পুবের কলম প্রতিবেদক: এখনও কলেরা মুক্ত হয়নি দেশ। বেশ কয়েকটি রাজ্যে ফের কলেরার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। কলেরা ‘ভিব্রিও কলেরা’ নামক একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ক্ষুদ্রান্তের একটি সংক্রামক রোগ। উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রে কলেরার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বাংলাকে ‘হোমল্যান্ড অফ কলেরা’ বলেও উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকেরা। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। এই অবস্থায় দেশকে কলেরা মুক্ত করতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগী হয়েছেন আইসিএমআর-নাইসেড। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে কলেরামুক্ত করার পণ নেওয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় মঙ্গলবার থেকে চালু করা হয়েছে বিশেষ ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া। ভ্যাকসিনটি নাম ‘ইউভিকল প্লাস’। দক্ষিণ কোরিয়া এই ভ্যাকসিনটি প্রস্তুত করেছে। ১৪ দিনের ব্যবধানে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ প্রয়োগ করা হবে। এর এক একটি ডোজের পরিমাণ ১.৫ মিলিলিটার। দেওয়ার পর এই ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করছে তা দুবছর পর্যবেক্ষণ করা হবে।
বাংলায় এই ‘কলেরা ভ্যাকসিন কমিউনিটি ইন্ট্রোডাকশন’ তৈরি করা হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর ২ নম্বর ব্লকে। বিষ্ণুপুর ২ নম্বর ব্লকের নাহাজারি, খাগড়ামুড়ি, বাকরাহাট এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫০ হাজার মানুষের উপর প্রয়োগ করা হবে প্রতিষেধক। তার পর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরে অন্যান্য রাজ্যেও এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
আইসিএমআর-নাইসেডের বক্তব্য অনুযায়ী, দেশ থেকে এখনও কলেরা নির্মূল হয়নি। সাধারণত বর্ষার সময় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। কলেরার ভ্যাকসিন দেশে থাকলেও তার প্রয়োগ করা হয়নি। তবে এবার মানুষের শরীরে যে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে তার নাম ‘ইউভিকল প্লাস’। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে প্রথম পর্যায় ৫০ হাজার মানুষকে দেওয়া হবে এই প্রতিষেধক। সেরোসার্ভের মাধ্যমে এর আগে ৩-৪টি রাজ্যে দেখা গিয়েছে কলেরার জীবাণু। ফলে তড়িঘড়ি বাংলায় এই উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ভ্যাকসিন কলেরা প্রবণ এলাকাগুলিতে প্রয়োগ করা হবে।
নাইসেডের তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে, কলেরাকে আটকাতে হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে পানীয় জলের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত আক্রান্ত রোগীর মলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে থাকে। সুষ্ঠু পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার অভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির মল, খাবার ও জলের সংস্পর্শে এসে খাবার ও জলকে দূষিত করে। সেই খাবার ও জল যখন কোনও ব্যক্তির শরীরে ঢুকছে তখন সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত যে কোন পরিবেশেই কলেরার জীবাণু দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে।
Read more: AMU: সংখ্যালঘু মর্যাদা ফেরাতে সংসদে পেশ প্রাইভেট মেম্বার বিল
প্রাথমিক পর্যায়ে একটি ৪০ জনের টিম তৈরি করা হয়েছে। তারাই গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে। অনেকক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথম ডোজ নেওয়ার পরেই তারা মনে করেন, দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে না। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া জরুরি। তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর দেখতে হবে ডায়ারিয়াতে কেউ আক্রান্ত হয়েছে কিনা। আক্রান্তের স্টুল পরীক্ষাও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।