিষয়ে জবাবদিহি তলব করেছে শীর্ষ আদালত। সবথেকে বড় কথা, এই মামলায় হাইকোর্টের রায়ও অবাক করার মতো।
রমেশ বাঘেল নামে এক খ্রিস্টান যুবক সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি করেন। ছত্তিশগড় হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ করে তিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, দাফনে অনুমতি দেওয়া যাবে না। গ্রাম প্রধানের একটি সার্টিফিকেটের উপর ভিত্তি করে এই রায় শোনায় হাইকোর্ট। শংসাপত্রে বলা হয়েছিল, গ্রামে খ্রিস্টানদের জন্য আলাদা কোনও গোরস্থান নেই। আর গ্রাম প্রধানের দেওয়া এই শংসাপত্রের ভিত্তিতে হাইকোর্টও জানিয়ে দেয়, বিষয়টি স্পর্শকাতর। দাফনের অনুমতি দেওয়া হলে তা এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে। তাই দাফনের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট আবেদন করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগারত্না ও বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যায় এটা শুনে যে, জগদলপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে গত ৭ জানুয়ারি থেকে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে, দাফন করতে দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি পুলিশও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সবটা শোনার পর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের প্রতিক্রিয়া,‘ছাড়ুন তো পঞ্চায়েত প্রধানের কথা, এমনকি হাইকোর্ট পর্যন্ত একটি অদ্ভুত রায়দান করেছে। রাজ্য সরকার কী করছে?’ ছত্তিশগড় সরকারকে নোটিশ দিয়ে এই মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টে যে পিটিশন দাখিল করেছেন বাঘেল সেখানে বলা হয়েছে, ছিন্দাওয়াদা গ্রামে মৃতদেহ দাফন করার জন্য গ্রামপঞ্চায়েতের তরফে মৌখিকভাবে একটি কবরস্থান বরাদ্দ রয়েছে। ওই কবরস্থানে খ্রিস্টানদের জন্য পৃথক এলাকাও নির্ধারণ করা রয়েছে। খ্রিস্টানদের জন্য নির্দিষ্ট করা ওই স্থানে তাঁর মাসি ও দাদাকেও দাফন করা হয়েছিল। তখন কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু, তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর বাবার শেষকৃত্য করতে চেয়েছিলেন এবং গ্রামের খ্রিস্টানদের জন্য নির্ধারিত জায়গায় দাফন করতে চেয়েছিলেন। আর এটা শোনার পরই কয়েকজন গ্রামবাসী প্রথমে তীব্র আপত্তি জানায়। পরে আরও অনেকে তাতে যোগ দেয়। তারা হুমকি দেয়, এই জমিতে কোনও খ্রিস্টানকে দাফন করা হলে ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে। তাই তিনি যেন তাঁর বাবাকে এখানে দাফন করার চেষ্টা না করেন। এমনকি জায়গাটি যদি মৃতের পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও হয়ে থাকে তাহলেও তারা সেখানে দাফন করতে দেবে না। কারণ, তারা চায় না তাদের গ্রামে কোনও খ্রিস্টানকে দাফন করা হোক। বাধ্য হয়েই এরপর তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু, সেখানেও হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাঁকে। প্রায় ৩০-৩৫ জন পুলিশের একটি টিম গ্রামে পৌঁছয়। কিন্তু, পুলিশও লাশ গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁদের পরিবারের উপর চাপ দিতে থাকে। এরপরই পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করে তিনি পিটিশনে উল্লেখ করেছেন, পুলিশও তাঁকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছে যে, যদি মৃতদেহটিতাঁদের গ্রামে খ্রিস্টান রীতি অনুসারে দাফন করা হয় তবে তারা তাঁদের (মৃতের পরিবার) বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে। তারপর থেকে বাবাকে দাফনের অনুমতি নিতে আদালতের দরজায় দরজায় ঘুরছেন তিনি। ২০ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে শীর্ষ আদালত।