পুবের কলম প্রতিবেদক: পারথের পিচের সবুজ ঘাসের আভা অনেকটা উধাও। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যাচের দ্বিতীয় দিন অপ্টাস স্টেডিয়ামের পিচে দেখা গেল যশস্বী-রাহুলের চোখ ধাঁধাঁনো ইনিংস। দীর্ঘ সময় পরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনও এক ভারতীয় বাঁ হাতি ব্যাটারের এমন দাপট দেখল টেস্ট ক্রিকেট। বাঁ হাতি ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে গৌতম গম্ভীরের পর ফের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যশস্বীর দাপট। পিচ অনেকটা ব্যাটিং উপযোগী হয়েছে। অজি পেসাররা এদিন সেই ভয়ঙ্কর মূর্তিতে আবির্ভূত হতে পারলেন না। লোকেশ রাহুল ব্যর্থ হতে হতে এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন, তাঁকে নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার ঢেউ উঠেছিল। কিন্তু সব সমালোচনাকে দূরে সরিয়ে পারথের দ্বিতীয় দিনে রাহুল দাপটের সঙ্গে ব্যাট করলেন। অর্ধ শত রানও করলেন। আর যসশ্বীর সঙ্গে জুটি বেঁধে তুলে ফেললেন রেকর্ড রান। রাহুল ও যসশ্বী প্রথম উইকেট পার্টনারশিপে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত করল ১৭২। দিনের শেষে যশস্বী অপরাজিত আছেন ৯০ রানে আর রাহুল নট আউট ৬২ রানে।
গৌতম গম্ভীর ভারতীয় দলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, একদিনে যত বেশি সম্ভব রান তুলতে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে সেই নির্দেশ মানতে গিয়ে ভরাডুবি হয়েছে ভারতের। টি-২০ মেজাজে খেলতে গিয়ে ভারতীয় দল ভুলে গিয়েছিল এটা সাদা নয়, লাল বলের ক্রিকেট। যেখানে ধৈর্য্য লাগে। ভালো বল পেলে মারার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাইরের বল নিখুঁতভাবে ছাড়া। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে ভুল করেছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা, সেই ভুল শুধরে একেবারে লাল বল মার্কা ক্রিকেট খেললেন যশস্বী ও রাহুল। দুজনেই এদিন শুরু থেকেই প্রত্যেকটা বল খেলেছেন বুঝেসুঝে। অযথা বাইরের বল খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেননি। স্টোক নিয়েছেন যা তাতে শিল্প ছিল।
এর আগে এদিন সকালে কোনও রকমে একশো রান পূরণ করে অস্ট্রেলিয়া। আগের দিনই সাতটি উইকেট খুইয়ে ধুঁকছিলেন অজিরা। মিচেল স্টার্কের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে পারথে নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোর করার লজ্জা থেকে বাঁচল অস্ট্রেলিয়া। স্টার্ক ব্যাট করতে পারেন, এটা জানা কথা। তাই বলে ২৬ রান করলেন ১১২ রানে। টেল এন্ড ব্যাটিংকে কাবু করতে ভারতীয় বোলারদের একটু বেগ পেতে হল। ম্যাচের প্রথম দিন হ্যাজলউডের জবাব যদি হয়ে থাকেন বুমরাহ, তাহলে দ্বিতীয় দিন নিঃসন্দেহে হর্ষিত রানা। তিনি গৌতম গম্ভীরের নিজস্ব পছন্দ। নিরাশ করলেন না ভারতের কোচকে। এদিন দুটি উইকেট তিনি তুলে নিলেন। আর বুমরাহ এদিন একটি উইকেট নিয়ে একটি ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কোটা পূর্ণ করলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস শেষ হয় মাত্র ১০৪ রানে।
৪৬ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারতের দুই ব্যাটার যশস্বী ও রাহুলকে বেশ প্রত্যয়ী লেগেছে। মনের মতো পুলের বল পেলে যসশ্বী সেই শট অনায়াসে যেমন নিয়েছেন, তেমনই আবার যে বল না খেললেও হয়, সেই বল যেতে দিয়েছেন উইকেট কিপার অ্যালেক্স ক্যারির দিকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের যা রান তাতে ভারত এগিয়ে আছে ২১৮ রানে। পিচের যা চরিত্র তাতে ভারত হয়ত চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে বড় রানের লক্ষ্যমাত্রা দিতে চলেছে। এখনই হয়ত ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বোঝা যাবে না, তবে পারথ যে ভারতের জন্য ভালো কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে সেটা ভারতীয় ব্যাটিংয়ের লক্ষণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।