নয়াদিল্লি, ২৭ নভেম্বরঃ সম্ভলে মুসলিম নিধন, আদানি ঘুষ-দুর্নীতি প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে শীতকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিনও সরগরম হয়ে রইল পার্লামেন্ট। জনগণের নানা উন্নয়ন, নীতি প্রণয়ন নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদ বসে। কিন্তু সেখানে দিনের পর দিন আলোচনার কোনও পরিবেশ রাখছে না শাসক দল বিজেপি। বিল পাসের আগে আলোচনার সংস্কৃতি তো কবেই উঠে গিয়েছে! আলোচনা অচল, কিন্তু পার্লামেন্ট সচল!
আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার দাবিতে বুধবার লোকসভার দুই কক্ষের অধিবেশন সারা দিনের জন্য মুলতবি হয়ে গেল। ঘুষকাণ্ড ছাড়াও লোকসভা ও রাজ্যসভায় মণিপুর সংকট, সম্ভলের হিংসাসহ যতগুলো মুলতবি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল, একটিও গ্রাহ্য না হওয়ায় বিরোধীরা সভার কাজ চালাতে বাধা দেন। ফলে দুই কক্ষের অধিবেশন সারা দিনের মতো মুলতবি করে দেওয়া হয়।
শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম তিন দিনই সংসদের দুই কক্ষের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হল। আদানি প্রসঙ্গ নিয়ে এর আগেও বিরোধী নেতারা সংসদে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কক্ষেই সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক ‘সেবি’র চেয়ারম্যান মাধবী পুরী বুচকে সংসদীয় কমিটিতে হাজিরও করানো যায়নি। শুধু তাই নয়, লোকসভা ও রাজ্যসভা উভয় কক্ষের কার্যবিবরণী থেকে ‘আদানি’ শধটিও বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, গত ১০ বছরে বিরোধীদের আনা কোনো মুলতবি প্রস্তাবই সংসদে আলোচনার জন্য গৃহীত হয়নি। এমনকি পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে ভারত-চিন সংঘর্ষের পরও তা নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কাজেই আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানি ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ঘুষসংক্রান্ত বিষয়ে আমেরিকার আদালতের অভিযোগ নিয়ে মোদি সরকার যে আলোচনায় রাজি হবে না, বিরোধীদেরও তা জানা। তবু বিরোধীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। সংসদের উভয় কক্ষ মূলত সেই কারণেই অচল রইল এদিন।
লোকসভার পরে মুলতুবি হয় রাজ্যসভাও। বুধবার আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন, উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে উত্তেজনা পরিস্থিতি, রাজধানীতে অপরাধ বেড়ে চলা-সহ একাধিক বিষয়ে আলোচনা চেয়ে নোটিশ দেন বিরোধীরা। চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় তা গ্রহণ করেননি। হট্টগোল চলতে থাকায় প্রথমে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত, তার পরে সারা দিনের জন্য উচ্চকক্ষের অধিবেশন মুলতুবি করে দেন তিনি।
গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সখ্য নিয়ে কংগ্রেস বরাবরই সমালোচনায় মুখর। এবার তা জোরাল হয়েছে আমেরিকার আদালতের পদক্ষেপের দরুণ। তথ্য গোপন করে বাজার থেকে অনৈতিকভাবে সম্পদ সংগ্রহের অভিযোগে সে দেশের আদালত গৌতম আদানি ও তার ভাইপো সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
মার্কিন বিচার বিভাগের পদক্ষেপের পর কেনিয়া সরকার আদানির সঙ্গে হওয়া দুটি চুক্তি বাতিল করেছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা আদানির শিল্প চুক্তি নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, আদানির জন্য দুনিয়াজুড়ে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আলোচনার সুযোগ দেওয়া না হলে কংগ্রেস যে সংসদের ভেতর ও বাইরে বিক্ষোভ আন্দোলন কর্মসূচি নেবে, তা আগেই জানানো হয়েছিল। বিরোধীরা চায়, আদানি প্রসঙ্গে মোদি সরকার সংসদে বক্তব্য রাখুক। কিন্তু সরকার যথারীতি নীরব।