মোল্লা জসিমউদ্দিন: শিক্ষক নিয়োগ মামলায় বুধবার গুরত্বপূর্ণ রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। ১৪ হাজার ৫২টি পদে নিয়োগের নির্দেশ দিল আদালত। এর পাশাপাশি, মেধাতালিকা থেকে বাদ ১ হাজার ৪৬৩ যুক্ত করে নতুন মেধাতালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সঙ্গে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং করে এসএসসিকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। আর তার পরের ৪ সপ্তাহে কাউন্সেলিং করে ১৪০৫২ শূন্যপদে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হল কলকাতা হাইকোর্টের তরফে। আদালত সুত্রে প্রকাশ, উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকার টেট বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে। সেই সময় ৭ থেকে ৮ লাখ পরীক্ষার্থী বসেন টেট পরীক্ষায়।
২০১৫ সালেই ফল প্রকাশ হয় উচ্চ প্রাথমিক টেটের। এসএসসি উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় ২৩.০৯.২০১৬ তারিখে। ১৪৩৩৯ শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালে টেট ফলপ্রকাশ হয় আর নিয়োগের জন্য ভেরিফিকেশন হয় ২০১৯ সালে। এ নিয়ে প্রচুর অভিযোগে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। অভিযোগ ওঠে, ফর্ম ফিলআপ না করেই, টেটের নম্বর বাড়িয়ে ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছে। নম্বর বিভাজন প্রকাশ না করেই মেধাতালিকা প্রকাশ করার অভিযোগের পাশাপাশি পরীক্ষায় না বসেই ভেরিফিকেশন এবং ইন্টারভিউ হয় ১১ ডিসেম্বর ২০২০ সালে। এই মামলায় তৎকালীন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য পুরো মেধাতালিকা বাতিলের নির্দেশ দেন। নতুন করে ভেরিফিকেশন পর্ব থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর জুন ২০২১-এ, নতুন করে ইন্টারভিউ লিস্ট প্রকাশ পায়। এই নতুন ইন্টারভিউ লিস্টকে চ্যালেঞ্জ করেও ফের মামলা হয়। সে-সময় তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নম্বর বিভাজন-সহ ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশ করতে নির্দেশ দেন এবং বাকি অভিযোগ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে খতিয়ে দেখে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। এরপর মামলা পৌঁছয় ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগ স্থগিতাদেশ দেয়। নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট।
ইন্টারভিউ তালিকায় ১৪৯২ জনের ভুল ধরে এসএসসি, তাদের ইন্টারভিউ তালিকা থেকে নাম বাদ যায়। এবার মামলা আসে তৎকালীন বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, কাউন্সেলিং চলবে তবে চাকরিতে নিয়োগ করা যাবে না আদালতের অনুমতি ছাড়া। এর মাঝে ৮৯০০ জনের কাউন্সেলিং সম্পূর্ণ হয়।
মামলার একাংশ আইনজীবী ভিষক ভট্টাচার্য, সুবীর সান্যাল এবং প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংরক্ষণ জনিত অসঙ্গতি, শূন্যপদ ঘোষণার ক্ষেত্রে অনিয়মানুবর্তিতা এবং পুনর্মূল্যায়ন সংক্রান্ত ত্রুটি নিয়ে সওয়াল করেছেন প্রধানত। অবশেষে ৮ বছর পর রাজ্যে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে আইনি জট কাটল। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ ১৪,০৫২ জনকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সুপারিশপত্র তুলে দিতে নির্দেশ দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। আদালত জানিয়েছে ৮ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে গোটা প্রক্রিয়া।