পুবের কলম প্রতিবেদকঃ মিশন-কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আল-আমীন মিশন একটি উজ্জ্বল নাম। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এখানকার ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে। শুধু তাই নয়– ডাক্তারিতে ভর্তির প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘নিট’-এর ফলাফলও ঈর্ষণীয়। বিগত বছরের ন্যায় এবারেও আল আমীন মিশন থেকে পাঁচ শতাধিক পড়ুয়া ডাক্তারিতে সুযোগ পেতে চলেছে। তাদের বেশিরভাগই গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা মেধাবী পড়ুয়া।
কারও বাবা রাজমিস্ত্রি– তো কারও বা দিনমজুর। দু’একজন এমনও রয়েছে যাদের বসবাস ঝুপড়িতে। সেই সব ঘরের ছেলেমেয়েদেরই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছে আল-আমীন মিশন। বিগত দিনের সাফল্যকে হাতিয়ার করে এবারেও পাঁচশো জনের বেশি ছেলেমেয়ে সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষায় সম্মানজনক স্থান অধিকার করেছে। স্বভাবিকভাবেই খুশি মিশন কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজন।
এ বছর আল-আমীন মিশন থেকে প্রায় আঠারোশো পড়ুয়া নিট-এ বসেছিল। তাদের মধ্যে প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচশোজন ডাক্তারির স্নাতক ডিগ্রি ‘এমবিবিএস’এ সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে।
মঙ্গলবার মিশনের কলকাতা অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম এই সাফল্যের জন্য পড়য়াদের শুভেচ্ছা জানান। একইসঙ্গে বেশ কিছু পড়ুয়াকে মিশনের কলকাতা অফিসে ফুলের স্তবক দিয়ে ও মিষ্টিমুখ করিয়ে সংবর্ধিত করেন।
এম নুরুল ইসলাম জানান– এবারের নিট পরীক্ষায় আল-আমীন মিশন থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সর্বভারতীয় স্তরে ৪৭০ তম Rank করেছে তৌহিদ মুর্শিদ। দেশের নিরিখে ওবিসি ক্যাটিগোরিতে তার স্থান ১০৫। তৌহিদের বাড়ি মালদা জেলার বৈষ্ণবনগর থানার পারদেওনাপুর গ্রামে। বাবা হাইমাদ্রাসার শিক্ষক– মা স্বাস্থ্যকর্মী। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকেও আল-আমীন মিশন থেকে সে নব্বই শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছিল। তার এক দাদা আল-আমীনের প্রাক্তনী– এ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করল। বোনও আল আমীন মিশনেই একাদশ শ্রেণিতে পাঠরত। ডাক্তার হয়ে সবাজসেবাকে ব্রত হিসাবে নিতে চায় তৌহিদ।
জানা গিয়েছে– মিশন থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে হাওড়ার রাজাপুরের তেহট্ট গ্রামের ছেলে মোকসেদুল মোল্লা। দেশের নিরিখে তার স্থান ৬৫০। বাবা মুজিবর মোল্লা জরির কাজ করে সংসার চালান– মা গৃহবধূ। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেও ভালো রেজাল্ট ছিল মোকসেদুলের। শল্য চিকিৎসক হতে চায় সে।
অন্যদিকে– মিশন থেকে তৃতীয় হয়েছে হাওড়ার ডোমজুড়ের কাসেদ আখতার। তার Rank ১৩১০। মাধ্যমিকে সে রাজ্যের মধ্যে নবম স্থান অধিকার করেছিল। মেধাবী পড়ুয়া। বাবা-মা স্নাতক। বোন সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত। তাই সে বড় হয়ে নিউরো সার্জেন হতে চায়। চতুর্থ হয়েছে দেবস্মিতা দাঁ। সে মেয়েদের মধ্যে প্রথম। তার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বরানগরে। তার সর্বভারতীয়
Rank ১৭৮৬। পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে শেখ আল-আমীন। তারর্ যাঙ্ক ২৪৩৯। বাড়ি উলুবেড়িয়ায়। বাবা জরির কাজ করেন। মিশন থেকেই সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিল। অন্যান্য সফলের মধ্যে অন্যতম নাসিম আহমেদ (২৯০৮)– সামসুদ্দিন শেখ (৪১৪৭)– শাহিন আলম (৪৩৯৬)– নুর হুসেন গাজি (৪৫৭৮)– শাহিদ আহমেদ (৪৫৮৫)– আবদুল হামিদ শেখ (৪৮৯৩)– সোয়াইব আখতার খান (৫১৮৬)– উজ্জ্বল শেখ (৬২১৫)– আসিফ আহমেদ (৬৬৯৩)– ইনামুল হাসান খান (৭২৩৩)– শেখ জুয়েল (১–৫০–৪৪)।
প্রতিক্রিয়ায় এম নুরুল ইসলাম বলেন– খুব ভালো লাগছে গতবারের মতো এবারও আমাদের মিশন থেকে পাঁচশোজনেরও বেশি পড়ুয়া ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। সব তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়নি। গতবারের থেকে কিছুটা বেশি হবে বলেই মনে হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে এম নুরুল ইসলাম বলেন– অনলাইনে পঠন-পাঠনের ফলে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। ক্লাসরুম কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে ফলাফল আরও ভালো হত।
অনেকেই মনে করেন যে নিট বা এমন কঠিন পরীক্ষায় আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েদেরই পাশ করা সম্ভব। কিন্তু আল-আমীন থেকে গরিব পডYয়ারাও চমকপ্রদ রেজাল্ট করছে। এর কারণ সম্পর্কে এম নুরুল ইসলাম বলেন– গ্রাম বাংলার মেধাবী পড়ুয়াদের একটা প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তারপর কো-অপারেশন টিচিং মেথড-এ পড়ানো হয়। পড়ুয়ারা একে-অপরের সঙ্গে আলোচনা ও সমস্যা সমাধানের সুযোগ পায়। তাছাড়া– মিশনের শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ সবসময় অভিভাবকসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে পড়াশোনা বা দেখভাল করেন। স্বাভাবিকভাবেই পডYয়ারা ভালো ফলাফল করছে।
অন্যদিকে পড়ুয়াদের বক্তব্য– মিশনের পড়ানোর পদ্ধতি ও শিক্ষকদের অভিভাবকসুলভ গাইড তাদের সফল হতে সাহায্য করেছে। নতুনদের জন্য তাদের পরামর্শ– এনসিআরটি-র বই পড়লে ভালো হয়। তাছাড়া সময়ে সময়ে শিক্ষকরা যা পরামর্শ দেবেন সেইমতো কাজ করলেই সফলতা আসবেই।