Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন

শতায়ু প্রবীণ শিক্ষককে স্কুলে এনে জন্মদিন পালন প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের

Bipasha Chakraborty

Published: 01 July, 2024, 07:27 PM
শতায়ু প্রবীণ শিক্ষককে স্কুলে এনে জন্মদিন পালন প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের


ইনামুল হক,বাদুড়িয়া: 'বিএ, এমএ পাস করার পর জীবনের বৃহত্তর পটভূমিকায় এসে মানুষ অনেক কিছু ভুলে যায় কিন্তু ভোলা যায় না পাঠশালার গুরু মশায়ের সেই স্মৃতি'-সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্যের এই উদ্ধৃতিটি যে কতটা সত্য তা দেখা গেল শতায়ূ প্রবীণ শিক্ষককে বিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে জন্মদিন উদযাপনে। বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তি পুরোপুরি বিলুপ্ত না হলেও নিজে থেকে চলাফেরা করতে পারেন না। তাই হুইল চেয়ারে ভর দিয়ে নিজের কর্ম ক্ষেত্রটিকে আরেকবার দুচোখ ভরে দেখার জন্য বর্তমান শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের আহ্বানে স্কুলে চলে এলেন ১০৫ বছরের প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল গনি সাহেব।

 

প্রবীণ এই শিক্ষকের ১০৫ তম জন্মদিন পালন করলো বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর এই অভিনব উদ্যোগকে কেন্দ্র করে সোমবার বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক অভিভাবিকা ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের আনন্দ উদ্দীপনায় মুখরিত হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার  বাদুড়িয়া চক্রের উত্তর দিয়াড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।

উদ্যোক্তা প্রাক্তন ছাত্র গৌতম গুপ্ত থেকে শুরু  করে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সোয়েব আলী সকলে মিলে বর্ষীয়ান অবসরপ্রাপ্ত মাষ্টার মশাই এর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কেটে মুখে তুলে দিলেন। তাঁরা বলেন, সামাজিকভাবে বড় হয়ে ওঠার চেয়ে শিক্ষাগুরু হিসেবে সম্মান নিয়ে বড় হয়ে ওঠা অনেক বেশি গুণ গর্বের। ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক আজকের দিনে যে জায়গায় এসে পৌঁছেছে তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রবীণ শিক্ষকদের এইভাবে মনে রেখে সম্মান জানানোটা খুবই প্রয়োজন। ৩০ বছর আগে অবসর নেওয়া এই শিক্ষককে যে ছাত্ররা মনে রেখেছে সেজন্য তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন।

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন তাদের প্রকৃত মানুষ  হয়ে ওঠার জন্য। ইছামতির  তীর ঘেঁষা তারাগুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল গনি ইংরেজ শাসন আমল থেকে তার কর্মজীবন কাটিয়েছেন এই উত্তর দিয়াড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।দীর্ঘ সময়ে তার হাত ধরে প্রাথমিকের পাঠ নিয়ে বেরিয়ে গেছে শত শত ছাত্র-ছাত্রী।  কবি কালিদাস রায়ের কথায় "মালিকা পরিলে গলে, প্রতি ফুলে কেবা মনে রাখে।" প্রকৃতির নিয়মে গনি সাহেব ছাত্র ছাত্রীদের কথা আজ আর স্মৃতিচারণ করতে না পারলেও তার হাতে গড়া শিক্ষার্থী গৌতম গুপ্ত, মাধবরা যে তাদের ভালোবাসার শ্রদ্ধার গুরু মশাইকে আজও ভোলেনি তার নমুনা দেখা গেল এ দিন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। প্রিয় শিক্ষককে মানপত্র, পুষ্পস্তবক ও উপহার সামগ্রী দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। প্রাক্তন ছাত্রদের তরফ থেকে এদিন ১০৫ টি পেয়ারা গাছের চারা বিতরণ করা হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে একটি করে কেক ও একটি করে পেয়ারা গাছ দেওয়া  হয়। বিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা নাচে, গানে, ব্যায়াম জিমনাস্টিকের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটিকে মাতিয়ে তোলে।

Leave a comment