৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কে এই গুলাম আলি খাতানা? জম্মু-কাশ্মীরের এই গুজ্জর নেতাকে কেন রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে বিজেপি

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার
  • / 12

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: জম্মু-কাশ্মীরের রাজনীতিতে ভোট ব্যাঙ্ক বাড়াতে আঁটঘাট বেধেই নামছে বিজেপি। গুজ্জর ও বাকেরওয়াল সম্প্রদায়কে কাছে টানতে রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছেন গুজ্জর সম্প্রদায়ভুক্ত রাজনীতিবিদ গুলাম আলি খাতানা। জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা এই গুলাম আলি খাতানার  নাম রাজ্যসভায় মনোনীত করেছে বিজেপি। খুব স্বাভাবিকভাবেই জম্মু-কাশ্মীরের এই উত্থান রাজনৈতিক মহলকে অবাক করেছে।

৫১ বছর বয়সী গুলাম আলি খাতানা আরএসএস অনুমোদিত মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং বিজেপিতে বেশ কয়েকটি পদে অধিষ্ঠিত। ছাত্রজীবন থেকেই বিজেপি ঘেঁষা এই রাজনীতিবিদ ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছেন। খাতানা হলেন জম্মু-কাশ্মীরের দ্বিতীয় গুজ্জর নেতা রাজ্যসভায় যাকে সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে মনোনীত করা হয়েছে।  এর আগে পুঞ্চের লাসানা গ্রামের একজন প্রবীণ কংগ্রেস গুজ্জর নেতা চৌধুরী মোহাম্মদ আসলামও ২০০৬ সালের জুন মাস থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন।

খাতানা হলেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) উপজাতি মোর্চা এবং সংখ্যালঘু মোর্চা, জম্মু ও কাশ্মীরের দলের মুখপাত্র এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একজন সদস্য। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ২০০১ সালে তিনি জম্মু-কাশ্মীরের জাতীয় প্যান্থার্স দলে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে খাতানা আরএসএস দলে যোগ দেন। পরে তিনি বিজেপিতে চলে এসে বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত হন।

ট্রাইবাল রাইটস-এর গুজ্জর নেতা জাভেদ রাহি বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের গুজ্জর ও বাকেরওয়াল সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক অঙ্গনে কয়েক দশক ধরে উপেক্ষা করা হয়েছে। খাতানার মনোনয়ন সেই শূন্যতা পূরণ করতে সহায়তা করবে। দ্য ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাভেদ রাহি বলেছেন, আমরা গুজ্জর এবং বাকেরওয়াল জাতির উন্নতির জন্য পদক্ষেপগুলি আশা করছিলাম। এই সিদ্ধান্তটি উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জন্য আশাপ্রদ। জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপির সভাপতি রবীন্দর রায়না জানিয়েছেন, কয়েক মাস আলোচনার পর তার পরেই খাতানার নাম রাজ্যসভায় মনোনীত করা হয়েছে। আরও অনেক নাম প্রস্তাবিত হয়েছিল, পরে গুলাম আলি খাতানার নাম সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে অনুমোদিত হয়। রায়না আরও বলেন, দলে যখন গুলাম আলি খাতানা যোগ দিয়েছিলেন তখন কেউ কল্পনা করেনি বিজেপি জাতীয় স্তরে বা জম্মু-কাশ্মীরে ক্ষ্মমতায় আসবে।

খাতানা এমন একজন মানুষ যিনি কঠিন সময়ে দলের পাশে থেকেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়াই দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে কাজ করে গেছেন। রায়নার মতে, গুজ্জর সম্প্রদায় সর্বদা প্রচণ্ড দেশপ্রেমিক এবং জাতীয়তাবাদী একটি সম্প্রদায়। তাদের আত্মত্যাগ সম্মানিত ও স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।জম্মু-কাশ্মীরের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশই গুজ্জর উপজাতি। রাজনৈতিক মহলের মতে ভোট ব্যাংকের কথা মাথায় রেখে গুলাম আলি খাতানাকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গুজ্জর সম্প্রদায়ের নেতারা এই

পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, যে বিজেপি এর থেকে নির্বাচনীভাবে লাভবান হবে। মূলত হিন্দু অধ্যুষিত  জম্মু অঞ্চলে প্রায় ৩০টি আসনে শক্ত সমর্থনের ভিত্তি রয়েছে বিজেপির। তবে এখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য গুজ্জর এবং বাকেরওয়াল গোষ্ঠীর কাছ থেকে সমর্থন চাইছে বিজেপি।

জম্মু ও কাশ্মীরে, গুজ্জর এবং বাকেরওয়াল সম্প্রদায়কে ১৯৯১ সালে তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা একটি তফসিলি উপজাতি (এসটি) হিসাবে মনোনীত করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার তাদের একটি রাজনৈতিক কোটা মঞ্জুর করে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কে এই গুলাম আলি খাতানা? জম্মু-কাশ্মীরের এই গুজ্জর নেতাকে কেন রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে বিজেপি

আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: জম্মু-কাশ্মীরের রাজনীতিতে ভোট ব্যাঙ্ক বাড়াতে আঁটঘাট বেধেই নামছে বিজেপি। গুজ্জর ও বাকেরওয়াল সম্প্রদায়কে কাছে টানতে রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছেন গুজ্জর সম্প্রদায়ভুক্ত রাজনীতিবিদ গুলাম আলি খাতানা। জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা এই গুলাম আলি খাতানার  নাম রাজ্যসভায় মনোনীত করেছে বিজেপি। খুব স্বাভাবিকভাবেই জম্মু-কাশ্মীরের এই উত্থান রাজনৈতিক মহলকে অবাক করেছে।

৫১ বছর বয়সী গুলাম আলি খাতানা আরএসএস অনুমোদিত মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং বিজেপিতে বেশ কয়েকটি পদে অধিষ্ঠিত। ছাত্রজীবন থেকেই বিজেপি ঘেঁষা এই রাজনীতিবিদ ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছেন। খাতানা হলেন জম্মু-কাশ্মীরের দ্বিতীয় গুজ্জর নেতা রাজ্যসভায় যাকে সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে মনোনীত করা হয়েছে।  এর আগে পুঞ্চের লাসানা গ্রামের একজন প্রবীণ কংগ্রেস গুজ্জর নেতা চৌধুরী মোহাম্মদ আসলামও ২০০৬ সালের জুন মাস থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন।

খাতানা হলেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) উপজাতি মোর্চা এবং সংখ্যালঘু মোর্চা, জম্মু ও কাশ্মীরের দলের মুখপাত্র এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একজন সদস্য। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ২০০১ সালে তিনি জম্মু-কাশ্মীরের জাতীয় প্যান্থার্স দলে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে খাতানা আরএসএস দলে যোগ দেন। পরে তিনি বিজেপিতে চলে এসে বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত হন।

ট্রাইবাল রাইটস-এর গুজ্জর নেতা জাভেদ রাহি বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের গুজ্জর ও বাকেরওয়াল সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক অঙ্গনে কয়েক দশক ধরে উপেক্ষা করা হয়েছে। খাতানার মনোনয়ন সেই শূন্যতা পূরণ করতে সহায়তা করবে। দ্য ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাভেদ রাহি বলেছেন, আমরা গুজ্জর এবং বাকেরওয়াল জাতির উন্নতির জন্য পদক্ষেপগুলি আশা করছিলাম। এই সিদ্ধান্তটি উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জন্য আশাপ্রদ। জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপির সভাপতি রবীন্দর রায়না জানিয়েছেন, কয়েক মাস আলোচনার পর তার পরেই খাতানার নাম রাজ্যসভায় মনোনীত করা হয়েছে। আরও অনেক নাম প্রস্তাবিত হয়েছিল, পরে গুলাম আলি খাতানার নাম সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে অনুমোদিত হয়। রায়না আরও বলেন, দলে যখন গুলাম আলি খাতানা যোগ দিয়েছিলেন তখন কেউ কল্পনা করেনি বিজেপি জাতীয় স্তরে বা জম্মু-কাশ্মীরে ক্ষ্মমতায় আসবে।

খাতানা এমন একজন মানুষ যিনি কঠিন সময়ে দলের পাশে থেকেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়াই দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে কাজ করে গেছেন। রায়নার মতে, গুজ্জর সম্প্রদায় সর্বদা প্রচণ্ড দেশপ্রেমিক এবং জাতীয়তাবাদী একটি সম্প্রদায়। তাদের আত্মত্যাগ সম্মানিত ও স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।জম্মু-কাশ্মীরের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশই গুজ্জর উপজাতি। রাজনৈতিক মহলের মতে ভোট ব্যাংকের কথা মাথায় রেখে গুলাম আলি খাতানাকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গুজ্জর সম্প্রদায়ের নেতারা এই

পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, যে বিজেপি এর থেকে নির্বাচনীভাবে লাভবান হবে। মূলত হিন্দু অধ্যুষিত  জম্মু অঞ্চলে প্রায় ৩০টি আসনে শক্ত সমর্থনের ভিত্তি রয়েছে বিজেপির। তবে এখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য গুজ্জর এবং বাকেরওয়াল গোষ্ঠীর কাছ থেকে সমর্থন চাইছে বিজেপি।

জম্মু ও কাশ্মীরে, গুজ্জর এবং বাকেরওয়াল সম্প্রদায়কে ১৯৯১ সালে তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা একটি তফসিলি উপজাতি (এসটি) হিসাবে মনোনীত করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার তাদের একটি রাজনৈতিক কোটা মঞ্জুর করে।