পুবের কলম প্রতিবেদক দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আপোসহীন যোদ্ধা ও মুক্ত-চিন্তার প্রতীক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন করছে গোটা দেশ। যিনি সর্বদা পূর্ণ-স্বাধীনতা– সমানাধিকার ও ঐক্যে বিশ্বাসী ছিলেন– সেই মহামানবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল দৈনিক পুবের কলম– বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চ ও একটি কুসুম। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম অন্যান্য বছরের মতো এবারও পার্ক সার্কাস ময়দানে যে মিলন মেলার আয়োজন করেছে– শনিবার সেই মিলন মেলার মূলমঞ্চেই ছিল বিশেষ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশের মূলসুর সাম্য– মৈত্রী ও মিলন– তারই এক ঝলক ফুটে উঠল এ দিনের অনুষ্ঠানে। এ দিন নেতাজিকে নিয়ে যেমন ছিল আলোচনা– তেমনি গানে গানে তুলে ধরা হয় দেশের ঐতিহ্য ও মিলনের ছবি।
নেতাজি সুভাষের ভারত-ভাবনা ও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে কেন আলোচনা দরকার। সে সম্পর্কে আলোকপাত করেন দৈনিক পুবের কলম-এর সম্পাদক ও রাজ্যসভার সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান। এ দিনের আলোচনার বিষয় ছিল ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভারত-ভাবনা ও আজকের আমরা’। এ নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও প্রাবন্ধিক জাহিরুল হাসান– কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ড. গৌতম পাল– নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকর্তা ড. দেবনারায়ণ মোদক– বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সভাপতি ওয়ায়েজুল হক প্রমুখ।
জাহিরুল হাসান নেতাজি সম্পর্কে বলেন– দেশকে জানতে হলে নেতাজিকে আগে জানতে হবে। বিজেপি-আরএসএস-এর তরফে নেতাজি সম্পর্কে যে ভূল বার্তা দেওয়া হচ্ছে সে সম্পর্কেও তিনি আলোচনা করেন। আদোতে নেতাজি হচ্ছেন- মুক্ত-চিন্তা– সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও সমন্বয়ী ভারতে মূর্তপ্রতীক। দেশকে পরাধীনতার শিকল মুক্ত করতে তাঁর আপোষহীন সংগ্রাম ও আজাদ হিন্দ সরকারের মন্ত্রিসভার প্রসঙ্গ তুলে জাহিরুল হাসান বলেন– জাতি-ধর্মের বিভেদ ভুলে মিলন-মৈত্রীর দেশ গড়তে চেয়েছিলেন নেজাতি। তাঁর আদর্শ মেনে চললেই গড়ে উঠবে বিভেদ-মুক্ত দেশ। আর তার জন্য নেতাজি সম্পর্কে আরও বেশি বেশি করে আলোচনা দরকার।
ড. গৌতম পালও বিভেদের মধ্যে মিলনের স্বরুপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন– ভারতের শক্তি– সমৃদ্ধি ও বিকাশের মূলসুর হল ‘বৈচিত্র’। কিন্তু আজ তা আক্রান্ত হচ্ছে। একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে পিছিয়ে রাখা বা ব্রাত্য করার মাধ্যমে দেশের বিকাশ ও প্রগতি নষ্ট হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। নেতাজি-ভাবনা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলেন ড. গৌতম পাল। এ বছর দেশ নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী ও স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পালন করছে। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আজাদির অমৃত মহোৎসব’। তবে কেন একটি সম্প্রদায়ের উপ ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে– হিজাব পরার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে প্রশ্ন তোলেন ড. দেবনারায়ণ মোদক। দেশনায়কদের কাছে তাঁর বার্তা- ‘দয়া করে অমৃতের নামে মানুষকে গরল পান করাবেন না। একই কথা বলেন ওয়ায়েজুল হক। দেশের সুস্থ পরিবেশকে নষ্ট করার যে প্রয়াস দেখা যাচ্ছে তার তিনি প্রতিবাদ করেন। তাঁর প্রত্যয়- নেতাজি-নজরুলের দেশের এভাবে বিভেদ স্থায়ী হবে না।
এ দিনের অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন ‘ছায়ানট’ শিল্পগোষ্টীর কর্ণধার সোমঋতা মল্লিক ও তার সহযোগীরা। ছায়ানট-এর তরফে প্রথমেই কাজী নজরুল ইসলামের ‘দূর্গম গিরি কান্তার মরু’ ও পরে নজরুল ইসলামেরই আর একটি গান ‘চল্ চল্ চল্’ পরিবেশিত হয়। অন্যদিকে – তাওহীদ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কচিকাচাদের গান ও অভিনয় ছিল নজরকাড়া। তারা দেশাত্ববোধক গান ও নৃত্য পরিবেশন করে। তাওহীদ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পড়ুয়ারা দেশের পতাকার রঙে রঙিন পোশাক পরে ‘সারে জাঁহাসে আচ্ছা’ গানের মূর্ছণায় ভরিয়ে দিয়েছে মঞ্চ। কচিকাচারা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনীর ‘কদম কদম বাড়ায়ে যা’ গানে গানে যখন নৃত্য পরিবেশন করে– তখন সামনে শ্রোতাদের করতালি ও বাহবায় যেন গোটা মিলন মেলা ফুটে উঠল দেশের প্রতিচ্ছবি।