পুবের কলম প্রতিবেদকঃ অসমে পুলিশ-প্রশাসনের মদতে হওয়া গণহত্যার বিরুদ্ধে এই প্রথম কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরব হলেন। বিজেপিকে ‘ড্রাগন’ আখ্যা দিয়ে তীব্র আক্রমণ করে বললেন– ‘ড্যান্সিং ড্রাগনের মতো ডেডবডির উপর নাচছে। লজ্জা করে না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখন কোথায় মানুষের প্রতি এতটুকু সম্মান নেই? অসমে মানবাধিকার চলে গেলেও সেখানে মানবাধিকার কমিশন যায় না।’ নির্বাচনী প্রচারে রবিবার যদুবাবুর বাজার মঞ্চ থেকে ঠিক এই ভাষাতেই বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে মানবাধিকার হত্যার বিরুদ্ধে সরব হলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অসমে পুলিশের গুলিতে নিহত মুসলিমের দেহের উপর যেভাবে এক সরকারি ফটোগ্রাফার লাথি মেরেছে– তার উপর লাফিয়ে উঠেছে তার সমালোচনা করেই এই তোপ মমতার।
তাঁর কথায়– ‘বিজেপি তো ড্যান্সিং ড্রাগন। অসমে মৃতদেহর উপরে উঠে নাচছে। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের কাজ। নাকি তাদের শোভা পায় অসমের পাশাপাশি টেনে আনলেন– গুজরাত– উত্তরপ্রদেশ– ত্রিপুরার প্রসঙ্গও। বললেন– বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে মানুষ মুখ খুলতে পারে না। গুজরাতের মতো একটি রাজ্যকে সর্বনাশ করে দেওয়া হচ্ছে। করোনাকালে উত্তরপ্রদেশে যেভাবে মৃতদেহ গঙ্গায় ভাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে তারও তীব্র সমালোচনা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন– বিজেপি খুনের রাজনীতি করে। তৃণমূল ভয় পায় না। তাই লড়াই করতে জানে। দিল্লি দাঙ্গায় কতজন নিহত হল তার কোনও হিসাব নেই। আমরা মানুষের ধর্ম দেখি না। আমাদের কাছে সব ধর্মের মানুষ সমান। বিজেপি মানুষকে ভালবাসে না। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
তার সমালোচনা করে তৃণমূল নেত্রী বলেন– ‘‘একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন– ‘কোর্ট কি করবে? এখানে তো আমরাই সব।’ এই ধরনের মন্তব্যের জন্য ডিফেমেশন (মানহানি) কেস করতে পারে তাঁর বিরুদ্ধে। আমার কাছে এই ভিডিয়ো এসেছে। আমি আপনাদের দেব। অথচ– অভিষেক ত্রিপুরায় গেলে ১৪৪ ধারা জারি হয়। ভাবুন একবার। ১৪৪ ধারা দিয়ে অভিষেককে আটকাচ্ছে। আর এখানে বহিরাগতরা এসে উস্কাচ্ছে। এটাই বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির গণতন্ত্রের নমুনা।’’ এরপরই বাংলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন– ‘বাংলা সবথেকে শান্তির জায়গা। তাই বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যাওয়ার ডাক আসে। কিন্তু– হিংসুকরা বলল যাওয়া যাবে না।
রোমে যেতে না দিলেও এখান থেকে শান্তির আবেদন করব। সব সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক যেন টিকে থাকে। বাংলাকে তাই শান্তি সম্মেলনে ডাকে। আর বলে দেওয়া হয় যাওয়া যাবে না। আনফিট। কে বলে দেবে আনফিট না ফিট এরআগে শিকাগোতে– কেমব্রিজে– চিনে যাওয়ার আমন্ত্রণ এসেছিল। কিন্তু– কোথাও যেতে দেয়নি। সব বন্ধ করে দিয়েছে। দেখি ওরা কত আটকাতে পারে। আটকাক। আমরা এমনিই যেতে পারতাম। তবু আমরা একটা প্রোটোকল মেনে চলি। প্রোটোকল মেনেই অনুমতি (বিদেশ মন্ত্রকের কাছ) চেয়েছিলাম।’ ভবানীপুরকে ‘মিনি ভারতবর্ষ’র সঙ্গে তুলনা করে মমতা বলেন– ‘ভবানীপুর ছোটখাটো ভারতবর্ষ। এখানে হিন্দু– শিখ– জৈন– পার্সি– খ্রিস্টান—সবধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করেন। আর এখান থেকেই নতুন লড়াই শুরু হচ্ছে। এবার ভারতবর্ষের প্রতিটি কোনায় কোনায় পৌঁছে যাব।