বিশেষ প্রতিবেদন: এ আর রহমানের নজরুলের রচনা ও তাঁর গানের রূপান্তর নিয়ে আইনি প্রশ্ন উঠেছে। নজরুলের কাজের কপিরাইটের মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংগীতের বিকৃতরূপ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন নজরুল ইসলামের নাতনী, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী খিলখিল কাজী।
প্রসঙ্গত, অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী এ আর রহমান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি রিমেক করেন। এর পর থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী এ আর রহমান। সরব হয়েছেন বিভিন্ন জগতের বিশিষ্ট শিল্পী থেকে নেটিজেনরা।
ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিশিষ্ট নজরুল ব্যাখ্যাকার, অনুবাদক, কিংবদন্তি গায়ক ও সুরকার আব্বাসউদ্দীন আহমেদের নাতনি অধ্যাপক ডক্টর নাশিদ কামাল। তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমি সত্যিই একটি ক্লাসিক গানের এই ধরনের পরিবর্তনের বিরুদ্ধে। নজরুলের লেখা ও সুর করা আব্বাসউদ্দীনের কিছু গান আগেও এর মধ্য দিয়ে গেছে। নজরুল তাঁর কাজের ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল ছিলেন। তাঁর সুরে কোনও বড় পরিবর্তন কখনই পছন্দ করেননি।’
কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ এর সুর বিকৃত করা নিয়ে বিতর্ক-সমালোচনার মধ্যে এবার কবি পরিবারের সদস্যদের দ্বন্দ্ব-মতভেদ প্রকাশ্যে এসেছে। ‘পিপ্পা’ সিনেমায় ব্যবহার করা গানটির স্বত্ব হস্তান্তর চুক্তি নিয়ে নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নজরুলের নাতি-নাতনিরা।
নজরুলের দুই ছেলে কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধের দুই ছেলেমেয়ে খিলখিল কাজী ও কাজী অরিন্দম দাবি করেছেন, ‘পিপ্পা’ টিমকে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গান ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার চুক্তির কথা তাদের কাছে ‘গোপন’ রাখা হয়েছে। এদিকে পিপ্পা’ টিমের তরফে দাবি যে কবির পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে, যিনি মে মাসে কলকাতায় মারা গিয়েছিলেন। নজরুলের পুত্রবধূ প্রয়াত সংগীত শিল্পী কল্যাণী কাজী ২০২১ সালে গানটি অবিকৃত রেখে ‘পিপ্পা’ টিমকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন, সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে কাজী অনির্বাণ। সেই অনুমতি কেবল মৌখিক ছিল না। ‘যাবতীয় নিয়ম মেনে’ করা সেই চুক্তিপত্র অনির্বাণের কাছে বলে দাবি করেছেন তার বোন অনিন্দিতা।
অন্যদিকে নজরুলের ঢাকায় বসবাসকারি নাতনি খিলখিল কাজী বিস্ময় ও সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমার খালা বা চাচাতো ভাই, অনির্বাণ, এই ধরনের চুক্তির বিষয়ে আমাদের কিছু বলেননি।’
তবে কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের উভয় পক্ষই গানের সারমর্ম পরিবর্তন করার জন্য রহমানের সমালোচনা করে, নজরুলের কাজের আইনি অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। খিলখিল কাজীকে কেন “পিপ্পা” দলের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে জানানো হয়নি তা নিয়েও একটি প্রশ্ন উঠেছে।
উল্লেখ্য, রাজাকৃষ্ণ মেনন পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক হিন্দি সিনেমা ‘পিপ্পা’র জন্য নজরুলের ওই গানটির নতুন কম্পোজিশন করেন অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।
১৯২১ সালে ‘বাঙ্গলার কথা’ পত্রিকায় প্রথমে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ কবিতা হিসেবে লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম, পরে তাতে সুর দেন। গানটি পরে রেকর্ড করা হয় ১৯৪৯ সালে, গেয়েছিলেন গিরিন চক্রবর্তী।