পুবের কলম প্রতিবেদক: আফরোজা খাতুন মাধ্যমিকে ৮১ শতাংশ নম্বর পেয়ে হাওড়ার বাঁকড়া এলাকার সমস্ত স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছে। আফরোজা গত ২৬ জুন বিজ্ঞান বিভাগে ‘বাঁকড়া মোবারক হোসেন গার্লস স্কুলে’ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। শনিবার ২৯ জুন ছিল তার প্রথম ক্লাস। অনেক আশা ও চোখে স্বপ্ন নিয়ে সে স্কুলে এসেই এক বড় ধরনের বাধা ও হেনস্থার মধ্যে পড়ে।
আফরোজা উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে স্কুলে প্রার্থনা লাইনে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু প্রার্থনা শুরুর আগে স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা ঝুমা ঘোষ আফরোজাকে প্রার্থনার সারি থেকে বের হয়ে যাওয়ার আদেশ দেন। সে ছাত্রীদের প্রার্থনা লাইনের পাশে একা দাঁড়িয়ে থাকে। কেন তাকে এভাবে হেনস্থা করে প্রার্থনা লাইন থেকে বের করে দেওয়া হল, এ কথা ভেবেই তার চোখে পানি চলে আসে। প্রার্থনা শুরু হওয়ার আগে প্রধানশিক্ষিকা ঝুমা ঘোষ আফরোজার কাছে এসে আদেশ করেন, তোমার মাথা আবৃত করা ওড়না খুলে ফেল। এটা আমাদের স্কুলের নিয়ম বিরোধী। বাচ্চা বয়স থেকেই আফরোজা মাথায় স্কার্ফ বা হিজাব পরিধান করে থাকে। তাই সে হিজাব খুলে ফেলতে ইতঃস্তত করে। সে প্রধান শিক্ষিকাকে বলে, আমি তো স্কুলের ড্রেস কোড মেনে ওড়না পরে এসেছি। আর এই ওড়না দিয়েই মাথা ঢেকেছি। এটা আমার ধর্মীয় বিশ্বাস। আমি কখনও মাথার হিজাব খুলিনি। অন্য স্কুলে বা পরীক্ষার সময় আমার কোনও অসুবিধা হয়নি। আপনি কেন আমাকে মাথা আবৃত করা ওড়না খুলতে বলছেন? স্কুলের ড্রেস কোড ও নিয়ম আমি যা পড়লাম, তাতে কোথাও লেখা নেই ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকা কিংবা স্কার্ফ পরা যাবে না। যদি এটা স্কুলের ড্রেস কোড হয়, তাহলে আপনি আমাকে দয়া করে লিখিত দিন। ত্রুদ্ধ প্রধানশিক্ষিকা বলেন, এ সব বিষয়ে তোমার সঙ্গে কোনও কথা হবে না। আমি যা বলব, তাই হচ্ছে এই স্কুলের নিয়ম। আমার কথাই মেনে চলতে হবে।
পরে আফরোজা খাতুন ক্লাসে যেতে চাইলে তাকে বলা হয়, তুমি মাথা ঢেকে ক্লাস করতে পারবে না। তোমাকে ক্লাসের ভিতর ঢুকতেই দেওয়া হবে না। আফরোজা পুবের কলম-এর সাংবাদিককে পরে বলে, কোনও ক্লাসেই আমাকে ঢুকতে না দিযে স্কুলে অফিসের বাইরে একটি বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। নিজেকে মনে হচ্ছিল আমি যেন অস্পৃশ্য। সবাই ক্লাস করছে, পড়াশোনা করছে। আর আমাকে একপাশে বসিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। আমার মানসিক অবস্থা যে কী হয়েছিল তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কী অপরাধ করেছি? কোনও ক্লাস করতে না দেওয়ায় আমি শেষে বাড়ি চলে আসি। আফরোজা আরও বলে, কালকে রবিবার স্কুলে ছুটি। সোমবার আমি স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে পারব কি না, তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন রয়েছি। আমার পুরনো স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ না থাকায় আমি ‘বাঁকড়া মোবারক হোসেন গার্লস স্কুলে ’ একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়েছি। আমার স্বপ্ন, আমি পরবর্তীতে নিট পাশ করে একজন চিকিৎসক হব। আর এই এলাকায় সকলের চিকিৎসা করব, বিশেষত মহিলাদের।
বিষয়টি জানার জন্য বেশ কয়েকবার বাঁকড়া মোবারক হোসেন গার্লস স্কুলের সম্মানীয় প্রধানশিক্ষিকা ঝুমা ঘোষকে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। ওই এলাকায় কথা বলে জানা গেছে, বাঁকড়ার সম্পূর্ণ এলাকাটি মুসলিম প্রধান। এখানকার বাসিন্দারা মেটিয়াবুরুজের মতো ওস্তাগর ও পোশাক শিল্পের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত।
বিদ্যাসাগর জাতীয় শিক্ষক সম্মান পেলেন ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদ
ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যু দিনে চিকিৎসক দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাল নিউ বারাকপুর পুরসভা
বিদ্যুৎ পোস্টে কেবেলের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু যুবকের
এলাকার নারী ও পুরুষরা ধর্মীয় শিক্ষাকে মেনে চলতে পছন্দ করেন। ওই এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, আমাদের বহু মেয়েই মাথায় হিজাব বা স্কার্ফ পরে স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু বাঁকড়া মোবারক হোসেন গার্লস স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা ঝুমা ঘোষের জবরদস্তির ফলে তাদের অনেকেই স্কুলে প্রবেশ করার আগে স্কার্ফ খুলে ফেলতে বাধ্য হয়। অনেক ধর্মপরায়ণ অভিভাবকরা মেয়েকে বিজ্ঞান নিয়ে এই স্কুলে ভর্তি তো করেন। কিন্তু স্কুলের ‘হিজাবের প্রতি নিষেধাজ্ঞা’ দেখে মেয়েকে অন্য স্কুলে কলা বিভাগে ভর্তি করাতে বাধ্য হন। কারণ, বিজ্ঞান নিয়ে মেয়েদের আর কোনও স্কুল কাছাকাছি নেই।
আফরোজা ‘পুবের কলম’কে বলে, আমার আব্বা একটি মসজিদের ইমাম। তিনি আমাকে পড়াতে চান। কিন্তু তাঁর ইচ্ছা আমি যেন অবশ্যই মাথায় স্কার্ফ এবং ওড়না পরেই স্কুলে যাই। আর আমি যেন অবশ্যই স্কুল নির্ধারিত সালোয়ার কামিজও পরিধান করি। কিন্তু মনে হচ্ছে, আমার ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন হয়তো প্রধান শিক্ষিকা মহাশয়ার কঠোর নির্দেশের ফলে সম্ভব হয়ে উঠবে না। এই ধরনের বাধা আরও কত মেয়েকে হয়তো স্কুল ছাড়তে বাধ্য করেছে।
মুসলিম মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় আসতে চায় না, এই ধরনের মিথ্যা আখ্যান অনেকেই পেশ করে থাকেন। কিন্তু যারা পড়তে চায়, তাদের কীভাবে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য করা হয়, সেই কথা কিন্তু এইসব বৃতান্তের মধ্যে আসে না।
এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর বাঁকড়া অঞ্চলে অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বাঁকড়ার একটি মসজিদ কমিটির সম্পাদক বললেন, দেখুন ওই স্কুলে পুরুষ শিক্ষকরাও পড়িয়ে থাকেন। কাজেই মেয়েদের হিজাব ত্যাগ করার কথা বলে ওই শিক্ষিকা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অধিকারের উপর আঘাত হানছেন।