‘বীর শহীদের জীবনস্মৃতি হইতে প্রেরণা লাভ করুন’
পুবের কলম,প্রতিবেদক: নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ইতিহাসের এক ট্র্যাজিক নায়ক। প্রহসন-প্রতারণা আর বিশ্বাসভঙ্গের যুদ্ধ পলাশিতে বাংলা ও সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের ইতিহাস আজও নাড়া দেয় আমাদেরকে। শুধু তা-ই নয়, এই ইতিহাস নাড়া দিয়েছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলকেও। তাই তো তিনি ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতায় লিখেছিলেন---কাণ্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,/বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!/ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!/ উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।
পলাশির ইতিহাসকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে গোপন করে শঠতার ইতিহাস রচিত ও প্রকাশিত হয়েছিল। সমস্তই সর্বৈব নির্ভেজাল মিথ্যাচারের ইতিহাস। ইতিহাসের মহানায়ককে কলঙ্কিত করার জন্য এই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ আমল থেকেই। তাই কাজী নজরুল সিরাজ স্মৃতি উদযাপনের ডাক দিয়েছিলেন দৈনিক ‘আজাদ’ পত্রিকার মাধ্যমে, ২৯ জুন ১৯৩৯ সালে।
উঠছে না কর্মবিরতি, রাজ্যের সঙ্গে ফের আলোচনা চায় জুনিয়র ডাক্তাররা
সুপ্রিম ডেডলাইনের পালটা রাজ্যকে ডেডলাইন জুনিয়র ডাক্তারদের! স্বাস্থ্যভবন অভিযানের ডাক
আরজি কর কাণ্ডে বিচার চেয়ে মৌন মিছিল স্কুল পড়ুয়াদের
নজরুলের আবেদন থেকে জানা যায়, দৈনিক আজাদ-এর সম্পাদক মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ-র নেতৃত্বে কলকাতায় সিরাজ-উদ-দৌলাহ স্মৃতি কমিটি তৈরি হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, এখন তেমন কোনও কমিটি কলকাতাতে তৈরি করা হচ্ছে না। সিরাজকে নিয়ে নানা অপপ্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ সিরাজের ইন্তেকাল দিবসে সেই আবেদনটি পুনরায় প্রকাশ করা হল---
‘‘আগামী ৩রা জুলাই সিরাজ-উদ-দৌলাহ স্মৃতি দিবস পালনের জন্য যে আয়োজন হইতেছে, সে সম্পর্কে বাংলার বুলবুল কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিম্নরূপ আবেদন প্রচার করিয়াছেন:
‘আমি জানিতে পারিলাম যে, আগামী ৩রা জুলাই সিরাজ-উদ-দৌলাহ দিবস পালনের আয়োজন চলিতেছে। একথা আজ সর্বজনসম্মত যে বাংলার শহিদ বীর ও শেষ স্বাধীন নৃপতি নওয়াব সিরাজ-উদ-দৌলাহ রাজনৈতিক কোলাহলের ঊর্ধ্বে।
হিন্দু-মুসলমানের প্রিয় মাতৃভূমির জন্য নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। সর্বোপরি বাংলার মর্যাদাকে তিনি ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়াছেন এবং বিদেশি শোষণের কবল হইতে দেশকে রক্ষা করিবার জন্য আপনার জীবন যৌবনকে কোরবানি করিয়া গিয়াছেন।
মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ-র নেতৃত্বে কলিকাতার সিরাজ-উদ-দৌলাহ স্মৃতি কমিটি উক্ত অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করিবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করিতেছেন। কলিকাতা কমিটিকে সর্বপ্রকারে সাহায্য প্রদান করিয়া আমাদের জাতীয় বীরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করিবার জন্য আমি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলের নিকট আবেদন জানাইতেছি। বিদেশির বন্ধন-শৃঙ্খল হইতে মুক্তিলাভের জন্য আজ আমরা সংগ্রামে রত। সিরাজ-উদ-দৌলাহ’র জীবনস্মৃতি হইতে যেন আজ আমরা অনুপ্রাণিত হই--- ইহাই আমার প্রার্থনা।’
সৌজন্যে: সোমঋতা মল্লিক, ছায়ানট কলকাতা