পুবের কলম প্রতিবেদকঃ করোনা পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মানুষ যখন ঘরে। ঠিক সেই সময় মানুষের পাশে দাঁড়াতে মরীয়া এক শ্রেণি। একদিকে নিজের জীবনের ঝুঁকি– অন্যদিকে অন্ন সংস্থান। সেই কোভিড যোদ্ধাদের খুঁজে এনে সংবর্ধনা দিল ওয়েস্ট বেঙ্গল এনজিও অ্যাসোসিয়েশন। শনিবার কলকাতার নেহেরু চিল্ড্রেন্স্ অ্যাকাডেমিতে এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে সারা রাজ্যের ৪১৭টি সংস্থাকে নিয়ে তৈরি এই অ্যাসোসিয়েশন। এদিন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ডাক্তার– নার্স– সবজি বিক্রেতা– মাছ বিক্রেতা– ব্যাঙ্ক কর্মী– কৃষক-সহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্তদের কোভিড আবহে নিরলস পরিষেবা প্রদানের জন্য এদিন মোট ৩৭জনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এছাড়া ১০৫টি এনজিও’কে সংবর্ধিত করা হয়েছে।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবহণ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক ও প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, পাদ্রী সুব্রত চক্রবর্তী– কলেজের শিক্ষক সেখ আবদুল হামিদ– পুরোহিত রবীন ঘোষাল, বরুণ হালদার–,শানোয়ার আলি পৈলান প্রমুখ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন– সংগঠনের সভাপতি শেখর মাহান্তি,সহসভাপতি অনাদি রঞ্জন হালদার– বিধানচন্দ্র বৈদ্য– সাধারণ সম্পাদক সাবির হোসেন মোল্লা– কোষাধ্যক্ষ সহদেব পানুয়া– কালীপদ গিরি– সেলিনা ঢালি প্রমুখ।
মন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল তাঁর বক্তব্যে বলেন– কোভিডে যাঁরা মানুষের পরিষেবা দিয়েছেন– তাঁরা কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকেন। তিনি বলেন– কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলাকারীদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন। ডাক্তার– নার্স– সবজি বিক্রেতা– ব্যাঙ্ক কর্মী প্রভৃতি মানুষরা এক সঙ্গে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন বলে করোনা দমন করা সম্ভব হচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক না হলেও আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। মন্ত্রীর পরামর্শ– সকলে যাতে মাস্ক– স্যানিটাইজার– দূরত্ববিধি বজায় রাখে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক ও প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান বলেন– করোনা পরিস্থিতিতে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অক্সিজেনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বহু মানুষ মারা গিয়েছে– সেই ছবিটা সারা বিশ্ব দেখেছে। তবে সেই পরিস্থিতি এখন নেই। করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষ রয়েছেন– যাঁরা আতঙ্ক দূরে রেখে কাজ করেছেন। কোভিডের সঙ্গে লড়েও কাজ থেকে বিরত থাকেননি। তিনি বলেন– যেখানে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করছে কেন্দ্রীয় সরকার– সেখানে নন-গর্ভনমেন্ট অর্গানাইজেশনগুলি কাজ করে চলেছে। মানুষের জন্য কাজ করা– তাদের অন্ন– বস্ত্র– অসুস্থদের সেবা করার কথা ইসলামে উল্লেখ আছে। তাই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উচিত। সেই কাজগুলি করে চলেছে এনজিও সংস্থাগুলি।
অ্যাসোসিয়েশনের চিফ মডারেটর শেখ মুন্নাফ আলি এই সংস্থার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন– রাজ্যের সমস্ত এনজিও সংস্থাগুলিকে এক ছত্রছায়ায় এনে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কাজ করা। আগামী দিনে এ রাজ্যের বাকী এনজিওগুলিকে এই অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় এনে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ যৌথভাবে করা। আগামীতে এই সংবর্ধনার ধারা বজায় থাকবে। শুধু সংবর্ধনা নয়– এই সমস্ত পেশার মানুষদের সুবিধা-অসুবিধা জেনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এনজিওদের সমস্যা নিরসনেরও প্রচেষ্টা চলবে এই অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে।
সংবর্ধনা গ্রহণ করার পর আশাকর্মী তারা বিবির কথায়– করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কাজ করেছি। করোনা পজিটিভ হয়েছিল। এই পরিস্থিতি সামলে কাজ থেকে বিরত হইনি। যেূানে কেউ যায় নি– সেূানে গিয়েছি। সেই কাজের সম্মান পেয়ে ভালো লাগছে। এতে কাজের প্রতি আরও উৎসাহিত হব।
পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মমতা মণ্ডল বলেন– করোনা পরিস্থিতিতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে সচেতন করেছি। মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে– তার জন্য সতর্ক করেছি। সেই কাজের স্বীকৃতি পেয়ে ভালো লাগছে।
গ্রামে গ্রামে সাইকেলে করে মাছের ফেরি করেন বিষ্ণপুর-রায়পুরের কাকলি মণ্ডল। তাঁর কথায়– এই উদ্যোগ ভালো– লকডাউনের সময় মানুষের পাশে থেকেছি। বাড়িতে বাড়িতে মাছ পৌঁছে দিয়েছি। এই কাজের স্বীকৃতি মিলবে ভাবতে পারিনি!