পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: অগ্নিগর্ভ মণিপুরের পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও ৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) পাঠাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানকার ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার নিজ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শাহ। মন্ত্রক সূত্রের খবর, সেখানেই এই অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতি কোম্পানির সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০০। সেই মোতাবেক ওই রাজ্যে আরও পাঁচ হাজার জওয়ান পাঠাচ্ছে শাহের মন্ত্রক।
এমনিতেই ওখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ এবং সেনার সঙ্গে মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ২১৮ কোম্পানি বা ২১ হাজার ৮০০ সেনা জওয়ান আগে থেকে মজুদ রয়েছে। তাতেও আগুন জ্বলছে মণিপুরে। এই মাসেই অতিরিক্ত ২০০০ জওয়ান পাঠিয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ইম্ফলে এসেছেন সিআরপিএফের ডিরেক্টর জেনারেল আনিশ দয়াল।
নিরাপত্তা বাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে যে, প্রয়োজন হলে নিরাপত্তা কর্মীদের সংখ্যা আরও বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কারফিউয়ের সময় শিথিল করা হল না। ইন্টারনেট বন্ধ থাকছে। আজ ঘোষণা হয়েছে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে দু’দিনের জন্য। এদিকে ক্ষুব্ধ বিজেপির নেতারা দল ছাড়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।
মণিপুরের জেলায় জেলায় কারফিউ জারি করে, একাধিক থানা এলাকায় আফস্পা জারি করেও মণিপুরকে শান্ত করা যাচ্ছে না। দেড় বছর ধরে অশান্তির আগুনে জ্বলছে মণিপুর। নানা ব্যস্ততার মাঝে প্রধানমন্ত্রী সেখানে যাওয়ার সময় করে উঠতে পারেননি। বিরোধীরা তা নিয়ে বহুবার কটাক্ষ করলেও প্রধানমন্ত্রী তা প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি।
সোমবার জিরিবাম জেলায় অশান্তির খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছয় নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের গুলির লড়াই হয়। এই ঘটনায় এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। মৃত ব্যক্তির নাম খুন্দ্রাকপাম আথৌবা (২০)। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান নিরাপত্তারক্ষীদের তরফেই প্রথম গুলি চলে। আরও একটি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। মর্গে পাঠানো হয়েছে তার পরিচয় জানানো হয়নি।
এ দিকে দীর্ঘ টালবাহানার পরে অবশেষে মণিপুরের উত্তপ্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এনআইএ-কে পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। রবিবার মহারাষ্ট্রে নির্বাচনী জনসভা বাতিল করে দিল্লি ফিরেই মণিপুর নিয়ে বৈঠক সারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জানা গেছে, সোমবার দুপুরে দফায় দফায় বৈঠকের পরেই মণিপুরের তিনটি মামলার তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে তুলে দিয়েছে শাহের মন্ত্রক। এ দিনই সন্ধ্যায় ইম্ফলে বিজেপি এবং শরিক দলগুলির বিধায়কদের জরুরি বৈঠকে ডাকেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। রাজ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ এই দাবি করে রবিবার সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে কনরাড সাংমার দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। তাই সরকার বাঁচাতে তড়িঘড়ি এই বৈঠক বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের।
কারফিউ ভেঙে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন। এ দিনও আরও দুই মন্ত্রীর বাড়ি, বিজেপি ও কংগ্রেসের কয়েকজন বিধায়কের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে উন্মত্ত জনতা। মন্ত্রী থনজাম বিশ্বজিৎ সিং ও গোবিন্দ কান্তৌজামের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। ইম্ফলের প্রাণকেন্দ্রে থাকা আরএসএস’র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিও জ্বালিয়ে দিয়েছে জনতা। এই ঘটনার পর সরাসরি কেন্দ্রের সমালোচনা করল আরএসএস। ১৯ মাস পরেও জাতি সংঘর্ষের কোনও সুরাহা না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করুক, এমন দাবি জানিয়েছে বিজেপির আদর্শগত মেন্টর আরএসএস।
রাজ্যে ডবল ইঞ্জিন সরকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থতার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগও দাবি করেছে কংগ্রেস। এ দিন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমে মণিপুরে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করতে হবে। তারপরে ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সংসদের অধিবেশনের আগে জাতীয় স্তরে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে হবে।’ অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে অমিত শাহ এবং মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকে এমনও দাবি তুলেছেন রমেশ। রবিবার কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে বলেছিলেন, মণিপুর এইভাবেই জ্বলুক, চাইছে কেন্দ্র সরকার। সে-কারণে তারা পরিস্থিতি ঠিক না করে তা জিইয়ে রাখছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, অমিত শাহ বিরেন সিংকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন মণিপুরের নাগরিকদের দিচ্ছেন না।