পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: শেখ হাসিনা নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ভাবতেই পারেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৯) যোগ দিতে গিয়ে আল–জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুধু তাই নয় তিনি এদিন আরও বলেন, তাঁর আশ্রয়দাতা ভারতও শেখ হাসিনাকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করছে। তিনি ভারতে বসে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী বলে চিৎকার করলে হবে না। বাস্তবতা কঠিন। ভারতে থেকে বাংলাদেশকে অনবরত অস্থিতিশিল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন উনি। সেখান থেকে বাংলাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন। এগুলো দেশের পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করছে। ভারত তাকে আশ্রয় দিচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু এমনটা হতে থাকলে আমরা কড়া পদক্ষেপ গ্রুহণ করব।
উল্লেখ্য, গত ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেই প্রেক্ষিতে ইউনূসকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এই মন্তব্য করেন।
হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও নির্বাচন
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে ড. ইউনূস বলেন, আইনি প্রক্রিয়া জারি রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ভারতের কাছে তার (হাসিনার) প্রত্যাবর্তন চাওয়া হবে। শুধু জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নয়, গত ১৫ বছরের সব অপকর্মের বিচার করা হবে। আরও বলেন, বিপ্লব চলাকালীন প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক-জনতা শহিদ হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১৯ হাজার ৯৩১। প্রতিদিনই তালিকায় নতুন নতুন শহিদের নাম যোগ হচ্ছে। হাসিনাকে ফেরত চেয়ে প্রতিটি হত্যার বিচার করব।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা
বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না। এই বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। তবে এটা জানি এখনও অনেক কিছু করা বাকি আছে। এই সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা স্থায়ী সরকার নই। নিয়মিত সরকার পাঁচ বছরের হয়। নতুন সংবিধানে সরকারের মেয়াদ সম্ভবত চার বছর হতে পারে। কারণ, মানুষ সরকারের মেয়াদ কম চায়।’ তবে আমাদের উদ্দেশ্য যত দ্রুত সম্ভব শেষ এই সরকার শেষ করা।’
হাসিনার আমলে দুর্নীতি প্রসঙ্গ
তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ভুরি ভুরি। যার অন্ত নেই। ওই প্রশাসনের প্রতিটি খাতেই দুর্নীতি ছিল। সরকারকে জনগণের সহায়ক হতে হবে। কিন্তু হাসিনা যা করে গেছেন এখন নাগরিকরা সরকারি অফিসগুলোকে নির্যাতনের চেম্বার হিসেবে দেখে। টোবে পুরো সরকার ব্যবস্থার সংস্কার করার কাজ চলছে। মানুষ নতুন কিছু চায়। এমনকি সংবিধানও সংস্কার হচ্ছে।
জলবায়ু প্রসঙ্গ
জলবায়ুর পরিস্থিতি এবং অতি বন্যায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান কমিয়ে আনতে সতর্কতা হিসেবে বাংলাদেশের আগাম ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, আমরা এসব সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ট্র্যাম্প ও সংখ্যালঘু নির্যাতন
ট্রাম্প ও ইউনূসের সম্পর্ক কেমন? এই ইস্যুতে ইউনূস বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর এখনও কথা হয়নি, তবে রিপাবলিকান পার্টিতে বন্ধু রয়েছে তাঁর।
উল্লখ্য, হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন ইউনুস সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন জো বাইডেন। তবে সময় বদলেছে। পালাবদল হয়েছে আমেরিকায়। ট্রাম্প সরকারের বিদেশনীতি বাংলাদেশের পক্ষে যাবে তা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন মুহাম্মদ ইউনুস। এই অবস্থায় নয়া মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে আগ্রহী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন প্রসঙ্গেও ওই সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন ইউনুস। এই ইস্যুতেই ভারতের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে তিনি বলেন, যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা পুরোপুরি অপপ্রচার ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এই অপপ্রচারের বেশির ভাগই ভারতীয় দিক থেকে আসা। সম্ভবত উত্তেজনা জিইয়ে রাখতেই এমনটা করা হচ্ছে। তবে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু হামলার ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। সেগুলো আওয়ামি লিগের নেতাদের উপর।