কিবরিয়া আনসারী: হরিয়ানায় গো-রক্ষকদের হাতে বাংলার শ্রমিককে খুনের ঘটনায়
দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুললেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান
ও তৃণমূলের রাজ্যসভার
সাংসদ সামিরুল ইসলাম। সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষকে ‘জাস্টিস ফর সাবির‘ আওয়াজ তুলতেও আহবান জানালেন
তিনি। একইসঙ্গে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ঘটে চলা বাংলার শ্রমিকদের উপর
আক্রমণ, হামলা, হেনস্থা ও শারীরিক নিগ্রহের ঘটনাকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সামিরুল
ইসলাম। তিনি বলেন, “বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বারংবার বাংলার পরিযায়ী
শ্রমিকদের আক্রমণ ও হেনস্থা করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর
থেকে বাঙালি খেদাও শুরু করেছে। আমরা এটা কখনোই মানব না।” গো-রক্ষক
বাহিনীরা বাংলার শ্রমিককে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করল। তবুও আমরা চুপ কেন?
প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ। এই ঘটনার বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে
পথে নেমে প্রতিবাদ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূল সাংসদ।
রবিবার নিহত সাবির মল্লিকের বাসন্তির গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের
রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাসন্তির তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল
মণ্ডল, বাসন্তির বিডিও সঞ্জীব সরকার, বাসন্তি পঞ্চায়েত সমিতির
পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রাজা গাজি সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা। এদিন নিহত পরিবারের সঙ্গে
দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহতের
বাবা। চোখে একরাশ জল নিয়ে আব্দুল কাদের গাজি বলেন, ‘ছেলে নির্দোষ ছিল, তবুও তাঁকে
পিটিয়ে হত্যা করেছে।’ তৃণমূল সাংসদ কাছে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন
সাবিরের গোটা পরিবার। দোষীরা কঠোর শাস্তি পাবে বলেই তাঁদের আশ্বস্ত করেন তৃণমূল সাংসদ। সামিরুলের কথায়,
“রাজ্যের তরফে হরিয়ানা সরকারের উপর চাও দেওয়া হচ্ছে। যাতে পরিবার সুবিচার
পাই।”
এদিন অসহায় পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়
ব্যক্তিগত ভাবে নিহতের পরিবারকে তিন লক্ষ টাকা সাহায্য পাঠিয়েছেন। সেটিও এদিন পরিবারের হাতে
তুলে দেওয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন সাবির মল্লিক। তাঁর
মৃত্যুতে গোটা পরিবারে আধার নেমে এসেছে। দু’বছরের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে তাঁর।
আগামীতে অসহায় পরিবারটি যাতে মাথা উঁচু করে বাচতে পারে, তাঁর জন্য নিহতের স্ত্রীকে
একটি সরকারি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান।
সামিরুল ইসলাম বলেছেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে
পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও পরিবারের
পাশে রয়েছে। সরকারি সমস্ত সহযোগীতা করা হবে। পরিবারের একজনকে
একটি চাকরি দেওয়ার হবে।”
রাজ্যসভায় একাধিকবার পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার কথা উপস্থাপন
করেছেন সামিরুল ইসলাম। তবুও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কেন্দ্র সরকার
কোনও কর্ণপাত করেনি বলেই অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সাংসদ। কেন্দ্রের মোদি
সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, “বাংলা ভাষায় যারা কথা বলেন তাদের ‘বাংলাদেশি‘ বলে দেগে দেওয়া
হচ্ছে। বাংলায় কথা বলা মানেই ‘বাংলাদেশি’ নয়। পশ্চিমবঙ্গ ছিল বলেই দেশ স্বাধীনতা
লাভ করেছে। বাংলার বহু মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আর আজ বাংলার
শ্রমিকদের পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।” তাঁর আরও সংযোজন, “দেশের অন্যান্য
রাজ্যের শ্রমিকরা বাংলায় কাজ করেন। বাংলার সরকার তাদের সব রকমের সহযোগীতা করে।
কোনওদিন দেখেছেন বাংলায় অন্য রাজ্যের শ্রমিকদের পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।”