নেপিদো, ১ সেপ্টেম্বর: গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ও সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের পর থেকেই টালমাটাল মায়ানমার। দেশটিতে সংঘাত এখনও অব্যাহত। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে বেশ কয়েকটি স্বাধীনতাকামী দল ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ফলে একের পর এক সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে দেশটিকে। মায়ানমারের পরিস্থিতি এখন এতটাই খারাপ যে দেশটির ৫ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন।
জানা গিয়েছে, সংসার চালাতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। মায়ানমারের সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের তিন বছর পর দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই দরিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির গবেষকরা বলছেন, ২০১৭ সালের পর দারিদ্র্য দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির পথে হাঁটছে দেশটির দরিদ্র মানুষরা। এ জন্য কাজ করছে এজেন্টরাও।
যদিও এমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কেনা-বেচা কোনওভাবে আইনসিদ্ধ নয়। অর্থাভাবে কিডনি বিক্রি করা ব্যক্তিদের একজন ডেলিভারি ম্যান মং মং। ২০২২ সালে তিনি নিজের কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য ফেসবুকে পোস্টও করেন তিনি। পরে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ভারতে তার সার্জারি হয়। এক চিনা-বার্মিজ ব্যবসায়ী ৩ হাজার ডলারে তার কিডনি সংগ্রহ করেন। রাষ্ট্রসংঘের তথ্যানুসারে, মং মংয়ের কিডনি বিক্রির টাকা মায়ানমারের শহরের কোনও পরিবারের বার্ষিক আয়ের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। মং মং বলেন, ‘আমার একটি কিডনি আছে। আর বেশি হলেও ১৫ থেকে ২০ বছর বাঁচব।
এরপর আমার মৃত্যু হবে। তবে এতে কোনও আফসোস নেই আমার।’ তিনি বলেন, ‘আমার জীবন দুর্বিষহ না হয়ে উঠলে আমি কখনও এটি করতাম না। চাকরি নেই, ঘরে খাবার নেই। ফলে পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে স্ত্রী সন্তানসহ আমরা প্রায় মরতে বসেছিলাম।’ কেবল তিনি নয়, মায়ানমারে এমন আরও অসংখ্য লোক রয়েছেন যারা অর্থের জন্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করছেন।
মায়ানমারে এ ব্যবসার জন্য অনলাইন এজেন্ট রয়েছেন। এসব এজেন্টদের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রয়োজনীয় নথি জাল ও অস্ত্রোপচার করিয়ে থাকেন। সিএনএন জানায়, এ সংক্রান্ত অন্তত তিনটি ফেসবুক গ্রুপের খোঁজ মিলেছে যেখানে কিডনি বেচা-কেনার কাজ চলছে।