বেঙ্গালুরু: কংগ্রেস আমলে আটোসাঁটো তদন্ত, মজবুত তথপ্রমাণ ও উপযুক্ত সাক্ষ্য সত্ত্বেও একে একে জামিন পেয়ে গেল গৌরী লঙ্কেশ খুনের অভিযুক্তরা। মোট ১৮ জন অভিযুক্তর মধ্যে একজন এখনও অধরা। বাকি ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জনের জামিন মিলেছিল। সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগ ছিল যার বিরুদ্ধে সেই শারদ কালাসকারেরও জামিন হয়ে গেল শুক্রবার। বেঙ্গালুরুর একটি কোর্ট জামিন দিতে গিয়ে যুক্তি দেখায়, যখন একই মামলায় ১৬ জন জামিন পেয়েছে তাহলে ১৭ নম্বরের জামিন হবে না কেন। সমতা বজায় থাকতে হবে। সুপ্রিম কোর্টও বলেছে বিনা বিচারে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা উচিত নয়। তাছাড়া এই অভিযুক্ত সম্পর্কে পুলিশ অভিযোগ দিয়েছে, এই ব্যক্তি (কালাসকার) সংগঠিত অপরাধ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এই ব্যক্তি অন্যদের অস্ত্র চালানোর ট্রেনিং দিয়েছে, কীভাবে ‘দুর্জনদের’ চিহ্নিত করা হবে এবং কীভাবে পিস্তল ও এয়ারগান ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে ট্রেনিং দিয়েছে। ফায়ারিং প্র্যাকটিস করেছে, ক্যারাটে প্র্যাকটিস করেছে। পেট্রোল বোমা ও সার্কিট বোমা প্রস্তুত করেছে বলে অভিযোগ থাকলেও এই ব্যক্তি গৌরী লঙ্কেশ খুনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল একথা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। এই ব্যক্তি ২০১৮ সেপ্টেম্বর থেকে হেফাজতে রয়েছে এবং দ্রুত শুনানির দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। তাই দীর্ঘ সময় তাকে আটক রাখা সংবিধানের ২১ ধারার খেলাপ। সেজন্য জামিন মঞ্জুর করে দেওয়া হল।
Read More: অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ, টাকার দামে বড় ধস
লঙ্কেশের আইনজীবী আপত্তি জানান অভিযুক্তরা বাইরে এলে সাক্ষীদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এই যুক্তির জবাবে বিচারক বলেন, ১৬ জন ইতিমধ্যে জামিনে রয়েছে। আর সাক্ষ্য গ্রহণ প্রায় শেষ। সাক্ষ্যগ্রহণ গোপনে নেওয়া হয়েছে, সাক্ষীদের পরিচয় জানার উপায় নেই। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ পুলিশ, তাই সাক্ষীদের প্রভাবিত করার যুক্তি টেকে না।
এই মামলায় কর্নাটক হাইকোর্ট সম্প্রতি জামিন দিয়েছিল কয়েকজন অভিযুক্তকে। লঙ্কেশের পরিবার সুপ্রিম কোর্টেও পৌঁছেছিল কিন্তু জামিন বাতিল হয়নি। উল্লেখ্য, কর্নাটকের বিখ্যাত লেখিকা, সম্পাদক এবং কট্টর হিন্দুত্বের তীব্র বিরোধী সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত গৌরী লঙ্কেশেকে তাঁর বাড়ির গেটের সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে কংগ্রেস জমানায় পুলিশের তদন্ত টিম এই খুনে আসামিদের সন্ধান করতে নেমে প্রথমে জানতে পারে সনাতন সংস্থা নামে একটি সন্ত্রাসী ও গুপ্তঘাতক দল সারাদেশে নেটওয়ার্ক বিস্তার করে বসে রয়েছে। ইতিপূর্বে মহারাষ্ট্রে তিন জন সমাজকর্মী খুনে এই ঘাতক দলই জড়িত। তাদের ডাইরিতে আরও ৩০ জনের নাম ছিল। পরে গোপনে পুলিশ তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে দেয়। কর্নাটক পুলিশ জানতে পারে লঙ্কেশ খুনে মন্ত্র পড়া অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। ঘাতকরা দু’বছর ধরে ওৎ পেতে বসেছিল কর্নাটকে। তাদের অস্ত্র কারখানার হদিশও পাওয়া গিয়েছিল। তারা বিভিন্ন আশ্রমে বৈঠক করেছিল পুলিশ গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য। সাদা পোশাকের মানুষও জড়িত ছিল এই টিমে। নিহতদের পরিবার ভেবেছিল অপরাধীরা সাজা পাবে। এইসব খুনিরা দুর্জনদের খুন করাকে পুণ্যের কাজ বলে মনে করছিল। কর্নাটক পুলিশ এই সন্ত্রাসী চক্রের চাঁই মাথার কাছে পৌঁছনোর আগেই সরকার বদল হয়ে যায়, কর্নাটকে বিধায়ক ভাঙিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসে। এবার অভিযুক্তরা একে একে জামিন পেয়ে যাচ্ছে খুনে অভিযুক্ত হয়েও।