Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন

হাজী নুরুলের দাফনে বসিরহাট সহ জেলার সব রাস্তা যেন মিশে গেল বহেড়ার গ্রামে

Bipasha Chakraborty

Published: 26 September, 2024, 06:55 PM
হাজী নুরুলের দাফনে বসিরহাট সহ জেলার সব রাস্তা যেন মিশে গেল বহেড়ার গ্রামে
আব্বার কবরের সামনে দোয়া করছেন পুত্ররা

ইনামুল হক: যশোর রোডের বামনগাছি চৌমাথা থেকে ছোট জাগুলিয়া হয়ে বহেড়া গ্রাম। টাকি রোডের কদম্বগাছি থেকে দত্তপুকুর যাওয়ার রাস্তার মাঝের ধলার মোড় থেকেও চলে আসা যায় বারাসত ১ ব্লকের এই গ্রামে। কিংবা দত্তপুকুর এর নরসিংহপুর মোড় থেকে ছোট জাগুলিয়া হয়ে পৌছানো যায় সদ্যপ্রয়াত মরহুম শেখ হাজী নুরুল ইসলামের পৈত্রিক ভিটেয়।

বিভিন্ন প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের নিত্য আনাগোনা ছিল যে গ্রামে, হাজী সাহেবের বাড়িতে, আজ সেই বাড়ির মালিক  সব কিছু ছেড়ে মহান আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে গহীন কবরের ঠিকানায় চলে গেলেন। 


বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কাতারে কাতারে মানুষ দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রিয় 'হাজী সাহেব'কে শেষবারের মতো এক নজরে দেখার জন্য। সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই অপেক্ষা করেছেন জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য, একমুঠো কাদামাটি দরদী মানুষটির কবরের বুকে আলতো করে রাখার জন্য, কিংবা দুহাত তুলে খোদার কাছে আর্জি জানাতে তাদের প্রিয় হাজী সাহেবকে আখেরাতে ভালো রাখার জন্য, কবরকে জান্নাতের টুকরো বানানোর আবেদন , কিংবা আখেরাতে তার ভালো কাজগুলোর বদৌলতে যেন জান্নাতের বাগিচার স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারেন প্রিয় মানুষটি- এই আকুতি নিয়ে।পূর্ব ঘোষণা মত জোহর নামাজের পর দুপুর দেড়টা বাজতে জানাজার লাইনে দাঁড়াতে হিমশিম অবস্থা হাজারো মানুষের।

বৃষ্টিতে ভিজে, কেউবা ছাতা দিয়ে মাথা রক্ষা করে দু'মিনিটের  এই প্রার্থনায় হাজির হয়েছেন হাড়োয়া, সন্দেশখালি, বাদুড়িয়া, বসিরহাটসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত কিংবা কলকাতা বা হাওড়া সহ ভিন জেলা থেকে। সকাল থেকে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে  ছোট জাগুলিয়ার রাস্তা ধরে বহেড়া বাজার, জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান ছাড়িয়ে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় পৌঁছে যায় বহেড়া জুনিয়র বেসিক স্কুল, বহেড়া আমিনিয়া খারিজি মাদ্রাসা, বহেড়া সাধারণ গোরস্থানের পাশের রাস্তায়।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলার প্রায় সব পথ মিশে যায় বহেড়ার এই গ্রামীণ পথে। হাজির হন বসিরহাটের দলীয় নেতাকর্মী থেকে হাড়োয়া বিধানসভার সহকর্মী সফিক আহমেদ মাদার ভাই , আবুল কালাম থেকে শুরু করে অনেকে। বুধবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী, তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্তসহ অনেকে।

বৃহস্পতিবার দাফনের আগে শেষবারের মতো প্রিয় সহকর্মীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন মন্ত্রী জাভেদ খান, সাংসদ পার্থ ভৌমিক, রাজ্য তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক , বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সভাপতি অধ্যাপক ওয়ায়েজুল হক প্রমুখ। রাজ্য হজ্জ আধিকারিক,ওয়াকফ বোর্ডের প্রতিনিধিসহ সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মাওলানা কামরুজ্জামান, প্রগ্রেসিভ ইউথ ফাউন্ডেশন এর সভাপতি ও মাদ্রাসা শিক্ষক নেতা সিয়ামত আলি, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি সরদার ইলিয়াস আলী , বসিরহাট জেল ইমাম দ্বীন ইসলাম বৈদ্য,  উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ইমাম প্রতিনিধি মাওলানা হাসানুজ্জামান প্রমুখরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

অন্তরঙ্গ সুহৃদ বসিরহাট শাহী মসজিদের ইমাম মুফতি আবু বকর সাহেব জানাজার নামাজ পড়ান। দোয়া করেন পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী। দাফনের পর অন্তিম দোয়ায় আল্লাহর কাছে আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী বন্ধুবান্ধবসহ গ্রামবাসীদের নিয়ে মরহুম হাজী নুরুল ইসলামের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন বসিরহাট মাওলানা বাগ দরবার শরীফের আল্লামা রুহুল আমিন রহ. এর আওলাদ পীরজাদা শরফুল আমিন।

হাজী নুরুলের স্ত্রী, সন্তান, পরিজন সকলের জন্য মোনাজাত করেন তিনি। বহেড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরের সামনে দাঁড়িয়ে মরহুম হাজী নুরুল ইসলামের পুত্রেরা কান্না, আহাজারির মধ্যে দুহাত তুলে অন্তিম মোনাজাতে শরিক যখন তখনো পরম করুনাময় এর রহমত স্বরূপ বৃষ্টির ধারা ঝরেই চলেছে।

Leave a comment