Tue, July 9, 2024

ই-পেপার দেখুন

২৫ জনের মধ্যে  ১৪ জনই দৃষ্টিহারা, খেসারত কে দেবে, প্রশ্ন রোগীর পরিজনদের

Bipasha Chakraborty

Published: 05 July, 2024, 02:10 PM
২৫ জনের মধ্যে  ১৪ জনই দৃষ্টিহারা, খেসারত কে দেবে, প্রশ্ন রোগীর পরিজনদের

সেখ কুতুবউদ্দিন:  সরকারি হাসপাতালে ছানি অপারেশনের পর চোখে সংক্রমণ নিয়ে বিপাকে ২৫ জন রোগী। অভিযোগ, গার্ডেনরিচ সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। আপাতত সেখানে চোখের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে স্বাস্থ্য দফতর উদ্যোগী হয়ে ভুক্তভোগীদের স্থানান্তর করেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধীন রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজি (আরআইও)-তে। তাঁদের ফের এক দফা অপারেশন হয় বলে জানা গিয়েছে আরআইও সূত্রে।

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক উর্দ্ধতন আধিকারিক বলেন, গার্ডেনরিচ হাসপাতালের গাফিলতি ছিল। এই  গাফিলতিতে ২৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের বেশি চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। এই  সং'্যাটা আরও বাড়তে  পারে। গার্ডেনরিচ হাসপাতালের গাফিলতির কারণেই  এই  ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি। 

  নাদিয়ালের  গার্ডেনরিচ সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের কাছের এক স্কুলের  শিক্ষক আবদুল রহিম বলেন, আমার দাদা  আবদুর  রহমানের আর্থিক অবস্থা 'খুব খারাপ। শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হয়। শনিবার ছানির  অপারেশন হয়। তারপর ওই দিনই  হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমাকে হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হয়, আপনার পেসেন্টকে নিয়ে আসুন।  তা না  হলে চোখ খারাপ হয়ে যাবে বলে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয়। ফের নাদিয়াল হাসপাতালে সোমবার নিয়ে যাওয়া হয়।  তার পর দেখা  যায় ২৫ জন বসে আছে। শুক্রবার-শনিবার এদের অপারেশন হয়। ডেকে বলা হয়, আপনাদের কলকাতা মেডিক্যালের রিসার্চ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। ইনফেকশন হয়েছে। পেসেন্ট না দেখেই কীভাবে হাসপাতাল বলছে ইনফেকশন হয়েছে।

হাসপাতাল জানায়  তাদের মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে হবে, তা না হলে চো' খারাপ  হয়ে যাবে। এক  রোগী জানান, চো' লাল, পানি পড়ছে,  ব্যথা  হচ্ছে, দে'তে পাচ্ছি না। সব অন্ধকার। কিছু  দেখে পারছি না। কী হবে আমাদের।  এদিন গার্ডেনরিচ  এলাকার সমাজসেবি ও বাসি¨া শে' সারফুদ্দিন বলেন, এই ঘটনা খুবই  দুঃ'জনক। সাধারণ পরিবারের  

 কলকাতা মেডিক্যাল  কলেজ হাসপাতাল জানায়,  ইনফেকশনের কারণ, অপারেশনের আগে ও পরে যে  ড্রপ দিয়েছে তা এক্সপায়ারি ছিল। অথবা ওটি ইনফেকশন ছিল। এ'ন দে'তে পাচ্ছে না। কী করবো। সবার একটা চোখেই এই সমস্যা হয়েছে।  পুরো জীবন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই  'েসারত কে দেবে। 

গার্ডেনরিচ সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল স্থানীয়দের কাছে নাদিয়াল হাসপাতাল নামে পরিচিত। গত শুক্র ও শনিবার সেখানে ২৫ জনের চোখের ছানি কাটা হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাঁদের সোম এবং মঙ্গলবার চেক-আপে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু রোগীদের চোখের ব্যান্ডেজ খোলার পর চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, ছানি কাটার পর সংক্রমণের কবলে পড়েছে চোখ।

রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক জানান, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গার্ডেনরিচ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার এবং ভুক্তভোগী রোগীদের পরীক্ষা করবে ওই কমিটি। আপাতত সন্দেহ, ওটি-তে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সম্ভবত পর্যাপ্ত জীবাণুমুক্ত করা হয়নি। বুধবার স্বাস্থ্যভবন থেকে একদল বিশেষজ্ঞ ওই হাসপাতালে যান। ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয় পরীক্ষার জন্যে।

গার্ডেনরিচের হাসপাতালে ছানির অস্ত্রোপচারের পরেও কেন সমস্যা মেটেনি কিছু রোগীর, তা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনকে বৃহস্পতিবার রিপোর্ট দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমলোজি (আরআইও)-র তদন্তকারী দল। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, অস্ত্রোপচারের সময় ফ্লুইড ব্যবহার করা হয়। তা থেকে এই সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে। রিপোর্টে এমনটাই জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনকে।

এদিকে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে  গার্ডেনরিচ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে খবর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, অপারেশন থিয়েটার জীবাণুমুক্ত করার জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়, সংক্রমণের কারণে এই সমস্যা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানান, রোগীদের আরআইও-তে রেখে চিকিৎসা চলছে। তিনি আরও জানান, আরআইও থেকে একটি দল গার্ডেনরিচ হাসপাতালে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে। 
 

Leave a comment