আবদুল ওদুদ: মুর্শিদাবাদবাসীর সামাজিক এবং শিক্ষাগত উন্নয়নের জন্য ১৪ বছর আগে তৈরি হয়েছিল মুর্শিদাবাদের আহীরণে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা। ১৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুর্শিদাবাদ শাখার তেমন কোনও সার্বিক উন্নয়নই হয়নি।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুর্শিদাবাদ শাখার উন্নয়ন নিয়ে উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে অবস্থিত আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন ক্যাম্পাসে উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদান করেন রাজ্যের পাঁচ সংসদ। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ মিতালি বাগ, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ আবু তাহের খান, বীরভূমের সাংসদ অসিত মাল এবং রাজ্যসভার সংসদ সামিরুল ইসলাম।
স্মারকলিপি প্রদানের পর সাংসদ খলিলুর রহমান জানান, যে উদ্দেশ্যে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তার বিন্দুমাত্র কাজ হয়নি। মুর্শিদাবাদে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা তৈরি হলে শিক্ষা সংßৃñতি এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এই জেলা এগিয়ে যাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১৪ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাসের কোনও উন্নয়নই করেনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কার্যালয়। শুরু থেকেই বঞ্চিত রাখা হয়েছে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাসটিকে। ভাবা হয়েছিল, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব আনবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশেষ করে মুর্শিদাবাদের যেসব বাসিন্দা শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিকাশে সুযোগ পায়নি, তাদের শিক্ষাগত এবং সামাজিকভাবে বিকাশ ঘটবে। খলিলুর রহমান চিঠিতে লিখেছেন, এই জেলার বেশিরভাগ মানুষ শিক্ষা এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে। এখানকার বেশিরভাগই মানুষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ নির্মাণ শ্রমিক,বিড়ি শ্রমিক এবং কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। সাংসদ হিসাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করে দেখা গিয়েছে, এখানকার কাজের অগ্রগতি খুবই কম। আইন এবং কলা বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগের পঠন-পাঠন হয় না। উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। শুরুর সময় বলা হয়েছিল এখানে একাধিক বিষয় নিয়ে পঠন-পাঠন হবে। কিন্তু ১৪ বছর ধরে তিনটি বিষয়ে পড়াশোনা করা হয়। নতুন কোনও সংযোজন হয়নি। তাই মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাসের উন্নয়নে পাঁচ সংসদের এক প্রতিনিধি দল আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এক স্মারকলিপি তুলে দেন। উপাচার্যকে দেওয়া স্মারকলিপিতে তারা বলেন, এই ক্যাম্পাসের অধিকাংশ ভবন অস্থায়ী। ভবনের ছাদ টিনের শেড দিয়ে তৈরি। টিনের তৈরি এই শেডগুলি গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, ফলে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করতে ভীষণ অসুবিধা হয়। স্থায়ী ভবন নির্মাণের দাবি জানান সাংসদরা।
এখানে যে ছাত্রছাত্রীদের জন্য হস্টেল রয়েছে সেগুলো অনেকটাই অনুপযুক্ত এবং অস্বাস্থ্যকর। হস্টেলগুলি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না, ফলে নানা সময়ে পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা হস্টেল ক্যাম্পাস তৈরি করার দাবি জানানো হয় উপাচার্যের কাছে।
তৃণমূল সাংসদরা এ দিন অভিযোগ জানিয়ে বলেন, মুর্শিদাবাদ আলিগড় ক্যাম্পাসের জন্য বাজেটে মাত্র ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু এই অর্থ পর্যাপ্ত নয়, ফলে প্রতিবছর নানা সংকটে পড়তে হয় ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষকে। বাজেটে এই ক্যাম্পাসের জন্য আরও অর্থ মঞ্জুরের দাবি জানান সাংসদরা। যাতে মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাসকে যথাযথ পরিচালনা করা যায়, সে-ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। প্রতিনিধি দল উপাচার্যকে জানান, বর্তমানে কেন্দ্রটিতে তিনটি কোর্সের পড়াশোনা চলছে। এমবিএ, বিএড এবং বিএএলএলবি-তে শিক্ষার্থীর ভর্তির হার ৬০ এবং বিএডের জন্য ৫০ শতাংশ। ২০১১ সাল থেকে এই কেন্দ্রে নতুন কোর্স চালু করা হয়নি।
স্থানীয় শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে নতুন কোর্স যেমন বিএ, বিএসসি, বিটেক ইত্যাদি কোর্স চালু করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি। এর পাশাপাশি কিছু ডিপ্লোমা কোর্স যেমন ডিপ্লোমা ইন ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ চালু করার দাবি জানাচ্ছি। মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাসে শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে পড়ুয়াদের পঠন-পাঠনে অসুবিধা হয়। স্থানীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান সাংসদরা। ওই ক্যাম্পাসে আধুনিক মানের লাইব্রেরি না থাকাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং সাধারণ সিলেবাস-ভিত্তিক পঠন-পাঠনেও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন পড়ুয়ারা। লাইব্রেরিতে যথেষ্ট পরিমাণে পুস্তক রাখার দাবি জানান সাংসদরা।
ক্যাম্পাসে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অত্যাধুনিক মানের লাইব্রেরি পরিষেবার দাবি জানান তারা। এই ক্যাম্পাসটি আগাছা লতাপাতা এবং জঙ্গলে ভর্তি হয়ে কার্যত ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। উপাচার্যের কাছে দাবি জানিয়ে তৃণমূল সাংসদরা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত তহবিলের ব্যবস্থা করে মুর্শিদাবাদের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।