কলকাতাSaturday, 11 November 2023
  1. আজকের শিরোনাম
  2. ইতিহাস-ঐতিহ্য
  3. ক্রাইম
  4. খেলা
  5. জেলা
  6. দেশ
  7. ধর্ম ও দর্শন
  8. পর্যটন
  9. ফোটো গ্যালারি
  10. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  11. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  12. বিনোদন
  13. বিশ্ব-জাহান
  14. ব্লগ
  15. ভ্রমণ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কারার ঐ লৌহ কপাট…… গানে বিকৃত সুর বলিউডে

asim kumar
November 11, 2023 3:06 pm
Link Copied!

পুবের কলম প্রতিবেদক:  নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গান নিয়ে বলেছিলেন, আমরা যখন জেলে যাব তখন নজরুলের এই গান গাইব। সংগ্রামে, বিপ্লবে, বিদ্রোহে কাজী নজরুল ইসলামের এই গান জড়িয়ে আছে বাঙালির আবেগের সঙ্গে। সেই গানকে কেন্দ্র করে এবার বিতর্ক তুঙ্গে।

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে হিন্দি চলচ্চিত্র ‘পিপ্পা’। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তার ঘটনা বলা হয়েছে এখানে। সেখানেই ব্যবহৃত হয়েছে নজরুলগীতি ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’। সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের পরিচালনায় গানটির সুর, তাল, লয়, ছন্দ সবকিছুই বদলে গিয়েছে। একদম ‘নেতিয়ে পড়া’ সুরে গাওয়া হয়েছে। যেন রক্তে নেশা ধরিয়ে দেবার বদলে ঘুম পাড়িয়ে দেবে! আর সেটা নিয়েই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো তুলকালাম। অস্কারজয়ী শিল্পীকে নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ বাংলাও। রহমানের মতো সংগীতজ্ঞের কাছে এমনটা আশাই করতে পারছেন না মানুষ।

ইতিমধ্যে তাকে নিয়ে তুলোধোনা শুরু হয়েছে সংগীত মহল থেকে শুরু করে নজরুল-অনুরাগীদের মধ্যে। মুখ খুলেছেন ‘চন্দ্রবিন্দুর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, সংগীত শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র, দেবজ্যোতি মিশ্র, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, শিলাজিৎ, ছায়ানট-এর সোমঋতা মল্লিক প্রমুখ।

নজরুল-পরিবার থেকেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নাতনি অনিন্দিতা,  নাতি কাজী অরিন্দম প্রমুখ। বাঙালির আবেগকে নিয়ে খেলা করা হয়েছে বলে মত তাঁদের। গানটির একটা বৈপ্লবিক পটভূমি আছে। পরাধীন ভারতের বিপ্লবীরা কবির এই গানে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। একজন ভারতীয় হিসেবে এই গানকে বিকৃত করা শুধু অন্যায় নয়, অপরাধ বলে মনে করছেন তাঁরা।

তবে প্রশ্ন উঠছে যে এ আর রহমানের মতো একজন সুরকার কীভাবে এমন ‘কাঁচা’ কাজ করলেন? অনেকে বলছেন, এ আর রহমান এই গান হয়তো নিজে সুর করেননি। তার হয়ে অন্য কেউ এ কাজ করেছেন। তারপরও বিদ্রোহী কবির লেখা এই অসাধারণ গানকে এমনভাবে নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। এটা খোদার উপর খোদগারি! এই গানের নাটকীয়তা, আবেগ, সুরের দৃপ্ত ভঙ্গিমা দেশবাসীকে আজও উদ্বুদ্ধ করে। সংগীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, গানটিকে খুন করা হয়েছে। আর সেই গানের খুনের সঙ্গে জড়িত আছেন এ আর রহমান, সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।

সারা বিশ্বজুড়ে যখন উত্তাল সময়, অশান্ত সময়, সেই সময়ে ‘কারার ঐ লৌহ কপাটে’র মতো গান ভারতবর্ষের, আমাদের বাংলার প্রতিনিধি হতে পারত। নজরুল-নাতনি  অনিন্দিতা কাজীর মন্তব্য, প্রত্যেক গানেরই একটা নিজস্ব ভাষা, ভঙ্গি, ভাব থাকে। সেটা নষ্ট হলে গানের সৌ¨র্য নষ্ট হয়। গায়ক রাঘব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, এখন চারদিকে রিমেকের ঝড় উঠছে।

নজরুলেরও রিমেক হচ্ছে! এই গানটি তো বাঙালি শিল্পীদের দিয়েই গাওয়ানো হয়েছে। তারা এ আর রহমানকে ভুল শুধরে নিতে বলেননি কেন? প্রসঙ্গত গানটি গেয়েছেন রাহুল দত্ত, তীর্থ ভট্টাচার্য, পীযূষ দাস-এর মতো শিল্পীরা। তারা কেন চুপ থেকে গানটি গাইলেন, সেই প্রশ্নও তুলছেন নেটিজেনরা। নিজেদের দায় অবশ্য ঝেড়ে ফেলেননি গানটির অন্যতম গায়ক রাহুল। তিনি বলেন, কোভিডের সময় এটি রেকর্ড করা হয়েছিল। এর জন্য অনেকেই আঘাত পাচ্ছেন। তবে রহমানকে যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে এটা উনি ডিজার্ভ করেন না।

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা তথা দেশের মানুষের রক্তে মিশে রয়েছেন। দেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ের পাশে দাঁড়াতে ক্ষুরধার কলমকে কাজে লাগিয়েছিলেন। একাধিকবার জেল খেটেছেন নজরুল। বিদ্রোহ ছিল তার পুরো সত্তাজুড়ে। আজও রোমকূপে আগুনের নেশা ধরিয়ে দেয় নজরুলের গান। ১৯২৪ সালে প্রকাশিত ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে এই গানটি। বইটির সমস্ত কপি ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল। জারি হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। স্বাধীনতার পর ১৯৪৯ সালে এটি ফের প্রকাশিত হয়। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই গান ব্রিটিশকে কীভাবে বিঁধেছিল! ১৯২২ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের কারান্দির সময়ে নজরুল এই গান লিখেছিলেন।

নজরুলের এই গান সরাসরি চোখ রাঙিয়ে বলেছিল— লাথি মার ভাঙ রে তালা/ যত সব বন্দিশালায়/ আগুনজ্বালা, আগুনজ্বালা, ফেল উপড়ি! এই উদাত্ত আহ্বান মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিল। নেতাজি সুভাষ বলেছিলেন, জেলে যখন ওয়ার্ডেন লোহার দরজা বন্ধ করে, তখন মন কী যে আকুলি-বিকুলি করে। কী বলব! তখন বারবার মনে পড়ে কাজীর ওই গান— কারার ঐ লৌহকপাট।