ঘুম ম্যানেজমেন্টের ট্রেনিং সেন্টার খুলে জাপানের উদ্যোগপতি দাইসুকো গরি, শেখাচ্ছেন, কী করে সারা দিনে মাত্র ৩০/৪০ মিনিট ঘুমিয়ে বেশি কর্মচঞ্চল থাকা যায়। চিকিৎসকরা কিন্তু বলছেন অন্যকথা, দিনে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা গুমানো বাধ্যতা মূলক। দাই সুকোর নয়া পদ্ধতি আর চিকিৎসকদের মতামতের তুলনা মূলক এই প্রতিবেদন।
সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত ঘুমের বিকল্প নেই। কারণ সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে ঘুম। তাই প্রতি রাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমোবার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ঠিক মতো না ঘুমোলে অনেক সময় নানা জটিল রোগ দেখা দেয়। অনেকে আবার ঘুমের জন্য ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু এই ঘুমের সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন জাপানের দাইসুকো হরি। সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম না হলে যে শরীরের ক্ষতি হয়, তা মানতে নারাজ হরি। কারণ অল্প ঘুমেই সন্তুষ্টির কথা শুনিয়েছেন তিনি। ১২ বছর ধরে দাইসুকো হরি প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট ঘুমিয়েছেন। জানা গেছে, দাইসুকো হরি একজন কর্মচঞ্চল মানুষ। তিনি কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। তাই তিনি ঘুমের সময় খুঁজে বের করেও দিনের বেশির ভাগ সময় কাজের মধ্যেই থাকতে চান।
দাইসুকো হরি জাপানের পশ্চিমাঞ্চলের হিয়োগো অঞ্চলের বাসিন্দা। তিনি একজন উদ্যোক্তা। কাজ ছাড়াও তিনি ভালোবাসেন ছবি আঁকতে ও গান-বাজনা করতে। ইঞ্জিনিয়ার বিষয়ক নকশা তৈরিও তাঁর পছন্দের কাজ। হরি জানিয়েছেন, দিনে মাত্র ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ঘুমোন তিনি। শরীর ও মস্তিষ্ককে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যেন কম ঘুমেও ক্লান্ত না হন। এই ঘুম নিয়ে একটি সংগঠন খুলে ফেলেছেন তিনি। যার নাম ‘জাপান শর্ট স্লিপারস ট্রেইনিং অ্যাসোসিয়েশন।’ ২০১৬ সালে এই সংগঠন চালু করেন হরি। সেখানে নিয়মিত স্বাস্থ্য ও ঘুমের ওপর ক্লাস নেন তিনি। হরি জানান, যাঁরা কাজে মনোযোগ দিতে চান, তাঁদের জন্য দীর্ঘ সময় ঘুমের চেয়ে অল্প সময়ে উচ্চমানের ঘুম বেশি প্রয়োজন। যেমন চিকিৎসক ও অগ্নিনির্বাপকেরা কম বিশ্রাম নেন, তবে ওই স্বল্প বিশ্রামই তাঁদের অনেক কাজে আসে।’
সোশ্যাল মিডিয়াতেও দাইসুকো হরির বিষয়ে বিস্তারিত পাওয়া যায়। তাতে লেখা, কীভাবে কম সময় ঘুমিয়ে সুস্থ্য থাকা যায় তার কৌশল ২ হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষকে শিখিয়েছেন তিনি। এমনই একজন ব্যক্তি জাপানের এক বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, হরির কাছ থেকে শিখে এখন দিনে মাত্র ৯০ মিনিট ঘুমোন। চার বছর ধরে এভাবেই চলছে। তাঁর স্বাস্থ্যও ভালো আছে। বহু নেটিজেনই হরির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যেমন একজন তাঁর প্রশংসা করে বলেছেন, সময় ব্যবস্থাপনায় চরম নৈপুণ্য দেখিয়েছেন হরি। কম ঘুমিয়ে কীভাবে আরও ভালোভাবে কাজ করা যায়, তা তিনিও শিখতে চান। আরেকজন বলেছেন, ‘কম ঘুমনোর কারণে মস্তিষ্ক যদিও বা বেশি সময় জাগ্রত থাকতে পারে, তবে হৃৎপিণ্ড এই চাপ নিতে পারবে না।’
চিকিৎসকেরাও হরির এই সাইকোলজি মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের মতে, কম ঘুমের সঙ্গে সবাই খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন না।
যেমন জাপানি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ গুয়ো ফেইয়ের কথায়, প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। সক্রিয় থাকার পর শরীর ও মস্তিষ্ককে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ঘুমের এই নিয়ম মানা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকেরা আরও জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা কম হলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়তে পারে। চিকিৎসকদের মতে, ঘুম না হলে শরীরের ‘লিভিং অরগানিজমগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। নষ্ট হতে পারে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য।
বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপ ও হাইপার টেনশন। সেইসঙ্গে দেখা দিতে পারে হৃদরোগের সমস্যা। বাড়তে পারে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। ঘুম শরীরের ক্ষতিপূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি পদ্ধতি। তাই ঘুম কম হলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়। মানুষ যখন ঘুমায় তখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য কাজ করে ‘লিভিং অরগানিজম’। কিন্তু আমরা না ঘুমোলে এই ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো কাজ করতে বাধা পায়। ফলে ক্রমশ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। মস্তিষ্ককে সচল রাখতেও ঘুম আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দৈহিক প্রায় সব কার্যকলাপই ঘুমের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। তাই ঘুমকে কোনওভাবে অবহেলা করা উচিৎ নয়।