Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন

হস্টেলে হত্যাঃ আসল অপরাধীরা কোথায়, চরম অর্থকষ্টে ইরশাদের পরিবার

আবুল খায়ের

Published: 08 July, 2024, 04:06 PM
হস্টেলে হত্যাঃ আসল অপরাধীরা কোথায়, চরম অর্থকষ্টে ইরশাদের পরিবার

 

 

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশন থেকে পাঁচ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। বেলগাছিয়া মডেল বস্তির ১/৭ ইউ, জীবন কৃষ্ণ ঘোষ রোডের এক চিলতে রঙচটা ঘর। সেই ঘরে দিনের আলো এমনিতেই পৌঁছায় না। সেখানেই ইনসাফের অপেক্ষায় দিনগুজরান করছেন গণপিটুনিতে নিহত ইরশাদ আলমের স্ত্রী সালমা খাতুন। স্বামীর মৃত্যুর পর বর্তমানে নাবালক দুই সন্তান এবং বিধবা ননদকে নিয়ে তার সংসার। সাংবাদিক এসেছে শুনেই কান্না ভেজা গলায় জিজ্ঞাসা করলেন- ইনসাফ কবে পাবো?

রবিবার দুপুরে মৃত ইরশাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বৃষ্টির পানিতে ভেজা ঘরের দুয়ার। মায়ের পাশে এসে দাঁড়াল সদ্য পিতৃহারা পুত্র ও কন্যা। ঝমঝমে বৃষ্টি একটু থামলেও অঝোর ধারায় অশ্রুপাত করছে সালমা। তারা গলায় এখন শুধুই উদ্বেগ। অবাঙালি এই মহিলা পুবের কলমকে জানালেন, বর্তমানে প্রতিবেশিদের সাহায্যে চলছে। কিন্তু সে আর কত দিন। সালমা বলেন, ৩ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর দেবিকা চক্রবর্তী ঘটনার ছয় দিন পরে এসেছিলেন। পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। গণপিটুনিতে নিহতদের জন্য  সরকার ক্ষতিপূরণ এবং চাকরি ঘোষণা করেছে। কিন্তু কবে সে সব মিলবে তার কিছুই তিনি জানেন না এখনও। বছর পঞ্চাশের বিধবা বোন মদিনা বেগম জানালেন, আমাদের পরিবারের প্রতি খুব অন্যায় হয়েছে। আমার ভাইয়ের দুই সন্তানের এখন কী হবে? মদিনা বেগম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানান, অপরাধীদের যেন কঠোরতম সাজা হয়। অন্যদিকে ইরশাদের প্রতিবেশি আব্দুল রহমান গনি বলেন, ইরশাদ খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কোনও দিন কারোর সঙ্গে ঝুট ঝামেলায় জড়াতেন না। ছেলে মেয়েদের নিয়ে থাকতেন। চাঁদনিতে দোকানে কাজ করত। সকাল ছ’টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত। গাড়ি ধোয়া বা এই ধরনের কাজ করত দু পয়সা বেশি ইনকামের জন্য। রাত্রি ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরত। খেটে খেত। গোটা মহল্লা জানে সে খুব ভালো লোক ছিল। গনি বলেন যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটাল তারা যেন কঠোর সাজা পায়। পাশাপাশি তিনি বলেন, আমরা সাবাই চাই তার ইরশাদের পরিবার  ক্ষতিপূরণের টাকাটা যেন তাড়াতাড়ি পায়।

প্রসঙ্গত, উদয়ন হস্টেলে ছাত্রদের হাতে গণপ্রহারে নিহত ইরশাদের বোন মদিনা বেগম আগে বিধবা ভাতা পেলেও বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে যায়। এই বিষয়টি জানার পর পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান স্থানীয় কাউন্সিলর দেবিকা চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কাউন্সিলর আহমদ হাসান ইমরানকে আশ্বাস দেন, বিধবাভাতা চালুর বিষয়ে মদিনা বেগমকে সহযোগিতা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে ইরশাদ হত্যা মামলায় সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, অন্যান্যদের খোঁজ চলছে। পারভেস ওরাং নামে আরও এক অভিযুক্ত ছাত্রকে জলপাইগুড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়ি জলপাইগুড়ি। এই  ঘটনার পর ওই  পড়ুয়া গা ঢাকা দিয়েছিল। মোবাইল টাওয়ার ধরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নিয়ে অভিযুক্ত পড়ুয়ার সংখ্যা হল মোট ১৫ জন। তাকে রবিবার আদালতে তোলা হয়েছিল। আদালত ১০  জুলাই পর্যন্ত তাকেও পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, হস্টেলে ওই দিন যতজন ছিল, সব পড়ুয়ারাই দোষী। এই বিষয়টি ব্যাখা দিয়ে আদালতকেও তা জানিয়েছি। কারণ দু'ঘন্টা ধরে মারধর করল। আর পড়ুয়াদের মধ্যে কেউই পুলিশকে জানালো না। তাই এতে সকলেই দোষী। আগামী ১০ জুলাই অভিযুক্তদের ব্যাংকশাল কোর্টে তোলা হবে।

  উল্লেখ্য, গত ২৮ জুন বউবাজার এলাকার উদয়ন হোস্টেলে একদল পড়ুয়া মোবাইল চোর সন্দেহে প্রকাশ্য রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইরশাদকে পিটিয়ে হত্যা করে। পূর্বে পুলিশ ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে অভিযুক্তরা পুলিশি হেফাজতে। যদিও স্থানীয় অনেকের ধারণা পুলিশ এখনও মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারে নি। ঘটনার পরপরই হোস্টেলে পুলিশ আসার আগেই তারা পালিয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। বর্তমানে ইরশাদের প্রতিবেশি এবং পরিবার সবাই তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও আদালতের দিকে।

Leave a comment