গাজা, ২৯ আগস্ট: গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৭০ জন শহিদ হয়েছে ইসরাইলি হানায়। মোট নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ছুঁতে চলেছে। গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ থেমে নেই। এবার ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও জোরদার হামলা শুরু করেছে যায়নবাদীরা।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বুধবার ভোরে এক ঘোষণায় জানায় যে, তারা জেনিন, তুলকারেম ও তুবাসসহ পশ্চিম তীরের উত্তরে কয়েকটি শহর ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে ‘অভিযান’ শুরু করেছে। এ আক্রমণের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সামার ক্যাম্পস’।
ইসরাইল এই অভিযানকে ২০০২ সালে ‘অপারেশন ডিফেন্সিভ শিল্ড’র পর গত ২০ বছরের মধ্যে এই ধরনের সবচেয়ে বড় আক্রমণ বলছে। শত শত সেনা এই অভিযানে অংশ নিয়েছে। এতে নজরদারি বিমান, হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হচ্ছে। বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংসের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে অসংখ্য বুলডোজার।
ইসরাইলি বাহিনী জেনিন, তুবাস ও তুলকারেম শহরে অবরোধ আরোপ করেছে। শহরের ভেতরে ও বাইরে যাওয়ার ছোট-বড় সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিরোধ যোদ্ধারা অবস্থান করছে এমন তিনটি শরণার্থী শিবিরে আক্রমণ করার জন্য শত শত সেনা জড়ো করা হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্স সেবাদানকারীদের কাজ বাধাগ্রস্ত করছে। ড্রোন বা বিমান হামলা করে তাদের আহতদের কাছে পৌঁছাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
প্যালেস্টাইন অথরিটির (পিএ) প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে ইসরাইলের এই পরিকল্পিত হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, এই হামলা ‘ভয়াবহ ও বিপজ্জনক’ পরিণাম সূচনা করতে পারে। হামলার কারণে পিএ প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সউদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফিরেছেন। পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবির ও শহরগুলোতে বছরের পর বছর ধরে প্রায় প্রতিদিনই ইসরাইলি হামলার ঘটনা ঘটছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে তা আরও তীব্রতর হয়েছে। গত ১০ মাসে পশ্চিম তীরে ৬৬২ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন। তবে বুধবার হঠাৎ করে যে বড় আক্রমণ শুরু হয়েছে তার সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পশ্চিম তীরে নতুন করে ফিলিস্তিনি আন্দোলন গড়ে উঠেছে। গত ১৯ আগস্ট ইসরাইলের রাজধানী শহর তেল আবিবে একটি আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। হামাস জানায় তারা এই হামলা চালিয়েছে। ওই আত্মঘাতী হামলা ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পশ্চিম তীরের ক্ষমতায় থাকা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) আস্তে আস্তে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিম তীরের উত্তরে ফিলিস্তিনিদের একটা নতুন প্রজন্মের উত্থান ঘটেছে। যারা তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য ও কৌশলে আন্দোলন-সংগ্রামকে এগিয়ে নিচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের নেতৃত্বে উগ্রপন্থিরা ইসরাইলকে পশ্চিম তীরে দখলদারি আরও বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা একে এই অঞ্চলের ভূমি সম্পূর্ণভাবে দখল করার এবং ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।