পুবের কলম প্রতিবেদক: ভবানীপুরে জোড়া নির্বাচনী সভা থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ সপ্তমে নিয়ে গেলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে একবালপুর ও পরে চেতলার সভা থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে হুংকার ছেড়ে তিনি বলেছেন– ‘দেশে কিছুতেই তালিবানি শাসন চালু করতে দেব না। দেশকে টুকরো-টুকরো করার চেষ্টা সফল হতে দেব না। গোয়া– অসম– ত্রিপুরা— সর্বত্র খেলা হবে। দেশ থেকে বিজেপিকে তাড়িয়ে ছাড়ব।’
২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে রাজ্যে পালাবদলের পরে ভবানীপুর থেকে উপনির্বাচনে দাঁড়িয়ে প্রথম বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন ভবানীপুরকে বেছে নিয়েছিলেন তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন– ‘আমি এখানেই ছোট থেকে বড় হয়েছি। মা একদিন বলেছিলেন– তুই এখানে একবার দাঁড়াতে পারিস তো। আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন? মা বলেছিল– তাহলে আমি তোকে একটা ভোট দিতে পারি। আমারও তো আমার মেয়েকে ভোট দিতে ইচ্ছে করে।’ সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর থেকে সরে গিয়ে নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। যদিও নন্দীগ্রামে বিজেপি প্রার্থীর কাছে হারতে হয়েছিল তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার জন্য ফের ভবানীপুর আসনে লড়তে হচ্ছে। এই লড়াইয়ের পিছনে ঈশ্বরের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কিছুটা আবেগাপ্ল$ত হয়ে তিনি বলেন– ‘আসলে নিয়তির ফের। আমার কপালে লেখা আছে মুখ্যমন্ত্রী হলে ভবানীপুর থেকেই হব। আমার ঈশ্বর– আমার আল্লাহর তাই ইচ্ছে। এর আগে ৬ বার দক্ষিণ কলকাতা থেকে লড়েছি। প্রত্যেকবার আপনাদের ভোটই আমাকে জিতিয়েছে।’
নন্দীগ্রামে তাঁর হার নিয়ে এ দিন ফের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়– ‘এবারের বিধানসভা ভোটে কৃষক আন্দোলনের জায়গা বলে নন্দীগ্রাম থেকে আমাকে দাঁড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। ভবানীপুর ছেড়ে তাই নন্দীগ্রামে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে আমাকে ষড়যন্ত্র করে হারানো হয়েছে। ওখানে কীভাবে হারানো হয়েছে– তা ভাবতেও পারবেন না। শুনলে ভয় পাবেন। আদালতে মামলা চলছে। আমাকে কীভাবে ওখানে হারানো হয়েছে তা একদিন প্রকাশ্যে আসবে।’
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনের দিন প্রতিটি ভোটার যাতে বুথে যান– সেই আর্জিও জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন– ‘অনেকেই ভাবছেন– দিদি এমনিতেই জিতে যাবে। কেন আবার ভোট দিতে যাব। কিন্তু দোহাই– ওই ভাবনা ভাববেন না। ঝড় হোক– জল হোক– বৃষ্টি হোক– আপনারা অবশ্যই ভোট দিতে যাবেন। আপনাদের প্রতিটি ভোট আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। একটা ভোট না পেলেও আমার ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি না জিতলে তৃণমূলেরই অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবে। আমাকে আর পাবেন না।’ সেক্ষেত্রে কে কেন্দ্রের নোটবন্দির বিরুদ্ধে লড়বে? সিএএ– এনআরসি’র বিরুদ্ধে লড়বে? আমরা বিজেপিকে কোনও ক্যা-ক্যু করতে দেব না। এনপিআর-এর নাম করে এনআরসি করা হচ্ছে। আমরা এ সব হতে দেব না।
বিজেপির বিরুদ্ধে যে আপসহীন লড়াইতে তিনি নেমেছেন– সেই লড়াইতে সাধারণ ভোটাররাই তাঁকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারেন বলেও এ দিন জানান তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়– ‘আপনাদের একটা ভোট আগামী দিনে দিল্লির পথে পা বাড়াতে সাহায্য করবে। আপনাদের ভোট দাঙ্গাবাজদের রুখে দিতে সাহায্য করবে।’
বাংলায় গণতন্ত্র নেই বলে লাগাতার চিৎকার করে চলেছেন বিজেপি নেতারা। অথচ বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় কীভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসূচিতে লাগাতার বাধা দেওয়া হচ্ছে– এ দিনের সভায় সেই প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন– ‘ত্রিপুরায় তৃণমূলকে আটকাতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলায় যাঁরা দুর্গাপুজো করতে দেওয়া হয় না বলে অপপ্রচার করে চলেছেন– তাঁরাই এখন ত্রিপুরায় দুর্গাপুজো– কালীপুজোর সময়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। তাহলে ওই রাজ্যে কবে দুর্গাপুজো– কালীপুজো হবে? বাংলায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করা হচ্ছে। অথচ উত্তরপ্রদেশে কোভিডে মারা গেলে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়?
করোনার ভ্যাকসিন শংসাপত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি থাকা প্রসঙ্গ তুলেও কটাক্ষ হেনেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কটাক্ষের সুরে বলেন– ‘করোনার ভ্যাকসিন নিলে নাকি সার্টিফিকেটে মোদির ছবি থাকবে। যদি তাই হয়– তাহলে ডেথ সার্টিফিকেটে কেন প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকবে না?
বিজেপিকে যে বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না– তাও এ দিন স্পষ্ট করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়– ‘নরেন্দ্র মোদিদের ভাইদাদা বলে সম্ভাষণ করি– এটা আমাদের সৌজন্য। কিন্তু তাই বলে দেশে তালিবান রাজত্ব করতে দেব না। দেশকে টুকরো হতে দেব না। গোটা দেশেই বিজেপির সঙ্গে লড়ে যাব। সর্বত্র খেলা হবে। ওরা (বিজেপি) যদি বুনো ওল হয়– তাহলে আমরাও বাঘা তেঁতুল। এই ভোট মিটে গেলেও অন্য রাজ্যে ঝাঁপাব। খেলাও হবে– দিল্লি দখলও হবে।’