নয়াদিল্লি: ডিটেনশন সেন্টারগুলিতে কেন বিদেশিদের আটকে রাখা হয়েছে? এই প্রশ্নের কোনও যুক্তিপূর্ণ জবাব দিতে না পারার কারণে অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকারকে রীতিমতো কড়া ভাষাতেই ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। শুধু তাই নয়, অসম সরকার যে হলফনামা দিয়েছে তাতেও খুশি নয় দেশের শীর্ষ আদালত।
কেন বিদেশি নাগরিকদের ডিটেশনশন সেন্টারে আটকে রাখা হচ্ছে? কেনও তাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না? এই প্রশ্নের কোনও জবাব বা ব্যাখ্যা দিতে না পারার জন্য সুপ্রিম কোর্ট বুধবার অসম সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং মুখ্যসচিবকে একটি ব্যাখ্যা-সহ পরবর্তী শুনানির দিন উপস্থিত (ভার্চুয়াল) হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংয়ের একটি বেঞ্চ বলেছে যে, বাঁচার মৌলিক অধিকার শুধুমাত্র দেশের নাগরিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বিদেশি-সহ সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য আর তাই তাদের (বিদেশিদের) অবিলম্বে তাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এ দিন শীর্ষকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ অসমের ডিটেনশন সেন্টারগুলিতে আটক ২৭০ জন ফরেনার্স সম্পর্কিত একটি মামলার শুনানি করছিল। তারা রাজ্য সরকারকে হলফনামা দাখিল করার জন্য ৬ সপ্তাহ সময় দিয়েছিল। কিন্তু অসম সরকার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে না পারায় সুপ্রিম কোর্ট ভর্ৎসনা করে বলেছে, ‘আমরা আশা করেছিলাম যে রাজ্য সরকার ডিটেনশন ক্যাম্পে ২৭০ বিদেশি নাগরিককে আটক রাখার কারণ এবং আটকদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তারা কি পদক্ষেপ নিয়েছে তার বিশদ বিবরণ দেবে।’ সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, ‘আমরা হলফনামার বিবরণ থেকে দেখতে পাই যে, কিছু বিদেশি প্রায় ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি রয়েছে। হলফনামায় এই ২৭০ জনকে আটক করার কোনও যুক্তিপূর্ণ কারণ দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে পদক্ষেপও নির্ধারণ করা হয়নি। এটা এই আদালতের (সুপ্রিম কোর্ট) আদেশের চরম লঙ্ঘন। পরবর্তী শুনানির সময় আমরা অসমের মুখ্যসচিবকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকার জন্য এবং তাদের এই ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছি।’
যদিও এ দিন শীর্ষকোর্টের শ্লেষের মুখে পড়ে অসম সরকারের তরফে উপস্থিত আইনজীবীরা কেন্দ্রের ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা করে বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের নির্বাসন প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। অবৈধ অভিবাসীদের যোগাযোগের সম্পূর্ণ তথ্য, নথি-সহ বিশদ বিবরণ রাজ্য সরকার বিদেশ মন্ত্রককে সরবরাহ করে থাকে, যা পরে বিদেশ মন্ত্রক তাদের কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে যাচাই করে। যদিও তাঁদের এই জবাব নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, এটা তো ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্য। কেন্দ্র ও রাজ্য দু’ক্ষেত্রে তো তারাই (বিজেপি) ক্ষমতায়, তাহলে অসুবিধা হচ্ছে কেন?
উল্লেখ্য, এর আগে সুপ্রিম কোর্ট অসমের আইনি পরিষেবা বিষয়ক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিল মাটিয়া ডিটেনশন সেন্টারটি পরিদর্শন করে দেখার জন্য যে, সেখানে আটক বিদেশিদের জন্য পর্যপ্ত সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্যসম্মত বিধিব্যবস্থা রয়েছে কি না। আটক বিদেশিদের যে খাবার দেওয়া হয় তার গুণগত মানও পরীক্ষা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।