পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের স্লোগান ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ এখন মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক ময়দানে ধ্বনিত হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে, বহু মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ ও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার মুখে। ভোটের আর এক দিন বাকি। এই উত্তেজনা ভোটের জন্য নাকি ভোট-পরবর্তী সময়ে বজায় থাকবে সেটা নিয়ে আতঙ্কিত মানুষ।
বিজেপি, আরএসএস এবং সংঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৬০ এনজিও ভোটের আগে ময়দানে নেমেছে অমুসলিম ভোট একজোট করে বিজেপি শিবিরে আনার জন্য। এক বিশেষ সম্প্রদায়কে এক দলের জন্য ভোট দিতে প্ররোচিত করা আইনের চোখে অপরাধ মনে করা হচ্ছে না, কিন্তু মাওলানা সাজ্জাদ নোমানি মুসলিম দলিতদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ইন্ডিয়া ব্লকের প্রার্থীদের ভোট দিতে, আর সেই আবেদন নিয়ে বিজেপি ‘ভোট জিহাদ’ তত্ত্ব নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এর আগে ‘লাভ জিহাদ’, ‘ল্যান্ড জিহাদ’ স্লোগান দিয়ে এবং গোহত্যার আওয়াজ তুলে বাজার গরম করে রাখা হয়েছিল। এখন সেখানে ‘ভোট জিহাদ’ হাওয়া গুলিয়ে দিয়েছে।
বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ একটি কেন্দ্রের উদাহরণ তুলে ধরে প্রকাশ্যে বলছেন, লোকসভায় একটি কেন্দ্রে মুসলিম ভোটাররা দল বেঁধে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় ৪ হাজার ভোটে হারতে হয়েছে বিজেপি প্রার্থীকে। সেই প্রসঙ্গ তুলে মাওলানা সাজ্জাদ নোমানির বক্তব্যকে সামনে রেখে ভোট মেরুকরণে মেতে উঠেছে বিজেপি। বিজেপির মুসলিম মোর্চাও ময়দানে নেমে মুসলিমদের বোঝাচ্ছে, শিবসেনা কীভাবে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উল্লাস করেছিল। মুসলিম নেতারা ক’দিন আগে শিবসেনা প্রমুখ উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। উদ্ধবের সেক্যুলার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। সেটা সহ্য হচ্ছে না বিজেপির।
২০২৪ সালের লোকসভায় কিন্তু দু’টি জোট কেউ-ই মুসলিম প্রার্থী দেয়নি। এবার বিধানসভাতেও প্রার্থী সংখ্যা নামমাত্র। মহারাষ্ট্রে মুসলিম সংখ্যা ১১.৫ শতাংশ, কিন্তু মহা বিকাশের প্রার্থী মাত্র ১৪,২৮৮ জনের মধ্যে। তবুও মুসলিম ভোটকে ভয় পাচ্ছে বিজেপি। ৬০ কেন্দ্রে মুসলিম ভোটাররা প্রার্থীর ভাগ্য বদল করে দিতে পারে একজোট হয়ে ভোট দিলে। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ৮৩টি কেন্দ্র নিয়ে যেখানে শিন্ডের শিবসেনা ও অজিতের এনসিপি প্রার্থী দিয়েছে।
এই ক’টি কেন্দ্র তারা হিসেবের বাইরে রেখেছে। তাদের প্রচারে সহায়তা করেছে মাওলানা নোমানির তালিকা। মাওলানা জানিয়েছেন, তিনি নাকি সব কেন্দ্র খোঁজ নিয়ে তালিকা তৈরি করে ২৭০ জন প্রার্থীকে ভোট দিতে বলছেন। সিনিয়র আইনজীবী মাহমুদ প্রাচা বলেন, নোমানির এই উদ্যোগ বিজেপি শিবিরকে মজবুত করবে। কেন-না লোকসভার ভোটের ট্রেন্ড দেখার পর সবাই মনে করছে মুসলিমরা বিজেপি জোটকে সমর্থন জানাবে না। এই সময় কোনও মাওলানার ফতওয়া দেওয়ার দরকার ছিল না। নোমানির বক্তব্য নিয়ে ‘ভোট জিহাদ’ স্লোগান তুলে হারানো জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। প্রাচা বলেন, মহারাষ্ট্রে মুসলিম নেতৃত্ব অবশ্যই সতর্ক হোক, এগিয়ে আসুক। কিন্তু শেষ সময়ে ধর্মীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
এখানে বহুবার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে বহু। সে-সময় মুসলিম নেতৃত্ব কিন্তু সজাগ ছিল না। উল্লেখ্য, মুসলিম অধ্যুষিত বহু কেন্দ্রে চতুর্মুখী লড়াই হচ্ছে। সপা, মিম, প্রকাশ আম্বেদকরের দলও প্রার্থী দিয়েছে। তাই ২০১৯-এর মুসলিম বিধায়কের ছিল ১০ সেটা এবার কমবে না বাড়বে জানা যাবে ২৩ নভেম্বর।