উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,জয়নগর : সুন্দরবনের জয়নগর থানা এলাকা থেকে আবার মিললো প্রত্নসামগ্রী। চাষের জমিতে কোপ দিতেই সামনে বেরিয়ে এলো মহামূল্যবান সামগ্রী।
ইতিহাস থেকে জানা যায় , দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আদিগঙ্গাকে কেন্দ্র করে জলপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল একসময়। শ্রী চৈতন্য নীলাচল যাত্রা করেছিলেন এই পথেই। আর সেই পথেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল এই সব প্রত্নসামগ্রী।কিছুদিন আগে জয়নগর থানার জাঙ্গালিয়া পঞ্চায়েতের নমাজগড় এলাকায় চাষের কাজের জন্য মাটি খুঁড়তে গিয়েছিলেন কিছু চাষি। মাটিতে কোদালের কোপ পড়তেই বেরিয়ে আসে মাথার খুলি, টেরোকাটোর জিনিসপত্র, পাথরের টুকরো-সহ নানা প্রত্নসামগ্রী।
প্রত্নতত্ত্ব গবেষকদের অনুমান, এই সব জিনিস প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন।স্থানীয় সূত্রে জানা গেল , মাটি খোঁড়ার সময়ে মাথার খুলি মিলতেই ‘কঙ্কাল’ উদ্ধার হয়েছে বলে শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়। জয়নগর থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশে এসে খুলিটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ওই কঙ্কালের সঙ্গেই আরও কিছু টেরাকোটার জিনিসপত্র এবং নানা পাথরের টুকরোও পাওয়া যায় মাটির নীচ থেকে। প্রাথমিক ভাবে সে সব নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের তেমন উৎসাহ না থাকলেও খবর পেয়ে এলাকায় চলে আসেন একাধিক প্রত্নতত্ত্ব গবেষক। জিনিসগুলি খতিয়ে দেখে তাঁরা অবাক হন।সুন্দরবনের প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব গবেষক দেবীশঙ্কর মিদ্যা বলেন, “এই সব জিনিস ৭০০ থেকে দু’হাজার বছরের পুরনো। দেখে মনে হচ্ছে শুঙ্গ, কুষাণ যুগের জিনিস। এর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে।
ওই জায়গায় খোঁজ করলে আরও এ রকম জিনিস মিলতে পারে।”ইতিহাস থেকে জানা যায় ,দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আদিগঙ্গাকে কেন্দ্র করে জলপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল একসময়। শ্রীচৈতন্য নীলাচল যাত্রা করেছিলেন এই পথেই। তারও আগে যে এই পথে যাতায়ত ছিল তাঁর ও প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন সময়। গবেষকদের একাংশ মনে করছেন, ওই এলাকায় আদি গঙ্গার ঘাট ছিল। সেই সূত্রেই এই সব জিনিসপত্র এখানে পাওয়া যেতে পারে।
জনপদ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।স্থানীয় প্রত্নতত্ত্ব গবেষক সঞ্জয় ঘোষ ও উজ্জ্বল সরদার এ ব্যাপারে বলেন,কয়েকবছর আগে ওই এলাকার কাছেই ঢোষা, তিলপিতে এর আগে কুষাণ যুগের নিদর্শন মিলেছে। দু’হাজার বছর আগে এই এলাকায় জনপদ ছিলো।তাঁর প্রমাণ মিলেছে।
কিন্তু সুন্দরবনের গবেষকদের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র সংরক্ষণেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ওই এলাকায় আরও খোঁড়াখুঁড়ি নিয়েও তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এখনও পর্যন্ত।
বারুইপুরের মহকুমাশাসক চিত্রদীপ সেন এ বিষয়ে বললেন,এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য এখনও মেলেনি। তবে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।