পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ফের দুর্যোগের ঘনঘটা। সামুদ্রিক ঝড় ‘গুলাব’ ক্রমশই শক্তি বাড়িয়ে আছড়ে পড়বে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা জারি করেছে নবান্ন। জেলা শাসকদের উপকূলবর্তী এলাকায় পৌঁছে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ। সামুদ্রিক ঝড় গুলাব মূলত আছড়ে পড়বে ওড়িশার উপকূলবর্তী জেলা কলিঙ্গপত্তনমে। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় গুলাবের রেশ পড়বে অন্ধ্রপ্রদেশের ও পশ্চিমবঙ্গের সামুদ্রিক উপকূলবর্তী জেলাগুলিতেও। কলিঙ্গপত্তনমের সমুদ্র থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত নিচু এলাকার মানুষদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ওড়িশা সরকার।
এদিকে দিঘার সমুদ্র সৈকতে যান পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ও পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। সমস্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন তারা। এই ঘূর্ণাবর্তের জেরে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই চলবে বর্ষণ-ভোগান্তি। এমনিতে এই মুহূর্তে জোড়া নিম্মচাপের ভ্রুকুটিতে আতঙ্কিত রাজ্যবাসী। বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার মানুষ। গোদের উপর বিষফোঁড়া হতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’। এর নামকরণ করেছে পাকিস্তান।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা-সহ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। দিঘা– মন্দারমণি-সহ জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় চলছে মাইকে প্রচার। রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়। যে সব মৎস্যজীবী ইতিমধ্যেই সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছেন– তাদের দ্রুত তীরে ফিরে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার থেকে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে পটাশপুর– ভগবানপুর– এগরা– চণ্ডীপুর এলাকায়। এই এলাকাগুলি ইতিমধ্যেই গত কয়েক দিন ধরে কেলেঘাইয়ের জলে মগ্ন। এর উপর ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে শনিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মেঘের আনাগোনা শুরু হওয়ায়। এমনকী কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিও।
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাজি জানিয়েছেন– ‘পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে। কেলেঘাই নদীর যে অংশে বাঁধ ভেঙেছে তা দ্রুত মেরামতি হচ্ছে। বানভাসি এলাকাগুলিতে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠানোরও ব্যবস্থা হচ্ছে।’
রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা মহাপাত্র জানিয়েছেন– ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর পেয়ে দ্রুত প্রশাসনিক বৈঠক করা হয়েছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী যে সব এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা– সেখানে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। সমুদ্র-বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলিতে বেশি পরিমাণে ব্ল্যাকস্টোন ফেলা হয়েছে। দিঘা– রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতি– পদিমা-১ এবং দুই– তালগাছাড়ি-২ পঞ্চায়েতেও কন্ট্রোলরুম খোলা হচ্ছে।’
প্রশাসনিক আশ্বাসের পরেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর– ভগবানপুর– রামনগর প্রমুখ এলাকার মানুষের আতঙ্ক যেন দূর হচ্ছে না। এমনিতেই গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এখনও বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত। তার উপর ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’-এর আশঙ্কা বাড়াচ্ছে দ্বিগুণ আতঙ্ক।
অন্যদিকে– ঘূর্ণিঝড় গুলাব ও ঘূর্ণাবর্তের জোড়া ফলার মোকাবিলায় তৎপর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। বিশেষ করে সুন্দরবনের প্রত্যেকটি ব্লকের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়– উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরানোর পাশাপাশি তাদের জন্য পর্যাপ্ত জল– শুকনো খাবার– রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সাপের কামড়ে যাতে কোনও প্রাণনাশ না ঘটে সে কথা মাথায় রেখে ঔষধ ও চিকিৎসক দলও মজুত। এছাড়া প্রসূতিদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি পঞ্চায়েতে শুকনো খাবার– তার্পোলিন মজুত করা হয়।সেচ– বিদুৎ ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের বিশেষভাবে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক পি উলগানাথন। রবিবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্র বা নদীতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের ২৫ সদস্যের একটি দল কাকদ্বীপ পৌঁছে গিয়েছে। পাশাশাশি ভারী বৃষ্টি দুর্যোগে মোকাবিলায় সতর্কতা জারি হাওড়াতেও। পুরসভায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। হেল্পলাইন নম্বরগুলি হল— ৬২৯২২৩২৮৭০ এবং ৬২৯২২৩২৮৭১।