Fri, September 20, 2024

ই-পেপার দেখুন

অমর্ত্য সেনের বার্তা নিয়ে কিছুকথা

Bipasha Chakraborty

Published: 15 July, 2024, 01:40 PM
অমর্ত্য সেনের বার্তা নিয়ে কিছুকথা
পুবের কলম পত্রিকা পড়ছেন অমর্ত্য সেন। পাশে কন্যা নন্দনা সেন।

 

আহমদ আবদুল্লাহ: অমর্ত্য সেন কখনই বলেননি যে তিনি জাতির বিবেকের ভূমিকা পালন করছেন। হয়তো তিনি তা করতে চানওনি। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, অমর্ত্য সেন অর্থনীতি, সামাজিক সুবিচার বা ইনসাফ, ইতিহাসের প্রজ্জ্বল দিক ও অন্ধকার, ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার, জাতপাত-ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার বিরোধিতা এবং সহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ-বিষ নাশের ক্ষেত্রে একাই যেন এক আলোকবর্তিকা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা শুধু বাংলা বা ভারতের জন্য নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই তা বিশ্ব ব্যবস্থার সংস্কারের দিকেও অঙ্গুলি নির্দেশ করে।

তবে সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ভারতে এবং সেইসঙ্গে চর্যাপদের সুপ্ত মঙ্গল বার্তাবাহী বৌদ্ধ দোহা ও রবীন্দ্রনাথের বাংলাতেও মাঝেমধ্যে যে সাম্প্রদায়িকতার চোরাস্রোত লেখনী, আচরণ ও ইতিহাসবোধে পাওয়া যায় না, তা কিন্তু নয়। আর সাম্প্রতিক দশকগুলিতে অনেক সময় শাসক দল কর্তৃক রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে দেশে যে বিভাজন ও ঘৃণার আবহাওয়া গড়ে উঠেছে, তা ভারত রাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী চরিত্রকেই বদলে দিচ্ছে। 

আর এই বিষয়টি নিয়ে অমর্ত্য সেন যে খুবই উদ্বিগ্ন, তা তাঁর লেখা এবং বক্তব্যে বার বার সামনে আসছে। আর এর পরিণতি যে সংহতি, উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে, সে বিষয়ে তাঁর কোনও সন্দেহ নেই। 

সম্প্রতি অমর্ত্য সেন কলকাতার আলিপুর জেল মিউজিয়ামের সভাকক্ষে ‘নো ইয়োর নেবার’ ক্যাম্পেনের এক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করে এই কথাগুলি বলেছেন। তিনি বলেন, হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বহমান সহযোগিতা-সহমর্মিতা শুধুমাত্র পরস্পরকে সহ্য করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, আর তা থাকাও উচিত নয়। আর ভারতকে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদী এক বিশেষ ধর্মের রাষ্ট্রে পরিণত করার যে প্রচেষ্টা চলছে, তাকে প্রতিরোধ করা সবিশেষ প্রয়োজন। তিনি সাবির আহমেদ-এর ‘নো ইয়োর নেবার’ তাদের কাজের মাধ্যমে সামাজিক সংযোগ ও সহযোগিতার যে পরিবেশ গড়ে তুলছে, তাঁরা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে যে ঐকতান বা হারমনি গড়ে তুলছেন এবং বিভিন্ন সম্প্রদায় ও বিশ্বাসের মধ্যে সংলাপের যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তার প্রশংসা করেন। অমর্ত্য সেন দেশের যে বহুত্ববাদী ও মিশ্রিত ইতিহাস রয়েছে, তার উপর জোর দেন। 

আর বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিশা দেখাতে গিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘হিন্দু-মুসলিমের যুক্তসাধনা’কে গুরুত্ব দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেনের সেই প্রাচীর ভাঙা বইটির কথা উল্লেখ করেন। পুস্তকটির নাম ‘ভারতে হিন্দু-মুসলমানের যুক্ত সাধনা’।

অমর্ত্য সেন আরও বলেন, এখনও শিশু ও বালকদের মনে বিভাজনবোধ গড়ে ওঠেনি। তাই তাদের মধ্যে কাজ করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রয়োজন হচ্ছে, হিন্দু-মুসলিমের একসঙ্গে কাজ করা। এটা হতে পারে ধর্ম, রাজনীতি, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা অথবা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে। আর এর মাধ্যমেই ‘যুক্তসাধনা’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়বে। তিনি তাজমহলকে হিন্দু-মুসলিমের মিলিত প্রতীক বা যুক্তসাধনার নজির বলে উল্লেখ করেন।

Leave a comment