Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন

ওয়াকফ বিল প্রত্যাহার ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে পথে নামলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা

ইমামা খাতুন

Published: 24 September, 2024, 02:25 PM
ওয়াকফ বিল প্রত্যাহার ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে পথে নামলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ওয়াকফ বিল প্রত্যাহার ও দেশে ক্রমবর্ধমান সংখ্যালঘু হত্যার প্রতিবাদে এবার সরব হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাদের প্রতিবাদ সভার আয়োজন হয় ।  দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, হত্যা ‘মামূলি’ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।  নানা  অছিলায় সমালোচনার শূলে চড়ানো হয় বিশেষ এক সম্প্রদায়কে। কখনো তাদের পোশাক-আশাক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় তো কখনও জায়গা সম্পত্তি। এবার ‘টার্গেট’ ওয়াকফ।

উল্লেখ্য, সেই স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিকেই ওয়াকফ সম্পত্তি বলা হয়, যা দলিলের মাধ্যমে আল্লাহর ওয়াস্তে দান করা হয়।  সেই সম্পত্তি যা চ্যারিটি বা সেবার কাজে ব্যবহার করা হয়। নথিপত্রের যুগ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে এই পদ্ধতি প্রচলিত আছে।  এবার এই সম্পত্তি হস্তগত করতে চাই বিজেপি সরকার বলেই অভিযোগ। যার প্রতিবাদে এদিন সরব হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের পড়ুয়ারা।

এই প্রসঙ্গে পুবের কলম’কে দেবার্ঘ্য যশ নামে এক পড়ুয়া জানান, বিগত ১৪ বছরে দেশে সংখ্যা লঘু হত্যা, নির্যাতন ব্যাধির রূপ ধারণ করেছে ।   বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যে।  গো-মাংস, হিজাব ইস্যু ছেড়ে এবার ওঁরা ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর মনোনিবেশ করেছে। পোশাক-আশাকের, মত-প্রকাশের স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ তো ছিলই এবার ওঁরা জায়গা-সম্পত্তিতে নজর দিয়েছে।

ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের কারণ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, এতদিন ওয়াকফ সম্পত্তি ‘ওয়াকফ বোর্ডের’ অধীনে ছিল। নয়া বিলের মাধ্যমে সেটা জেলা পরিষদ খোলসা করে বললে কৌশলে আরএসএস (নামধারী বিজেপির ) অধীনে চলে যাবে। নয়া বিলের মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চায় কেন্দ্র সরকার। ওঁরা বলছে প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলের লক্ষ্য হলো ওয়াকফ সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার এবং মুসলিম নারী ও বঞ্চিতদের কল্যাণ। আমার প্রশ্ন কল্যাণ করতে গেলে সরকারে থেকে কল্যাণ করুক? ওয়াকফের কি প্রয়োজন? এইগুলো ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। মুসলিমদের অধীনে জায়গা-সম্পত্তি থাক এটা ওঁরা চাই না।একই পরিপ্রেক্ষিতে মানসুর হাবিবুল্লাহ নামে এক পড়ুয়া জানান, দেশে মুসলিম বঞ্চনা অহরাত্র ঘটে চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলির কাছে সংখ্যালঘুরা ভোট-ব্যাঙ্ক ছাড়া কিছু নয়। এমনিতেই হেন কারণে মুসলিম স্থাপত্য, সৌধ, মসজিদ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর ওয়াকফ সংশোধনী বিলের মাধ্যমে এই ঘটনাগুলি মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাবে। ওয়াকফ সম্পত্তি গুলো আছে বলেই বহু মসজিদ, মাদ্রাসা বা সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে। ওয়াকফ সম্পত্তি কেন্দ্রীয় অধীনস্থ হয়ে গেলে মুসলিমরা স্বাধীন ভাবে হয়তো বাঁচতেও পারবে না। প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই রকম বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

ব্রহ্মাণী ভট্টাচার্য নামে এক পড়ুয়া জানান, কারণে অকারণে ধর্মীয় ইস্যু খাড়া করে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন টেনে একশ্রেণির রাজনৈতিক দল ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। আর ফলস্বরুপ সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রোশ হিংস্রতার রূপ নিচ্ছে। নিরীহ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।

ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহার নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে হিন্দু, মুসলিম, জৈন, খ্রিস্টান ইত্যাদি ধর্মের মানুষের বসবাস। প্রতিটি ধর্মের মানুষের জন্য আলাদা আলাদা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলির অভ্যন্তরে অনেক জায়গা জমি রয়েছে। তাহলে ওয়াকফ সম্পত্তিকেই টার্গেট কেন করা হচ্ছে?

প্রসঙ্গ টেনে ব্রহ্মাণী বলেন, ইস্কন, ভারত সেবাশ্রম, তিরুপতি মন্দির ট্রাস্টের অধীনে বহু স্থাবর-অস্থাবর জমি রয়েছে। কেন্দ্রীয়করণ করতে গেলে শুধু ওয়াকফ কেন এই গুলো করা হক। বিজেপি ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বেআইনি ভাবে জমি দখল এবং ক্ষমতার ‘অপপ্রয়োগের’ দাবি তুলেছে। এই অভিযোগের পোক্ত কোনও দলিল ওদের কাছে নেই। এই ভাবে অভিযোগ উঠলে তাহলে ইস্কন, ভারত সেবাশ্রম বা আরও নাম করা প্রতিষ্ঠানের কথা বলা যেতে পারে। অভিযোগ উঠেছে তারাও বেআইনি অনেক কার্যকলাপে যুক্ত। তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইন এনে ওদের অধীনস্থ সম্পত্তি গুলো কেন্দ্রীয়করণ করা হোক।  মোট কথা ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টায় উঠে পড়ে লেগেছে বিজেপি। বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে সব কিছু হলেও, তাকে পরিচালনা করছে আরএসএস। প্রথমে ধর্মের নামে বিভাজন, খাওয়া-দাওয়া তারপর পোশাক আশাক এখন আবার ওয়াকফ নিয়ে পড়েছে।


Leave a comment