শেখ কুতুবইদ্দীনঃ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ও সাসপেন্ড হওয়া পড়ুয়াদের অল্প কিছু সদস্য হঠাৎই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে উপাচার্যকে ঘেরাও করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ ছাত্রছাত্রী, গবেষক ও শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তির শুরু হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে আলিয়ার কিছু সাসপেন্ড ও বহিষ্কৃত পড়ুয়ার আন্দোলনে আতঙ্কিত সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষামহল। শনিবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, ছাত্র ও শিক্ষকদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছাত্র ভর্তির সময় তথা কথিত এই আন্দোলন আলিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই আন্দোলনকে আলিয়ার ছাত্র নয় এমন কয়েকজন ব্যক্তি পিছনে থেকে উৎসাহ জোগালেও এর প্রতিবাদে কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারণ ছাত্র ও শিক্ষকদের বক্তব্য, উপাচার্যকে কোনও দাবিপত্র না দিয়ে সরাসরি আন্দোলন করছে সাসপেন্ড ও বহিষ্কৃত কিছু পড়ুয়া। এর পিছনে রয়েছে আলিয়ার ছাত্র নয় এমন কয়েকজন ব্যক্তি। করোনা-বিধি অব্যাহত থাকার কারণে পড়ুয়াদের অনলাইনে পঠন-পাঠন ও পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। সশরীরে ক্লাসও বন্ধ রয়েছে। হস্টেলও বন্ধ। ঠিক এই সময় করোনা-বিধি লঙ্ঘন করে ক্যাম্পাসে ঢুকে ফের অশান্তি শুরু করেছে বহিরাগত কিছু পড়ুয়া।
সাধারণ পড়ুয়াদের আরও বক্তব্য, উপাচার্য পদত্যাগ করবেন কি করবেন না তা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু তাঁকে জোর করে পদত্যাগ করাতে গিয়ে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদেরই আতঙ্কিত করা হচ্ছে। তাদের বক্তব্য, করোনা-বিধির মধ্যে ক্যাম্পাসে সশরীরে এসে আন্দোলনকারী ও কিছু মানুষের স্বার্থসিদ্ধি ছাড়া কিছুই হতে পারে না। সূত্রের খবর, কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে বহিষ্কৃত–সাসপেন্ড হওয়া এবং বর্তমান কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে বৈঠক করেন কিছু বহিরাগত। তার ঠিক কয়েকদিন পরই আলিয়ার নিউটাউন ক্যাম্পাসে এই অশান্তি শুরু হয়।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, এই আন্দোলন পুরোপুরি অনৈতিক। এই কাজে কিছু বহিরাগত ইন্ধন জোগাচ্ছে। কারণ, আলিয়ার পরিকাঠামো উন্নয়নের বরাদ্দের জন্য কিছু টেকনিক্যাল বিষয় থাকে। আন্দোলনকারীদের সেগুলি বোঝা উচিত। তবে সব বিষয় জেনে আন্দোলনে নামছে কিছু স্বার্থান্বেষী। সেইজন্য এমএএমই ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, আন্দোলনকারীদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিনের নেতৃত্বে আগের উপাচার্যকেও হেনস্থা করা হয়েছিল। এরপর কিছু শিক্ষক ও গবেষকের উপর চড়াও হয়েছিল তাঁদের মধ্যে কয়েকজন। ক্লাস থেকে বের করে এনে কিছু ছাত্রকে মারধর করার অভিযোগও ওঠে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এমএএমই-র প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সুরেশ কুমারকে এই ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং আহত করার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ। যাঁদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল, ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কমিটি তাঁদের সাসপেন্ড ও বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা সাজিদুর রহমান বলেন, আলিয়ার বিষয়ে পডYয়াদের দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। তবে সেটা হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। বহিষ্কৃত ছাত্রদের এই আন্দোলন অযৌক্তিক। এটা মানতে পারছে না সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। ক্যাম্পাসে অশান্তি তৈরি ও আলিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টাকে মানা যাবে না।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে ফরিদউদ্দিন হাসানের অভিযোগ, বর্তমান উপাচার্যের আমলে আজ পর্যন্ত একটি কাজও হয়নি। তার দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আন্দোলন চলছে। আগামীতেও চলবে তাদের আন্দোলন। বহিষ্কৃত ছাত্র ও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত গিয়াসউদ্দিনের বক্তব্য, ‘কর্তৃপক্ষ শাস্তি দেওয়ার এক বছর পর আমার বহিষ্কারের তকমা তুলে দেওয়া হয়। শাস্তি তুলে দেওয়ার সময় কর্তৃপক্ষ নোটিশ করে যে– সাসপেন্ড ও বহিষ্কৃত ছাত্ররা পরীক্ষা দিয়ে কোর্স সম্পন্ন করতে পারবে। কিন্তু নতুন কোনও কোর্সে ভর্তি হতে পারবে না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করানোর ব্যবস্থাও করা হল না। শিক্ষক ও গবেষকদের মারধরের অভিযোগে ১৩ জন সাসপেন্ড ও বহিষ্কৃত পড়ুয়াকে পাশ করার সুযোগ দেওয়া হল। আর আমার ক্ষেত্রে দেওয়া হল না। পরীক্ষা দিতেও বলা হচ্ছে না। এই উপাচার্যের আমলে আমার শাস্তি অব্যাহত রাখা হয়েছে। তাই আমি রাজনীতির শিকার হয়েছি। আন্দোলনকারীদের পাশে এসে আমার দাবি জানাতে ‘ভিকটিমট’ হয়েও এসেছি।
কিন্তু বর্তমানে বহিরাগত পূর্বতন ছাত্রদের বিরুদ্ধে রয়েছে একগাদা অভিযোগ। এই অভিযোগগুলি নিয়ে থানায় এফআইআরও হয়েছিল। অভিযোগ, নতুন ছাত্র ভর্তি হলেই তাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নিত গিয়াসউদ্দিন– বর্তমানে বিজেপি নেতা কবিরুল ও তার দলবল। অলিখিত টাকাও তুলতো। হস্টেল পাইয়ে দেওয়ার নামে পড়ুয়াদের কাছে টাকা নিত। ভুয়ো মার্কশিট তৈরি করে স্কলারশিপের টাকা তুলত। কোনও পড়ুয়া সেমিস্টারে পাশ না করতে পারলে স্কলারশিপের টাকা পাবে না। তাই মার্কশিট ও অনুমোদনপত্র জাল করে টাকা তুলত। অন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলেদের আলিয়ার পোর্টালে নাম দেখিয়েও টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে এই দলবলের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ থানায় এফআইআরও করেছিল আলিয়া কর্তৃপক্ষ। তবে বিষদে তদন্ত হয়নি। তদন্ত করলে এখনও অনেক তথ্য উঠে আসতে পারে।