নয়াদিল্লি, ২৬ সেপ্টেম্বর: তাঁরা নিজেরা পেশায় দিনমজুর। তাঁরা জানেন, ১০০দিনের কাজের টাকা তাঁদের জন্য কতটা দরকারী। অথচ, বাংলার ১০০দিনের কাজের শ্রমিকরা গত ৩ বছর ধরে টাকা পাচ্ছেন না। কেন্দ্র বঞ্চনা করছে। ফলে বাংলার এই বঞ্চিত শ্রমিকদের জন্য তাঁদের প্রাণ কাঁদছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে চিঠি পাঠানো হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে। এমন মোদির রাজ্য গুজরাত থেকেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিগুলি পাঠিয়েছেন একশো দিনের কাজের শ্রমিকরাই। চিঠিতে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন, অবিলম্বে ১০০ দিনের কাজের টাকা বাবদ বাংলার প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। সেই চিঠিই আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে তৃণমূল। জানা গিয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪,৭০০ টিরও বেশি চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে এমজিএনআরইজিএ (মনরেগা) প্রকল্প বা ১০০দিনের কাজের টাকা পাচ্ছে না বাংলার শ্রমিকরা। প্রায় তিন বছর ধরে শ্রমিকদের মজুরি ছাড়াই ফেলে রাখা হয়েছে। আর এই বঞ্চনা নিয়েই এবার ‘এনআরইজিএ সংগ্রাম মোর্চা’র তরফে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রধানমন্ত্রীকে পোস্টকার্ড-চিঠি পাঠানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের যে মনরেগা তহবিল রয়েছে প্রতিবাদ হিসেবে সেই তহবিলে এক টাকা করে দান করেছেন এই শ্রমিকরা। বিজেপিশাসিত বিহার থেকে ৮০০-র বেশি পোস্টকার্ড পাঠানো হয়েছে।
‘জনজাগরণ শক্তি সংগঠন’, ‘জনবিকাশ শক্তি সংগঠন’, ‘প্রবাসী মজদুর সংগঠন’ প্রভৃতি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই পোস্টকার্ডগুলি পাঠানো হয়েছে। যোগী-রাজ্য উত্তরপ্রদেশ থেকে ৫০০-র বেশি পোস্টকার্ড পাঠানো হয়েছে। ‘সংগতিন কিষাণ মজদুর সংগঠন’-এর পক্ষ থেকে এই চিঠিগুলি পাঠানো হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের ‘খাদ্যসুরক্ষা জনঅধিকারী মঞ্চ’র পক্ষ থেকে ২০০-র বেশি পোস্টকার্ড পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ছত্তিশগড়ের ‘ছত্তিশগড় কিষাণ মজদুর সংগঠন’-এর পক্ষ থেকে ৫০০-র অধিক, গুজরাতের ‘আন্না সুরক্ষা অধিকার অভিযান’ নামক সংগঠনটির পক্ষ থেকে ২,৫০০টির বেশি, অন্ধ্রপ্রদেশের ‘আম্বেদকারিজামি পুনাদি’ সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০০-র অধিক ও তেলেঙ্গানার ‘দলিত বহুজন ফ্রন্ট’-এর পক্ষ থেকেও ১০০-র অধিক পোস্টকার্ড পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
পোস্টকার্ডগুলিতে একটি স্পষ্ট এবং দৃঢ় বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার যদি পশ্চিমবঙ্গের জন্য এনআরইজিএ বাজেট বরাদ্দ করতে না পারে, আমরা, ভারতের শ্রমিকরা নিজেরাই তাহলে অর্থায়ন করব। আমরা পশ্চিমবঙ্গে অবিলম্বে মনরেগার কাজ পুনরায় শুরু করার দাবি জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ আগস্ট বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্বকারী একটি ১৫-সদস্যের প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় গ্রামন্নোয়ন সচিব শৈলেশ কুমারের সাথে দেখা করে বাংলার জন্য জরুরি তহবিল মুক্তি এবং মনরেগার কাজের পুনর্নবীকরণের পক্ষে জোর সওয়াল করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া সংগঠনগুলির বক্তব্য, শ্রমিকদের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। ভিন্ রাজ্যে কাযে যেতে তারা বাধ্য হচ্ছে। ক্ষুধা ও অপুষ্টি বাড়ছে।
বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গের দুর্বল গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে দারিদ্র্য বাড়ছে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে অন্যায়ভাবে তাদের কাজের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এনআরইজিএ সংগ্রাম মোর্চার পক্ষ থেকে লেখা এই চিঠিতে জবাব চাওয়া হয়েছে, এভাবে আর কতদিন টাকা আটকে রাখা হবে? আর কতদিন কাজকর্ম বন্ধ করে রাখা হবে? বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জবাব চেয়ে শ্রমিকদের লেখা ওই চিঠি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরে নিশানা করা হয়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকারকে।