এস জে আব্বাস: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে সরকারি কর্মী সংগঠন ‘পিস ‘- এর প্রথম রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রবিবার। এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ মাইনরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান তথা পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ মুন্সী, সিইও আলী আহসান, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্টার ড.নুরুস সালাম,আইনজীবী ফিরদাউস শামীম, সমাজ সেবী ইমতিয়াজ আহমেদ, সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল হাদী, সম্পাদক ওমর ফারুক, অধ্যাপক ড.সাইফুল্লাহ, ড .রেজাউল করিম, ড. মেহেদী হাসান প্রমুখ।
বক্তাদের বক্তব্যে আলোচিত হয় সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও তা থেকে উত্তরণের উপায়। প্রশ্ন ওঠে কেন এতদিন সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য তেমন করে কথা ওঠে নি? কেন এখনও ওয়াকফ সম্পত্তি কে কাজে লাগিয়ে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ করে কলকাতার আশেপাশে পর্যাপ্ত হোস্টেল গড়ে তোলা হয় নি? এখনো যেভাবে সংখ্যালঘুদের কৌশলে বঞ্চিত করা হচ্ছে তা নিয়েও কথা উঠে। লিখিত পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেয়েও ইন্টারভিউ বোর্ডে তাঁদের ছেঁটে ফেলার একটা সুপ্ত প্রয়াসে সংখ্যালঘু সমাজ হতাশ। দাবি ওঠে অবিলম্বে বিভিন্ন ইন্টারভিউ বোর্ডে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখা এবং সি সি টিভির নজরদারিতে ইন্টারভিউ নেওয়ার। পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষার খাতা থেকে নাম লেখার প্রবণতা তুলে দিয়ে শুধুমাত্র কোডিং সিস্টেম চালু করার দাবি জানানো হয়। এছাড়াও আলোচনা হয় বর্তমানে জলন্ত সমস্যা ওবিসি, ওয়াকফ সহ বিভিন্ন বিষয়ে।
আইনজীবী যদি ফিরদৌস শামীম জানান ,একেবারে নিম্নস্তর থেকে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘু ছেলে-মেয়েদের মান উন্নয়ন ঘটানোর দায়িত্ব নিতে হবে সকলকে। তিনি বিভিন্ন স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যালঘু প্রতিনিধি না থাকায় আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ঐতিহ্যের মূলে আঘাত হানার কৌশলী অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিরুদ্ধ শক্তি বেশি সাংগঠনিক। অন্যদিকে আমরা বেশি বিচ্ছিন্ন। তিনি আরও বলেন,সর্বস্তরে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি নির্দিষ্টক্রমে না থাকলে কখনোই বঞ্চনাকে রোধ করা সম্ভব নয়। ওয়াকক সম্পত্তি নিয়ে কেন্দ্রের যে মনোভাব তারও তীব্র বিরোধিতা করেন তিনি। তিনি বলেন ব্যক্তির ধর্ম থাকবে, কিন্তু রাষ্ট্রের ধর্ম নয়। আর সেটাই ধর্ম নিরপেক্ষতা।
আহমেদ হাসান ইমরান এদিনের সভায় যেসব প্রশ্ন উঠেছিল স্বল্প সময়ে তার কিছুটা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন মুসলিমদের কিছু বলার মত পরিস্থিতি ছিল ছিল না। এখন আমার বলার মত জায়গায় পৌঁছেছি। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেভাবে আজ সরকারি কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে তারও তিনি প্রশংসা করেন। বর্তমানের মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও তিনি সরব হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর যে প্রান্তেই অত্যাচার অনাচার চলছে তা কখনোই কাম্য নয়। ইসলাম কখনো সে শিক্ষা দেয় না । তুমি সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে শান্তির বার্তা দেন। তিনি হিন্দু সহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনেদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানান । উর্দু ভাষী ভাই বোনেদের তুলনায় বাঙালি মুসলিমদের গাছাড়া মনোভাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন ,আমাদের মধ্যে তবুও উর্দুভাষী মুসলিম ভাইবোনেদের যে কার্যকারিতা এবং উদ্যোগ রয়েছে, বাঙালী মুসলিমদের মধ্যে তা বহুল অংশে কম । এরই পাশাপাশি তিনি আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা ও ইতিহাস চেতনাকে আরো বাড়িয়ে তোলার আহ্বান জানান এবং এ প্রসঙ্গে তিনি ভয়ের কথা শুনিয়ে বলেন, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং ইতিহাস চেতনাকে আমারা যদি অবহেলা করি তাহলে জাতির অবনমন নিশ্চিত।
রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান মুন্সী শহীদুল্লাহ্ কে সংখ্যালঘুদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান , সংখ্যালঘুদের স্বার্থে বিভিন্ন কমিশন বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয়েছিল। তারা রিপোর্ট প্রদান করে কিছু সুপারিশের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই সুপারিশ তেমন ভাবে অনুসরণ করা হয়নি। তিনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসে কোয়ালিটি এডুকেশন দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানান। ওয়াকফ বোর্ড যে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ওয়াকফ বোর্ড যদি না থাকতো তাহলে কি সংখ্যালঘুদের মান উন্নয়নে সরকারের কোনো দায় থাকত না! তাই ওয়াকফ বোর্ড যা করছে তা প্রকারান্তরে সরকারকেই সহযোগিতা করছে। তিনি কেন্দ্রের ২০২৪ এর বাজেটে সংখ্যালঘু খাতে ১০ কোটি থেকে দু’কোটিতে নামিয়ে আনার সমালোচনা করেন এবং প্রশ্ন তোলেন, অন্যান্য ক্ষেত্রে বাজেটে কাট কাট ছাঁট না করে এখানে কেন কম করা হল? অধ্যাপক মেহেদী হাসানের দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।