নয়াদিল্লি, ২৭ জানুয়ারি: ওয়াকফ সংশোধনী বিলে বিজেপি সরকার প্রস্তাবিত ৪৪টি সংশোধনী বহাল রাখল সংযুক্ত সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি। সোমবার জেপিসির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। জেপিসির পক্ষ থেকে বলা হয় জেপিসিতে এনডিএ-র পক্ষ থেকে নিযুক্ত সদস্যগণের সমর্থনে ১৪টি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে এবং বিরোধী পক্ষের সবক’টি প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। বিপক্ষ সদস্যরা এই সিদ্ধান্তে বলছেন, এটা পূর্বপরিকল্পিত, গণতন্ত্রের উপর আঘাত এবং তানাশাহী বা স্বেচ্ছাচার। তৃণমূল সাংসদ জেপিসি সদস্য কল্যাণ ব¨্যােপাধ্যায় বলেন, এটা সম্পূর্ণ হাস্যকর ব্যাপার যে বিরোধীদের কোনও বক্তব্য শোনা হবে না। নাম কা ওয়াস্তে জেপিসি হয়েছে, যেখানে বিরোধী সদস্যদের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হল না। গণতন্ত্রের জন্য কালো দিন। আলোচনার কোনও সময় দেওয়া হল না। সংখ্যার জোরে এনডিএ’র প্রস্তাব পাস হয়ে গেল। আর আমাদের ৪৪টি প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হল যান্ত্রিকভাবে। বলতে দেওয়া হল না। জেপিসির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পল জানান, আগের বৈঠকে বিরোধী সদস্যরা হাঙ্গামা পাকিয়েছিল। আজ জেপিসির শেষ বৈঠক। এবার এনডিএ সদস্যদের সমর্থন নিয়ে সবক’টি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। বাজেট অধিবেশনেই জেপিসির রিপোর্ট পেশ করে দেওয়া হবে।
বৈঠক শেষে জগদম্বিকা পল মিডিয়ার সামনে বলেন, ১৪টি সংশোধনীতে মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওয়াকফ নিয়ে ভ্রষ্টাচার ও দুর্নীতি কমে যাবে। সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা মিডিয়ার সামনে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পালটে দেওয়া হল। এই সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাচারিতার উজ্জ্বল নমুনা। বিরোধীদের কোনও কথা শোনা হল না। সংখ্যার জোর দেখিয়ে আমাদের কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করা হল না। পিটিআই জানিয়েছে, সদস্যদের পক্ষ থেকে ৫৭২টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনও একটিও গ্রহণ করা হল না। জেপিসিতে এনডিএ সদস্য ১৬।
বিল পাস হলে আর ওয়াকফ সম্পত্তি দাবি করাও বেআইনি গণ্য হয়ে যাবে। ওয়াকফ বোর্ড ও ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালকে ভোঁতা করে দেওয়া হবে। এবার সিদ্ধান্ত নেবেন সরকারি অফিসাররা। আর সবচেয়ে বড় আঘাত হবে অমুসলিম সদস্যদের এবার থেকে নিয়োগ করা হবে। সিইও হবেন একজন অমুসলিম। তবে জানা যাচ্ছে, কালেক্টরের বদলে রাজ্য সরকার অফিসার মনোনীত করতে পারবে। আর সান্ত্বনা হিসেবে একজন মুসলিম স্কলারের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বোর্ডের জন্য। তবে বিরোধীদের অভিমত, সংবিধান প্রদত্ত ধর্মপালন ও ধর্মীয় অনুশীলনের অধিকার হারাবে ভারতের মুসলিমরা। মসজিদ, মাoাসা, মকতব, মাজার, দরগাহ, কবরস্থান, মুসাফিরখানা-সহ ওয়াকফের অধীনে সবক’টি ধর্মীয় ক্ষেত্রে অমুসলিম সদস্যদের অনুপ্রবেশ স্বীকার করে নিতে হবে মুসলিমদের।
জেপিসির চেয়ারম্যানের আজকের ঘোষণার পর অবশ্য এখনও জানা গেল না জেপিসিতে চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারের দলের এমপি সদস্যরা কী কী প্রস্তাব দিয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কোন কোন প্রস্তাবে বিরোধিতা করেছেন তাঁরা। কংগ্রেসের ইমরান মাসুদ জেপিসির সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, সংসদের পরম্পরা মানা হল না। ওয়াকফ সম্পত্তিতে কবজা জমানোর প্রস্তুতি চলছে। সেই সঙ্গে বিদ্বেষের পরিবেশও তৈরি করা বড় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমরা স্পিকারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। এতটা জলদিবাজি কেন? ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় ছিল। কিন্তু আমাদের কাউকে বক্তব্য রাখার সুযোগই দেওয়া হল না। ডিএমকের এ রাজা বলেন, জেপিসির প্রক্রিয়া নিয়ে তামাশা করা হয়েছে। রিপোর্ট তৈরি করে রেখেই এতদিন নাটক করা হচ্ছিল। যদি এটি আইনে পরিণত হয়, তাহলে ডিএমকের পক্ষ থেকে প্রথম সুপ্রিম কোর্টে বিরোধিতা করা হবে।
উল্লেখ্য, লোকসভা ও রাজ্যসভা থেকে ৩১ জন সদস্যকে নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছিল, যার মধ্যে বিরোধী পক্ষের ১০ জন। সরকার প্রস্তাবিত ৪৪টি ধারা বিবেচনা করার জন্যই এই কমিটি গঠন হয়। অথচ প্রায় তিন ডজন বৈঠক করে এবং সারা দেশ সফর করে জেপিসি সংখ্যালঘুমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর পেশ করা সবক’টি সংশোধনীতেই সিলমোহর লাগিয়ে দিল। সারা দেশের মুসলিম সংগঠনগুলি একযোগে এই বিলের বিরোধিতা করে আসছে। তাদের ভরসা চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারের দলের উপর। তারা বিরোধিতা করলে রাজ্যসভায় এই বিল আটকে যাবে। কিন্তু বহু বিতর্কিত সেই বিল আইনে পরিণত করার জন্য এক ধাপ এগিয়ে গেল মোদি সরকার।