পুবের কলম প্রতিবেদক: ব্রিটিশরা চলে গিয়েছে। তবু দেশে এখনও নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। বৃহস্পতিবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের তারকাখচিত উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে নাগরিক স্বাধীনতার পক্ষে এভাবেই সওয়াল করলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের ‘শাহেনশাহ’ অমিতাভ বচ্চন।
বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শাহরুখ খান, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রানি মুখার্জি, কুমার শানু, জয়া বচ্চন, মহেশ ভাট প্রমুখের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ও বাংলা সিনেমার মিলনমেলা হয়ে উঠল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক মুক্তমঞ্চ।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খুব একটা মুখ খুলতে দেখা যায় না তাঁকে। তবে এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চে প্রধান অতিথি অমিতাভ ছিলেন অন্য ফর্মে। রাজনৈতিক আদর্শকে কেন্দ্র করে রূপোলি পর্দার জগতও যেভাবে লড়াইয়ের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে তার নিন্দা জানান তিনি।
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর নাম না করেই তিনি যে এর সমালোচনা করলেন তা বলাই বাহুল্য। ব্রিটিশ আমলে দেশে সেনসরশিপের প্রচলন ছিল। বাক স্বাধীনতার কোনও মূল্য ছিল না। এ প্রসঙ্গে এদিন বিগ বি’র সাহসী মন্তব্য, ‘দেশে এখনও নাগরিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে তা নিয়ে মঞ্চে আমার সহকর্মীরা একমত হবেন।’
সম্প্রতি শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ সিনেমার ট্রেলার ও একটি গানের ভিডিয়ো প্রকাশ পেয়েছে। সেটিকে কেন্দ্র করে গেরুয়া বাহিনী তীব্র সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে মাঠে নেমে পড়েছে। ডাক দেওয়া হয়েছে বয়কটের। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চ থেকে এর বিরুদ্ধে সহিষ্ণুতার বার্তা দেন বলিউডের বেতাজ বাদশাহ শাহরুখ খান। তার ভাষণেও ছিল আগামী ছবি ‘পাঠান’-এর সংলাপ।
এসআরকে ইতিবাচক বার্তা দিয়ে বলেন,কিছু মানুষ সংকীর্ণতায় আবদ্ধ হয়ে নিজেদেরকেই অপমানিত করছেন। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া এভাবে নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি করছে বলে তিনি মনে করেন। তবে ঘৃণার বিরুদ্ধে সিনেমা জগৎ সমাজে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি জানান।
শাহরুখ আরও বলেন, আমরা সবাই খুশি। আমি সবচেয়ে খুশি। এটা বলতে কোনও সংশয় নেই যে বিশ্বে যেটাই ঘটুক না কেন, আমার-আপনার মতো বহু ইতিবাচক মানুষ এই বিশ্বে এখনও বেঁচে আছে।
অমিতাভ বচ্চনও শাহরুখের এই সহিষ্ণু বার্তার প্রশংসা করে বলেন, আমি আপনার শিল্পীসত্তার এই মেজাজকে স্যালুট জানাচ্ছি যা বহুত্ববাদ ও সমানাধিকারকে একসঙ্গে গ্রহণ করেছে।
বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর শাহরুখ আরও বলেন, আমি দিদিকে কথা দিয়েছিলাম,যখনই কলকাতায় আসব, বাংলা বলার চেষ্টা করব। এই বছর আমার সঙ্গে রানি এসেছে। তাই ওকে দিয়ে আমি বাংলায় সংলাপ লিখিয়ে নিয়েছি। যদি আমি ভালো বলি তবে আমার প্রশংসা করবেন। আর যদি খারাপ বলি, তাহলে রানির দোষ।
সিনেতারকাদের মঞ্চে কম যাননি মুখ্যমন্ত্রীও। এদিন বাংলার জামাই অমিতাভকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৮তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে উঠে এই প্রসঙ্গটি তোলেন। তিনি বলেন, আমি দাবি তুলছি, অমিতাভজিকে ভারতরত্ন দেওয়া উচিত। এরপরই তাঁর সংযোজন, যদিও অফিসিয়ালি নয়, তবু আমরা বাংলা থেকে আওয়াজ তুলব। গোটা দেশে এমন আইকন আর পাওয়া যাবে না। তিনি মানুষ হিসেবেও খুব বড়।