লন্ডন, ২৪ নভেম্বর: সম্প্রতি লন্ডনে একটি নতুন পানীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ফিলিস্তিনি রেস্তোরাঁগুলোতে দেখা যাচ্ছে ফিলিস্তিনের পতাকার আদলে চেরি-লাল রঙে রাঙানো সোডার ক্যান। এর মধ্যে পতাকার কালো, লাল ও সবুজ রঙের মিশেলে ঐতিহ্যবাহী কেফিয়েহ প্যাটার্নের নকশা। আর ক্যানগুলোর গায়ে আরবি ক্যালিগ্রাফিতে লেখা রয়েছে ‘গাজা কোলা’। এই পানীয়টি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে “গণহত্যামুক্ত” এবং “বর্ণবৈষম্যমুক্ত” পণ্য হিসেবে ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে দেশটিতে।
লন্ডনের হোলবর্নের একটি জনপ্রিয় ফাস্ট ফুডের দোকান হিবা এক্সপ্রেস। এখানেই অবস্থিত প্যালেস্টাইন হাউস। এই বহুতল ভবনে প্যালেস্টাইনি এবং তাদের সমর্থকদের জন্য একটি মিলনস্থল। সংস্থার মালিক ওসামা কাশু একজন প্যালেস্টাইনি নাগরিক। হিবা এক্সপ্রেসে প্যালেস্টাইনি ও লেবানিজ খাবার পরিবেশন করা হয়, এবং খাওয়ার টেবিলগুলোর উপর ‘গাজা কোলা’ নামে একটি চেরি-লাল ক্যান দেখা যায়, যা প্যালেস্টাইনি পতাকার কালো, সাদা ও সবুজ রঙে সাজানো। গাজা কোলার মাধ্যমে ওসামা কাশু একটি বয়কট আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। যা বড় বড় পানীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসাকে ক্ষতির মুখে ফেলেছে। ‘গাজা কোলা’ তৈরির উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এটি তৈরি করার উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি পানীয় তৈরি করা, যেন ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে এমন কোম্পানিগুলোকে বয়কট করা যায়। এটি এক ধরনের প্রতিবাদ, এক ধরনের মুক্তির স্বাদ।
ওসামা কাশুর পক্ষে কোলা প্রস্তুত করার প্রক্রিয়াটি সহজ ছিল না। কারণ তাকে বিভিন্ন অংশীদারদের পক্ষ থেকে নানা রকম আপসের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবুও তিনি কোনো আপস করেননি। বর্তমানে লন্ডনের তার তিনটি রেস্তোরাঁ, কিছু মুসলিম খুচরা বিক্রেতার দোকান এবং অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে এই গাজা কোলা। এর লাভ থেকে গাজা সিটির আল-করামা হাসপাতালে মাতৃসদনের পুনর্নির্মাণে সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়াও, ফিলিস্তিনিদের সমর্থক অন্য কোলার ব্র্যান্ডগুলো, যেমন প্যালেস্টাইন ড্রিঙ্কস (সুইডেন) এবং মেট্রিক্স কোলা (জর্ডান), সাফল্য পেয়েছে এবং বিক্রয় বাড়ছে। কাশু আশা করেন গাজা কোলা পান করে লোকেরা প্যালেস্টাইনের দুর্দশা মনে রাখবে এবং সচেতন হবে। হিবা এক্সপ্রেসের মালিকের কথায়, আমার গাজায় পরিবার ছিল। তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার বন্ধুরা কোথায় আছে, তাও কিছু জানি না। গাজা কোলার মাধ্যমে একদিকে যেমন মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে বয়কট আন্দোলনও শক্তিশালী হচ্ছে। কাশু বলেন, “গত ৭৫ বছর ধরে চলা এবং এখনও চলমান ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের কথা আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মনে করিয়ে দিতে হবে। আর এটি হতে পারে একটি ছোট্ট স্মারকের মাধ্যমে। যে-সব কোম্পানি সরাসরি এই গণহত্যায় ভূমিকা রাখছে, তাদের রাজস্ব প্রবাহে আঘাত করলে তারা নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করবে।”