আবদুল ওদুদ
কলকাতার ঘিঞ্জি এলাকা হিসেবে বরাবরই চিহ্নিত কলুটোলা স্ট্রিট। সরু রাস্তা– বহুদিনের জরাজীর্ণ ভবন। সারিসারি বহু প্রাচীন দালানবাড়ি। এরই মধ্যে যদি কোনও বিপদ হয়– তাহলে তো চরম অবস্থা। আর এই দালান বড়িগুলির মধ্যে দোকানও রয়েছে। আবার কিছু ভারাটেও রয়েছে। আর এই চরম অবস্থার সাক্ষী রইল কলুটোলার চার তলা ভবনটি। দীর্ঘদিনের অযন্তের ছাপ থাকা ভবনে সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিন আগুন লাগে। ব্যস্ত দিনে এই চারতলা ভবনের আগুন নেভাতে রাজ্যের দমকল বিভাগের প্রায় ৪০টি ইঞ্জিন হিমশিম খাচ্ছে। তাঁরা নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। কিন্তু এতটাই ঘিঞ্জি যে– বাইরে থেকে জল আনাও সম্ভব নয়। কুণ্ডলী পাকানো কালো ধোঁয়া গোটা এলাকা ছেয়ে ফেলেছে।
কালো ধোঁয়া থেকে বাদ যায়নি ১১ কলুটোলা স্ট্রিটের ঠিক উলটো দিকের কলুটোলা মসজিদ। আগুনে পুড়ে যাওয়া দাহ্যপদার্থগুলি টপটপ করে নিচে পড়ছে। পুড়ছে প্লাস্টিকের আসবাবপত্র। মানুষ চারিদিকে আতঙ্কিত। অনেকেই নিজের মালপত্র রক্ষা করতে মরণপণভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই দোকানের মাল পুড়ে যাওয়ায় আহজারি করছেন। বিপদ যে চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে– এটা আঁচ করতে পেরেই কলুটোলা মসজিদের দরজা খুলে দেন এক মুসল্লি মুহাম্মদ সেলিম। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন– এখানে পানির সমস্যা সব থেকে বড়। তাই দমকল কর্মীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। দেরি না করে মসজিদের দরজা খুলে দেন। মসজিদের ট্যাঙ্ক থেকে সঙ্গে সঙ্গে চালিয়ে দেন পানি। নামাযিদের অজুর পানিতে আগুন নেভানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন দমকলকর্মীরা। মোটা মোটা হোসপাইপ ঢুকে পড়ে মসজিদের ভিতর। আর মসজিদের ভিতর থেকেই আগুন নেভানোর কাজে নেমে পরলেন দমকল বাহিনী। মসজিদের জানালার ভিতর থেকে হোসপাইপ দিয়ে দমকলকর্মীরা আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মুহাম্মদ সেলিম জানান– প্রচণ্ড ঘিঞ্জি হওয়ায় দমকলকর্মীরা অসুবিধার মধ্যে আগুন নেভাতে সমস্যায় পড়েûছিলেন। তাই দেরি না করে মসজিদের দরজা খুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি মুসল্লিদের জন্য অজু করার জন্য ট্যাঙ্কিতে যে পানি রয়েছে– সেই পানির কলও খুলে দেওয়া হয়। দমকল এবং মসজিদের পর্যপ্ত পানিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান দমকল কর্মীরা। মুহাম্মদ সেলিম জানান– ইসলাম সব সময় মানুষের পাশে থাকার বার্তা দেয়। অন্যের বিপদে সাহায্য করতে শিখিয়েছে। তাই দেরি না করে মসজিদের দরজা খুলে দেওয়া হয়। এই কাজ করার জন্য মসজিদ কমিটির প্রশাংসায় দমকল বাহিনী থেকে মন্ত্রী এবং সাধারণ মানুষ।