আজ সকাল থেকেই চলছে বৃষ্টি। কিন্তু সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও টানা ৩৫ দিন ধরে আন্দোলন করে চলেছেন আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কিন্তু পরিবেশ অনেকটা স্বাভাবিক হয়, যখন আন্দোলনের সভাস্থলে হঠাৎ করে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা একটু ধৈর্য্য ধরে আমার কথা শুনে নাও। আমি এখানে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে না, আমি তোমাদের দিদি হয়ে এসেছি। তোমরা আমার উপর ভরসা রাখো। আমিও তিলোত্তমার বিচার চাই। দোষীরা শাস্তি পাবেই। তোমরা ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নাও। কারণ আমাদের জীবনে তোমাদের খুব প্রয়োজন।
মুখ্যমন্ত্রী যাওয়াতেই চিকিৎসকেরা তার আসাকে সদর্থক বলে মেনে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ আলোচনা মাধ্যমে ঠিক করে। গোটা রাজ্যবাসীর মনে আজ আশার আলো জেগেছিল। সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে চিকিৎসকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনার হওয়ার কথা হয়, সেই মতো ১৫ জনের অনুমোদন থাকলেও ৩৪ জন চিকিৎসকের প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কিন্তু বৃহস্পতিবারের পুনরাবৃত্তি হল শনিবার। অর্থাৎ বৈঠক হল না, ভেস্তে গেল বৈঠক।
লাইভস্ট্রিমিংয়ের দাবি ছেড়ে কোনওরকম ভিডিয়ো ছাড়াই বৈঠকে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। এমনই দাবি করলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, তিনঘণ্টা সময় পার হয়ে গেছে। আর সময় দেওয়া যাবে না। তাদের বাসে করে ফিরে যেতে বলা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তারা খুব হতাশ। আবার তারা সল্টলেকে ধরনা মঞ্চের কাছে ফিরে যাচ্ছেন। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হবে। যদিও বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্দিষ্টভাবে কোনও অভিযোগ করেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। এদিন তারা জানান, বৈঠকের জন্য সদিচ্ছা নিয়েই তারা এসেছিলেন, কিন্তু বৈঠক না হওয়ায় তাদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে। তবে তারা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি ডাকেন তাহলে তারা আবার বৈঠকে বসতে রাজি আছেন। তবে সেই সঙ্গে তারা জানিয়ে দেন, তাদের এই আন্দোলন চলবে।
বৃহস্পতিবারের পরে শনিবারের প্রস্তাবিত বৈঠকেও ভিডিয়ো নিয়ে জট তৈরি হয়। প্রাথমিকভাবে জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি করেন যে বৈঠকের লাইভস্ট্রিমিং করতে হবে। যদিও তাতে রাজি ছিল না রাজ্য সরকার। কয়েক দফায় আলোচনা করেও সমাধানসূত্র না মেলায় ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখার প্রস্তাব দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তারা দুজন ভিডিও গ্রাফার নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এটা রেসিডেন্সিয়াল এলাকা এখানে প্রথমত লাইভ স্ট্রিমিং সম্ভব নয়। আর সরকারের পক্ষ থেকে ভিডিয়োগ্রাফি করা হবে। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন। তাই এই ভিডিয়ো রেকর্ডিং মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরে দেওয়া হবে। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানরক্ষার্থে তারা তাঁর কথাতে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু তখন বৈঠকের কথা বলতে গেলে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তাদের জানিয়ে দেন, তার সময় দেওয়া যাবে না।