আহমদ আবদুল্লাহঃ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ফের ভারত-সহ বিশ্ব মিডিয়ায় শোরগোল শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিষয়টি এখন কেন্দ্রীভূত হয়েছে ওই দেশের নাগরিক ‘হিন্দুদের প্রতি অত্যাচারের বৃতান্তকে’ কেন্দ্র করে। শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর পরই গেল গেল রব উঠেছিল।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অনেক গুণাবলী থাকলেও তিনি যে নয়াদিল্লি থেকে বাংলাদেশে গিয়ে তিনটি নির্বাচনে যেভাবে ক্ষমতাসীন হয়েছেন তাতে দেখা গেছে ক্রমান্বয়ে তার দল আওয়ামি লিগ এবং তিনি গণতন্ত্রের স্বাভাবিক রীতিনীতির কোনও ধার ধারছেন না।
READ: ইস্তফা না দিলে বাবা সিদ্দিকির মতোই হাল হবে: খুনের হুমকি যোগীকে
যেকোনও প্রকারে ক্ষমতা করায়ত্ব করার বাকশালী নীতি গ্রহণ করেছে আওয়ামি লিগ। দুর্নীতি এবং বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষকে পুলিশ-র্যাব ব্যবহার করে পদানত করে রাখাই আওয়ামি লিগের নীতিতে পরিণত হয়েছিল। আর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছিল আওয়ামি লিগের প্রতি। শেষ পর্যন্ত তা বাঁধভাঙা বন্যার মতো বিস্ফোরিত হয়ে প্রবল সুনামিতে পরিণত হয়। অবস্থা বুঝে শেখ হাসিনা ও আওয়ামি লিগ নেতৃবৃ¨ ভারত ও অন্যান্য দেশে পাড়ি দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা শাসন ক্ষমতা ছাড়ার পরই কিছু মিডিয়াতে প্রচার হতে থাকে যে, এবার বাংলাদেশে হিন্দুদের অত্যাচার, হত্যা, ধর্ষণ, লুঠপাটের শিকার হতে হবে। তাদের ধর্ম পালনেও স্বাধীনতা থাকবে না। মন্দির, পুজা মন্ডপ আক্রান্ত হবে।
অর্থাৎ এটা বলার চেষ্টা হচ্ছিল যে, শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং তাদের জীবন, সম্পত্তির সুরক্ষা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বাংলাদেশের হিন্দুদের সংখ্যা এখনও মোটেই কম নয়। রয়টার্স, অন্যান্য মিডিয়া ও গবেষণা সংস্থার মতে বাংলাদেশে এখনও জনসংখ্যার ৮ শতাংশের বেশি হচ্ছে হিন্দু ও অন্য অমুসলিম সম্প্রদায়।
সংখ্যায় তারা প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষের কাছাকাছি। পৃথিবীর বহু রাষ্ট্র আছে যাদের জনসংখ্যা বাংলাদেশের হি¨ুদের সংখ্যা থেকে অনেক কম। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে বাংলাদেশের পুলিশ-প্রশাসন, সচিবালয়, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এবং সাহিত্য-সংßৃñতির অঙ্গনে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপস্থিতি সংখ্যানুপাতে অনেক বেশি।
বাংলাদেশে হিন্দুরা খুবই দুর্বল কিংবা শেখ হাসিনা না থাকলে তাদের অস্তিত্বই বিপন্ন এই ধরনের কথা সঠিক নয় বলেই অনেকে মনে করেন।
সবথেকে বড় কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে (BANGLADESH) সংখ্যালঘুদের একটা বড় সুবিধা হচ্ছে, ছোট-বড় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হলেই বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের হিন্দুদের আরও একটি ‘রক্ষাকবচ’ হল, ভারত বাংলাদেশের হিন্দু ও অমুসলিম নাগরিকদের পাশে সব সময় অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাশে থাকে। আর থাকাও উচিত। কারণ, ভারত ভাগের পর দুই দেশের সংখ্যালঘুদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তিটির নাম ‘নেহরু লিয়াকত চুক্তি’।
আর এই চুক্তির প্রতিটি শর্তকে ভারত নিজের পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করে। ভারত ভাগের ফলে দুই দেশেরই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কার কারণ ছিল। আর তার জন্যই জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের (PAKISTAN) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি এই চুক্তিটি সম্পাদন করেছিলেন। আর ভারতের কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিজেপি সমস্ত সরকারই এই চুক্তির প্রতি বিশ্বস্ত থেকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় তাদের নিজেদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেছিলেন।
কিন্তু পাকিস্তান ভেঙে দু-টুকরো হয়ে যাওয়ার পর এই চুক্তি নিয়ে পাকিস্তান আর উচ্চ-বাচ্য করেনি। শেখ মুজিবের বাংলাদেশও নেহরু-লিয়াকত চুক্তি সম্পর্কে নীরব থাকাই শ্রেয় জ্ঞান করে। সে যাই হোক, বাংলাদেশের হিন্দুরা শেখ হাসিনার লাগাতার গদিতে থাকার সঙ্গে নিজেদের নিরাপত্তাকে অঙ্গাঙ্গী ভাবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু কিছু মহল তা প্রচার করে যদিও বাংলাদেশের বেশকিছু হিন্দু সংগঠন আওয়ামি লিগের আমলেও যে তাদের উপর নৃশংস নানা ধরনের অত্যাচার হয়েছে সেই ধরনের দাবি করেন।
শেখ হাসিনার পতনের তিন মাস কেটে যাওয়ার পর ফের হিন্দু নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এসেছে। আর এই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পের একটি ট্যুইটের পর। এই ট্যুইটে ট্রাম্প দাবি করেছেন, বাংলাদেশে প্রবল হিন্দু নির্যাতন হচ্ছে। অথচ বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের মার্কিন সরকার কিছুই করছে না।
এই ট্যুইটকে ব্যবহার করে তাই বিভিন্ন মহলে তোলপাড়, শোরগোল চলছে। বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের কিছু হিন্দু সংগঠন ‘ট্রাম্প সাহেবের ট্যুইট সঠিক নয়’ বলে প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু বিষয়টি গুরুতর। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকারের ভাবমূর্তিও নির্ভর করছে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার মধ্যে। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা অবশ্যই একটি মাপকাঠি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে। হাসিনা সরকারের আমলে যা ছিল না বলে ইউনূস (YUNUS) সাহেবদের বক্তব্য। কিন্তু তাদের আমলে বাংলাদেশে কী চলছে, তার উপর নজরদারি অবশ্যই হতে হবে। (প্রথম কিস্তি)