মোল্লা জসিমউদ্দিনঃ সাধারণত লোকসভা /বিধানসভা নির্বাচনে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এবার কোন সমবায় সমিতির নির্বাচনে আধা সামরিক বাহিনীর পাহাড়ায় ভোট করানোর নির্দেশিকা জারি করা হলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। যা রাজ্য রাজনীতিতে অন্য মাত্রা এনেছে।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এলাকা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, -‘ভোট গ্রহণ হবে আধা সামরিক বাহিনীর নজরদারিতে। এছাড়াও, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে ভোটে কারচুপির কোনো সুযোগ না থাকে’।
আপাতত একটি স্পেশাল অফিসার দিয়ে ব্যাঙ্ক পরিচালিত হচ্ছে। এই অবস্থায়, পরিচালন কমিটি গঠনের জন্য নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে মামলা হয়। আদালত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভোট করার নির্দেশ দেয়।আগামী ১৫ ডিসেম্বর ব্যাঙ্কের নির্বাচন হবে। সমবায় দপ্তর ইতিমধ্যেই রিটার্নিং অফিসার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করে ভোটের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।কাঁথির তিনটি স্কুলে পাঁচটি বুথ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ওই দিন সর্বভারতীয় পরীক্ষা থাকায় স্কুলগুলোকে ভোটের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। তাই বিকল্প হিসেবে নতুন পাঁচটি বুথ করা হয়েছে।
তবে বুথগুলির দূরত্ব নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন এগরার প্রাক্তন পুরপ্রধান শংকর বেরা। তার আশঙ্কা, -‘ভোটারদের পক্ষে দূরবর্তী বুথে যাওয়া অসুবিধাজনক হবে’।সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে।
১.নতুন বুথগুলিতে যাতায়াতের জন্য রাজ্য সরকারকে পরিবহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
২.পাঁচটি বুথে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
৩.প্রতিটি বুথে সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
আগামী ১৫ ডিসেম্বর কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ১০৮টি আসনে প্রতিনিধি নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৩০ জন প্রার্থী। কিন্ত সর্বভারতীয় স্তরের একটি পরীক্ষা আছে বলে ভোটগ্রহণ এবং গণনার জন্য স্কুলে জায়গা দিতে কর্তৃপক্ষ রাজি হননি। শেষ মুহূর্তে কয়েকটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র বদলানো হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন এগরার প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর বেরা।
সোমবার সেই মামলারই শুনানি ছিল। শঙ্কর সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ”আইনজীবীর কাছ থেকে খবর পেলাম, ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এ ছাড়া প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সবিস্তার হাতে আসেনি। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানাতে পারব।”দীর্ঘ দিন কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । বর্তমানে তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু এ বার সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও তাঁর ছায়ার সঙ্গেই তৃণমূলের লড়াই বলে মনে করছেন অনেকে।প্রায় তিন বছর কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে পরিচালন কমিটি নেই।
স্পেশ্যাল অফিসার নিয়োগ করেই ব্যাঙ্ক চলছিল। ওই ব্যাঙ্কে পরিচালন কমিটি গঠনের জন্য ভোটের দাবিতে মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলায় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। সেই মতো ১৫ ডিসেম্বর ভোটের দিন স্থির হয়।
কাঁথির তিন স্কুলে পাঁচটি বুথ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষা থাকায় স্কুলে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায়। পরিবর্তে কাঁথি পুর এলাকা থেকে বহু দূরে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শঙ্কর।
সেই মামলার শুনানিতেই এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে যেভাবে একটা সমবায় সমিতির নির্বাচন ঘিরে আধা সামরিক বাহিনীর পাহাড়া সহ সিসিটিভি ক্যামেরার উল্লেখ রেখেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত, তা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ রাজ্য রাজনীতির ক্ষেত্রে।