পুবেরকলম, ওয়েবডেস্কঃ ভবানীপুরের উপনির্বাচন ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে। সকাল থেকেই সকলের চোখ সেই দিকেই। বজায় রয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। উৎসবের মরশুমে ভোট ঘিরে আলাদা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। আর সব থেকে বড় আকর্ষণের দিক এই কেন্দ্রে প্রার্থী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। বামেদের মুখ শ্রীজীব বিশ্বাস। তিন প্রার্থীই ভোটের প্রচারে ঝড় তুলেছে। এবার পরীক্ষা ব্যালট বাক্সে। ৩ অক্টোবর এই উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভোট ময়দান সর্বত্র নজর রাখছেন অর্ডিনেটাররা।
রাজ্যের তিনটি আসনে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। ভবানীপুর সহ ভোট হচ্ছে সামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে। তিনটি কেন্দ্রে মোট ৯৭৯টি বুথ রয়েছে। ১০০ শতাংশ বুথে থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। মোট ভোটার ৬ লক্ষ ৯৭ হাজার ১৬৪। এই উপর্নিবাচনে কমিশনের বিশেষ নজর ভবানীপুরের দিকে। শুধু ওই কেন্দ্রেই ভোটের দায়িত্বে প্রায় ৩৫০০ কেন্দ্রীয় বাহিনী। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
অনাদিকে মিত্র ইন্সটিটিউশনে আজ ভোট দেবেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০৯ নম্বর বুথে ভোট দেবেন তিনি। প্রতি বুথে মোতায়েন রয়েছে ৩ জন কেন্দ্রীয় বাহিনী। এছাড়াও থাকছে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। সব বুথেই থাকবেন মাইক্রো অবজার্ভার। থাকছে কুইক রেসপন্স টিম। বুথের বাইরের এলাকার দায়িত্বে কলকাতা পুলিশ। ভবানীপুরের জন্য আলাদাভাবে রয়েছেন পুলিশ পর্যবেক্ষক। এই এলাকায় ৩৮টি জায়গায় পুলিশ পিকেট রয়েছে। থাকছে, ৯টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। মোবাইল ভ্যান থাকছে ২৩টি।
৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর রতন মালাকার জানিয়েছেন, সকাল থেকে ভবানীপুরে যে লাইন দেখা যাচ্ছে তাতে মানুষ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রমুখী হচ্ছে। এটা চলতে থাকলে মার্জিন বাড়বে আমাদের।” অন্যদিকে বিজেপি নেতা সজল ঘোষ জানিয়েছেন, “মানুষ নিজে থেকেই ভোট দিতে বেরোচ্ছেন।”
তৃণমূলের দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ সজল ঘোষের। এদিকে ফিরহাদ হাকিমের দাবি, কোনও নিবার্চনী বিধিভঙ্গ করিনি। আমি মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে ভালোবাসি।
ফিরহাদ ও সুব্রত’ বিরুদ্ধে কমিশনে নালিশ বিজেপির। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন ফিরহাদ হাকিম।
ভবানীপুরের চারটি বুথে রিগিংয়ের অভিযোগ বিজেপির। রিপোর্ট চাইল নির্বাচন কমিশন।
ফিরহাদ ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নজরবন্দি কার দাবি বিজেপির।
ফিরহাদের বক্তব্য, জীবনে কোনদিন অনৈতিক কাজ করিনি। ভোটারদের কোনদিন প্রভাবিত করার কাজ করিনি। আমি আমার ক্যাম্পে কত ভোট পড়েছে তার খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেই সব ভিত্তিহীন।
এদিকে মদন মিত্র বলেন, কেউ যদি বিজেপিকে ভোট দিতে না চায়, আমি কি তাকে গলা টিকে দিয়ে বলব বিজেপিকে ভোট দাও? এটা তার নিজের ব্যাপার। পাশাপাশি মদন বলেন, নালিশ করলে বালিশ পাবে। আর নির্বাচনে জেতার পর পালিশ করে দেব।
ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ রোডে ১২৬ নম্বর বুথে বাকযুদ্ধে জড়ান বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। যদিও বুথ জ্যামের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কমিশন। অন্যদিকে মদন মিত্রের পাড়ায় শাসকদলের কর্মীদের বিরুদ্ধেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নালিশ জানান প্রিয়াঙ্কা। পাল্টা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘হেরে যাওয়ার ভয়ে এসব বাহানা তৈরি করা।’
২২৮,২২৯,২৩২ নম্বর বুথ থেকে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে তুলে দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
২২৯ নম্বর বুথে কাজ করছিল না ভিভিপ্যাট। ৪৫ মিনিট ধরে তা অকেজো বলে অভিযোগ।
১৪৪ ধারা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ভবানীপুরে সমস্ত দোকানপাট খোলা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জানান তিনি। যদিও কমিশন জানিয়ে দিল, দোকান খোলা থাকতেই পারে। তবে পাঁচজনের বেশি লোক থাকলে সরিয়ে দিতে হবে।
ভোট দিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
চেতলা অহীন্দ্র মঞ্চের সামনে সমস্ত রাস্তা জুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল।
ভবানীপুরের খালসা হাইস্কুলে তীব্র উত্তেজনা। তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি। বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের অভিযোগ, বুথে ভুয়ো ভোটার ঢোকানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি, অভিযোগ তৃণমূলের। বুথের সামনেই ওই ভোটারকে ঘিরে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ওই যুবককে ঘিরে ধরে। এদিকে চাপের মুখে ওই যুবক জানান, তিনি বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা ছিলেন। এখন ভবানীপুরে থাকেন। পাশাপাশি ওই যুবক দাবি করেন, সে তার আইডিটি বাড়িতে ফেলে এসেছে। কার্ড বাড়ির লোককে আনতে বলছেন। এদিকে বিজেপি প্রার্থী প্রশ্ন তোলেন, আইডি কার্ড ছাড়া বুথে একজন ভোটার কিভাবে এলেন?
এই ঘটনায় মদন মিত্র প্রশ্ন তোলেন, কিভাবে এই ঘটনায় তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে? ওই যুবক কি বলেছে সে তৃণমূলের হয়ে ভোট দিতে এসেছে? মদন মিত্রের দাবি, বিজেপিই ওই ভোটারকে নিয়ে এসেছে। এদিকে এই গোটা ঘটনায় রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের।
ভবানীপুর উপনির্বাচনে ভোটার প্রায় ২ লক্ষ ৬ হাজার। এর মধ্যে সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় ২২ শতাংশ। ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড মূলত সংখ্যালঘু প্রধান। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ২৮ হাজারের মধ্যে তৃণমূলকে প্রায় ২২ হাজার ভোটের লিড দিয়েছিল এই ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডই। তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জিতেছিলেন, ২৮ হাজার ৭১৯ ভোটে।
অন্যসিকে ধূলিয়ান পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের কো অর্ডিনেটের হাবিবুর রহমান ওরফে জোহরকে লাথি মারার অভিযোগ কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। বৃদ্ধ কাউন্সিলরের দাবি, তিনি শুধু ভোটারদের কথা মতো মাস্ক দিতে গিয়েছিলেন তাঁদের। সে সময় পিছন থেকে তাঁর কোমরে লাথি মারেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়।
সামশেরগঞ্জ ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২৭, ২৮ ও ২৯ নম্বর বুথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।
কংগ্রেস এবং তৃণমূল একে অপরের আঙুল তোলে।
এলাকায় উত্তজনার সৃষ্টি করে ভোট বানচালের চেষ্টার অভিযোগ একে অপরের বিরুদ্ধে।
এরই মধ্যে মানবিক মুখ ধরা পড়ল। জঙ্গিপুর বিধানসভার ১৮৬ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ১০০ বছরের এক বৃদ্ধাকে কোলে তুলে এবং স্ট্রেচারে করে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন। ওই বৃদ্ধার নাম সার্জু বিবি। বাড়ি রঘুনাথগঞ্জ থানার আইলের উপর এলাকায়। কেন্দ্রীর বাহিনীর ব্যবহারে খুশি তার বৃদ্ধার পরিবার। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিও কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই কাজের প্রশংসা করেছে।
দুপুর ১ টা পর্যন্ত ভবানীপুরে ভোট পড়েছে ৩৬ শতাংশ, জঙ্গিপুরে ৫৪ শতাংশ, সামশেরগঞ্জে ৫৭ শতাংশ।
সকাল থেকেই ভবানীপুরের ভোটকেন্দ্রগুলিতে ভোটারদের সুবিধে অসুবিধের খোঁজ নিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে বুথে বুথে ঘুরছেন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। অন্য গিকে জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেনও বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ঘুরে দেখেছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট দেওয়ার উৎসাহ দেখে খুশি তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেন।
ভবানীপুরের বিজেপির ১৫১, ১৬০, ১৬২, ১৭২ নম্বর বুথে রিগিংয়ের অভিযোগ বিজেপির। বিজেপির অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই, জানাল নির্বাচন কমিশন । ভবানীপুরের ভোটে রিগিংয়ের অভিযোগ তুলেছে সিপিএমও। তৃণমূলের বিরুদ্ধে রিগিংয়ের অভিযোগ । রিগিংয়ের অভিযোগ ওড়াল তৃণমূল কংগ্রেস।
ভবানীপুরের স্থানীয়দের অভিযোগ, বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল একসঙ্গে অনেক গাড়ি নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তমানুষকে ভোট দিতে দিচ্ছে না। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় অশান্তি। কেন্দ্রীয় বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিজেপির ওঠা ভুয়ো ভোটার ও রিগিংয়ের অভিযোগ খারিজ করে দিল নির্বাচন কমিশন।তবে সমস্ত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
দুপুর ২.১৫ নাগাদ স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে চেতলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভোট দিলেন ফিরহাদ হাকিম।
বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভবানীপুর কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৫৩.৩২ শতাংশ, সামশেরগঞ্জ ৭৮.৬০, জঙ্গিপুরে ৭৬.১২ শতাংশ।