ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক: গাজায় ইসরাইল যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরছে কাতারভিত্তিক নিউজ চ্যানেল আল জাজিরা। অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম যেখানে ভুয়ো খবর, বিকৃত সংবাদ পরিবেশন করছে, তখন এই চ্যানেলটি সততা ও সাহসের সঙ্গে সত্য খবর পরিবেশ করছে বিশ্বের সামনে। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার অধিকার আদায়ে তাদের লড়াইয়ের কথা প্রচার করছে আল জাজিরা। কিন্তু এই চ্যানেলটিরই সম্প্রচার বন্ধ করল ফিলিস্তিনি অথরিটি। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের শাসক তথা ফিলিস্তিনি অথরিটি বা কর্তৃপক্ষ সেখানে আল-জাজিরার সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ করার আদেশ দিয়েছে। ‘উসকানিমূলক কনটেন্ট’ প্রচারের অভিযোগে এ আদেশ দেওয়া হয়। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ফিলিস্তিনি অথরিটির শাসন চলছে বলা হলেও সেখানে তাদের কোনও সার্বভৌমত্ব নেই। ইসরাইলি সেনারা যেকোনও সময় সেখানে অভিযান চালায় এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যা-নির্যাতন-বন্দি করে। এর বিরুদ্ধে লাগাতার খবর প্রচার করছিল আল জাজিরা। তাই ইসরাইলের চাপেই ফিলিস্তিনি অথরিটি এই আদেশ দিতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে উসকানিমূলক কনটেন্ট ও প্রতিবেদন সম্প্রচার করায় আল-জাজিরার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আল-জাজিরা বুধবার রামাল্লায় তাদের কার্যালয় বন্ধ রাখার একটি নির্দেশ পেয়েছে। বুধবার আল-জাজিরায় কিছু ছবি প্রচার করা হয়। এসব ছবি দেখে মনে হচ্ছে, ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা রামাল্লায় আল-জাজিরার কার্যালয়ে ঢুকছেন ও সম্প্রচার বন্ধের আদেশ হস্তান্তর করছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের এ পদক্ষেপের তীব্র নি¨া জানিয়েছে আলজাজিরা। তারা বলেছে, দখলদার ইসরাইলের মতোই আচরণ করছে ফিলিস্তিনি অথরিটি।
Also Read: জেলেই থাকবেন চিন্ময় দাস, শুনানিতে আসামিপক্ষের ১১ আইনজীবী
আল জাজিরা বন্ধ করার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, সম্প্রতি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা খর্ব এবং জনগণের ওপর নিরাপত্তামূলক বিধিনিষেধ আরও জোরদার করার জন্য যেসব স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসবের সঙ্গেই এই সিদ্ধান্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ!’ এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। বিবৃতিতে তারা আরও বলেছে, ‘যে গণমাধ্যম দখলদারির তথ্য প্রকাশ করে ও আমাদের জনগণকে সমর্থন করে, তার সম্প্রচারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ গাজায় ইসলামিক জিহাদও এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। সম্প্রতি , আলজাজিরা এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহর মধ্যে টানাপোড়েন বেড়েছে। ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা বাহিনী ও জেনিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা সংবাদমাধ্যমটিতে প্রচারের পর এ টানাপোড়েন তৈরি হয়। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে আলজাজিরা এই বলে ফাতাহর নিন্দা জানিয়েছিল যে অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু এলাকায় সংগঠনটি তাদের বিরুদ্ধে ‘উসকানিমূলক প্রচারণা’ চালিয়েছে। ওই সময় আলজাজিরা এক বিবৃতিতে বলেছিল, জেনিনে ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা বাহিনী ও জেনিনের প্রতিরোধযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আল জাজিরায় খবর প্রচারের পর এমন প্রচারণা চালানো হয়েছে। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কয়েকজন সশস্ত্র যোদ্ধা গ্রেপ্তার হওয়ার জেরে ডিসেম্বরের শুরু থেকে দুপক্ষের মধ্যে বড় রকমের সংঘর্ষ হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জেনিন ব্যাটালিয়নের যোদ্ধাদেরও লড়াই চলছে। এ ব্যাটালিয়নের বেশির ভাগ সদস্য হয় ইসলামিক জিহাদ বা হামাসের সঙ্গে যুক্ত।