Fri, September 20, 2024

ই-পেপার দেখুন

পড়ুয়ারাই পিতা-মাতার সবথেকে বড় সম্পদ: ফিরহাদ

Bipasha Chakraborty

Published: 02 August, 2024, 02:28 PM
পড়ুয়ারাই পিতা-মাতার সবথেকে বড় সম্পদ: ফিরহাদ
ধনধান্য অডিটোরিয়ামে হাজী মহঃ মহসিন এনডাওমেন্ট ফান্ড স্কলারশিপ প্রদান করছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, সচিব পিবি সালিম, ওবাইদুর রহমান প্রমুখ।

 

 

 

 

 হাজী মহসিন এখনও আমাদের আইকন: ইমরান 

 

পুবের কলম প্রতিবেদক: হাজী মুহাম্মদ মহসিন তাঁর জীবদ্দশায় অকাতরে দানধ্যান ও মানবসেবা করে গেছেন। মৃত্যর আগে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দান করে গেছিলেন। সেই ‘হাজী মুহাম্মদ মহসিন এনডাউমেন্ট ফান্ড’ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের মাধ্যমে প্রতিবছর ১০০জন মেধাবী মাধ্যমিক উত্তীর্ণকে বিশেষ স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এই বছরও তাঁর জন্মদিন ১ আগস্ট আলিপুরের ধনধান্য অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১০৪জনকে স্কলারশিপ দেওয়া হল বৃহস্পতিবার। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

এছাড়াও বহু বিশিষ্টজন, রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর এবং বিত্ত নিগমের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। রাজ্য সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। তারপর স্বাগত ভাষণে বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের সচিব ড. পিবি সালিম বলেন, হাজী মুহাম্মদ মহসিন তাঁর সম্পত্তি দান করে গিয়েছিলেন। সেই টাকা থেকে আজকে আমরা ১০৪জনকে স্কলারশিপ দিচ্ছি। তাঁর কথায়, দেশে অনেক ধনী মানুষ আছেন কিন্তু সবাই এমন মহান হৃদয়ের হতেপারেননি। মহসিনের মানবিকতা, সমাজসেবা ও পরহিতব্রত আমাদের কাছে শিক্ষণীয়।

তিনি আরও জানান, স্কলারশিপ প্রাপকদের সবাইকে ২০ হাজার করে টাকা, স্বামী বিবেকানন্দ, এপিজে কালাম ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী দেওয়া হচ্ছে।  অন্যদিকে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ও বিত্ত নিগমের অন্যমত সদস্য সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান হাজী মুহাম্মদ মহসিনের জীবনের নানান দিক নিয়ে কথা বলেন। একইসঙ্গে উল্লেখ করেন, হাজী মুহাম্মদ মহসিনের যখন জন্ম বা কাজ করছেন তখন মুর্শিদাবাদের নবাবী তখত-এ বসে আছেন আলিবর্দি খাঁ, পলাশী-কাণ্ড হয়নি। সেই সময়টাকে বুঝতে হবে। হাজী মুহাম্মদ মহসিন এমন একজন মানুষ ছিলেন যে তিনি নিজের সম্পদ থেকে কিছুই খরচ করতেন না। নিজহাতে কুরআনের নকল করতেন এবং সেই হাদিয়া থেকে খরচ চালাতেন। একমাত্র সম্রাট ঔরঙ্গজেব এভাবে জীবন-যাপন করতেন, সে কথাও উল্লেখ করেন ইমরান।

তিনি স্কলারশিপ প্রাপকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা বিদ্যাসাগর সম্পর্কে জানি কিন্তু আমাদের সমাজের অনেক আইকন আছে। আমাদের জানতে হবে সেই আইকনদের সম্পর্কে। সিরাজ উদ- দৌলা, যিনি দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রথম শহিদ, কৃষকনেতা তিতুমীর, একে ফজলুল হক- যিনি কৃ¡কদের জন্য কাজ করেছিলেন, সৈয়দ বদরুদ্দোজা, একেএম জাকারিয়া, বেগম রোকেয়াদের সম্পর্কে জানতে হবে। সরকার বা কলকাতা পুরনিগম যাতে এই কাজে উদ্যোগী হয় তার জন্য ফিরহাদ হাকিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইমরান। পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে এ দিনের প্রাপ্তিকে সামান্য টাকা দিয়ে বিচার না করে হাজী মুহাম্মদ মহসিনের নামে কিছু পাওয়াকে ‘বিরল’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান অতিথি ফিরহাদ হাকিম বলেন, হাজী মুহাম্মদ মহসিনের নামে স্কলারশিপ পাওয়া একটা বড় সম্মান। এভাবে পড়ুয়াদের উৎসাহ দেওয়া হয়। স্কলারশিপ প্রাকপদের মোটিভেশনের জন্য মানব-জীবনের নানান দিক তুলে ধরেন ফিরহাদ। তাঁর কথায়, সন্তান বড় হলে বা ভালো কিছু করলে পিতামাতা খুশি হন। আসলে সন্তানদের সফলতাই পিতামাতার বড় ট্রেজারি। তাই সবাইকে চেষ্টা করতে হবে জীবনে বড় হয়ে যেন দেশ ও সমাজের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে পিতামাতার মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।

অন্য প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, সাচার কমিটির রিপোর্ট দেখে আমাদের লজ্জিত হতে হয়েছিল, এখন সংখ্যালঘুরা অনেক এগিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নানান প্রকল্প ও উদ্যোগে সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুদের মতো এগোচ্ছে।  

মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান বলেন, বিভিন্ন পরীক্ষায় আমাদের মেয়েরা অনেক ভালো ফলাফল করছে। আমার বিধানসভা এলাকার অনেক বস্তি রয়েছে, যেখানকার ছেলেমেয়েরা আইএএস, আইপিএস অফিসার হচ্ছে। যাঁরা এভাবে সফল হচ্ছেন তাঁরা অন্যদের এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করুন এমন আহ্বান জানান জাভেদ খান। এ দিনের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দাবি করেন, টিপু সুলতানের বংশধরদের ‘মহীশূর ফাতিয়া ফান্ড’ ছিল, সেই টাকার হদিশ নেই। তাই এটা উদ্ধার করে সমাজ-কল্যাণের কাজে লাগানোর অনুরোধ করেন তিনি। মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বলেন, নিজের অর্থ মানুষের জন্য খরচ করা ঈমাদারের পরিচয়, আর সেই অর্থে হাজী মুহাম্মদ মহসিন একজন পথিকৃত।

এই কাজে খলিফা ওমরের উদাহরণও তিনি তুলে ধরেন। সমাজকে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা ও উন্নতির জন্য মায়েদের ভূমিকার প্রশংসা করেন সিদ্দিকুল্লাহ। সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানান প্রকল্প ও তার ফলাফল নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

অন্যদিকে হাজী মুহাম্মদ মহসিনের জীবন ও সমাজের জন্য কাজ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন দফতরের মন্ত্রী তাজমূল হোসেন। তাঁর দেশ-ভ্রমণ ও দুর্ভিক্ষের সময়ে লঙ্গরখানা চালানোর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। এ দিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ খলিলুর রহমান, বিধায়ক জাকির হোসেন, আবদুল খালের মোল্লা, মোসারফ হোসেন, সংখ্যালঘু ভোকেশনাল বোর্ডের সিদ্ধার্থ গাফফার, একেএম ফারহাদ, আইএএস ইনাউর রহমান, আইএএস ওবাইদুর রহমান, দফতরের কমিশনার সাকিল আহমেদ-সহ অনান্য বিশিষ্টরা। প্রসঙ্গত, দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন ১৭৩২ সালের ১ আগস্ট হুগলিতে জন্মগ্রহণ করেন। এ দিন ছিল তাঁর ২৯৩তম জন্মদিন।

Leave a comment